কালবেলা: কয়েলের বাজার থেকে বড় কোম্পানিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে কেন?
আমানউল্লাহ মুনসী: কয়েক বছর ধরে কয়েলের বাজার ভালো না। সে কারণেই বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিকল্প ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আর সামনে কোনো বিকল্প না থাকায় আমাদের মতো অনুমোদিত ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টায় আছি। বর্তমানে মসকিউটো অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে ১২৫টি কোম্পানি রয়েছে। আর সারা দেশে বিএসটিআইর অনুমোদিত কোম্পানির সংখ্যা ১৩৫টি। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো বিএসটিআইর নিয়ম মেনেই উৎপাদন করছে। কিন্তু সারা দেশের আনাচে-কানাচে লাইসেন্সবিহীন হাজারো প্রতিষ্ঠান। যাদের উৎপাদিত কয়েলের মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনি তারা ভ্যাট-ট্যাক্স ঠিকমতো দেয় কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা একরকম কোণঠাসায় আছি। আমাদের লাইসেন্স অথরিটি হচ্ছে খামারবাড়ি। প্রাথমিকভাবে রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স তারাই দিয়ে থাকে। আর এটি তদারকি করে বিএসটিআই। বিএসটিআই থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হয়। এ দুই প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানেরই আসলে কয়েল উৎপাদনের সুযোগ নেই। তার পরও ব্যাঙের ছাতার মতো সারা দেশে হাজার হাজার কারখানা গড়ে উঠছে। এদের জন্য আমাদের ব্যবসা করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।
কালবেলা: ডেঙ্গুর প্রকোপে নাকি কয়েলের চাহিদা অনেক বেড়েছে। তাহলে তো এ খাতের ব্যবসা ভালো হওয়ার কথা?
আমানউল্লাহ মুনসী: কথাটি অর্ধসত্য। সর্বত্র তার প্রতিফলন পাওয়া যাবে না। কারণ, বিভাগীয় শহরগুলোতে কয়েলের চাহিদা বাড়লেও গ্রামাঞ্চলে খুব বেশি চাহিদা বাড়েনি। তা ছাড়া অনুমোদিত কয়েলের পাশাপাশি বাজারে অননুমোদিত কয়েলের সংখ্যাই বেশি। এসব কয়েলে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর হলেও দ্রুত মশা মেরে ফেলে। আর এই দ্রুতগতির কার্যকারিতার জন্য দেশের অধিকাংশ গ্রাহক সেগুলোর দিকেই বেশি ঝুঁকছে। ফলে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করলেও লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েলের ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। তবে নিয়মনীতি ভেঙে এ সময়ে ব্যবসা করছে লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলো।
কালবেলা: আমদানি নিষিদ্ধ হলেও চীনের কয়েলে বাজার সয়লাব। এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
আমানউল্লাহ মুনসী: দেশের আইন অনুযায়ী কয়েলের লাইসেন্স অথরিটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এর একটা কমিটি আছে, যার নাম পিটাক কমিটি বা উপদেষ্টা কারিগরি কমিটি। তারাই এই বিষয়ে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেয়। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেডি টু ইউজ—এ ধরনের পণ্য আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অর্থাৎ চীন থেকে কয়েল আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেও তারা এলসি না খোলার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু রফিক ট্রেডার্স সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এই কয়েল আমদানি করছে। কীভাবে করছে তা আমরা জানি না। এর আগে তাদের একটা চালান চট্টগ্রাম কাস্টমসে আটকে দিয়েছিলাম। আমরা হাইকোর্টে রিটও করেছিলাম। আদালত ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু এর আগেই তারা উচ্চ আদালতে আপিল করে আমাদের না জানিয়ে সেটা ছাড়িয়ে নেয়। এরপরও তারা পণ্য আনছে। আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে খামারবাড়ি সেটিতে আবারও নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা আটকে আছে। অবৈধ ও বেআইনি কয়েল আমদানি বন্ধে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। ভারতের গোদরেজ কয়েল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। গোদরেজের কারখানা আমাদের দেশে আছে। ফলে এটা বেআইনি নয়।