বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকের শখ ফটোগ্রাফি। ৩৫ একরের যবিপ্রবি ক্যাম্পাস তেমনই কিছু শখের আলোকচিত্রীর কথা শুনেছেন কালবেলার যবিপ্রবি প্রতিনিধি এ টি এম মাহফুজ।
ক্যাম্পাসে ফটোগ্রাফি চর্চা ও শখের বসে যারা ফটোগ্রাফি করে তাদের মাঝে স্কিল শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই যাত্রা শুরু করে যবিপ্রবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। তারই ধারাবাহিকতায় ফটোগ্রাফিক কর্মশালা, ফটোওয়াক, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠানে ফটোগ্রাফিক সাপোর্ট দেওয়া এবং ফটো কনটেস্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ক্লাবটি। নিয়মিত ওয়ার্কশপ, ফটোওয়াক ও ফটো কম্পিটিশনের পাশাপাশি একটি ন্যাশনাল ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন আয়োজন করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে এ সোসাইটি
এ শখ ছাড়া থাকা দায়
মো. নাঈম, পদার্থবিজ্ঞান
স্কুল-কলেজে দেখতাম ক্যামেরা দিয়ে বন্ধুরা ফটো তুলত। তো, আমিও একদিন তুলব। ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর আব্বু কিনে দিয়েছিল ক্যামেরা। সেদিনই ধরে নিলাম শখটা পূরণ হয়েছে। এরপর থেকে মূলত শেখা শুরু। ক্যাম্পাসে ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্যামেরায় ফটো তোলা শুরু। এরপর করোনা পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস বন্ধের কারণে নিজেকে আপডেট করার সুযোগ পেলাম। ওই দেড় বছর শুধু ফটোগ্রাফিতে সময় দিয়েছি। এখনো শিখছি। ক্যাম্পাস ফটোগ্রাফির এপিঠ-ওপিঠ দুটোই আছে। একটা দিক হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই চিনে ফেলেন। আরেকটা দিক হচ্ছে ক্যাম্পাসের কিছু মানুষ ফটোগ্রাফারদের কামলা টাইপ ভাবে। তারা মনে করে একটা প্রোগ্রাম হলেই ছেলেটা যন্ত্রপাতি নিয়ে ছুটে আসবে আর ফ্রিতে একগাদা ছবি তুলে দেবে। একবেলা খাইয়ে দিলেই হলো। বাই দ্য ওয়ে, কামলারাও কিন্তু পেমেন্ট পায়। সে যাক, আমার কথা হলো যে টাকা জমিয়ে ক্যামেরা কিনেছে, কষ্ট করে শিখেছে, পরিশ্রম করছে তার জন্য একটা ‘অনারিয়াম’ থাকা উচিত।
স্ট্রিট ফটোগ্রাফি মানেই নতুন কিছু
জরিন তাবাসসুম ঐশী, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
অনেক স্মৃতি এই ফটোগ্রাফি ঘিরে। স্ট্রিট ফটোগ্রাফিতে কোনো মানুষের ছবি তুলতে গেলে তাদের আগ্রহ আর নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার বিষয়টা উপভোগ করতাম বেশি। ক্যাম্পাসে আসার পর জানতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ফটোগ্রাফিক সোসাইটি আছে। সেখানে যুক্ত হওয়ার পর বড় ভাইয়া-আপুদের কাছে অনেক কিছু শিখছি। ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠানে ছবি তোলা হয়। নিজের ক্যাম্পাসকে নিজের ক্যামেরায় তুলে ধরার একটা ভালো লাগা আছে। তবে নারী হিসেবে কিছু বাধার মুখে তো পড়েছিই। নিরাপত্তাজনিত কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়। আবার এও শুনেছি ‘মেয়েরা ভালো ছবি তুলতে পারে না।’ এসব সত্যি বলতে কি, কানেই তুলিনি। যারা এসব বলে তারা আসলে ডরোথিয়া ল্যাঞ্জ, অ্যানি লেবোভিটজ, সিন্ডি শেরম্যান এবং মার্গারেট বোর্ক-হোয়াইটদের নাম শোনেনি।
একটি ভালো ক্লিক মানে অনাবিল শান্তি
খালিদ সাইফুল্লাহ, ফার্মেসি বিভাগ
ফটোগ্রাফি ইউনিভার্সাল ভাষা। বছর দশেক আগে আমাদের দেশেই রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময়ের ছবিগুলো বিশ্বের অনেক মানুষের হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছিল। রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার ছবিগুলোই তো বিশ্ব দরবারে ঘটনাটি তুলে ধরে। তাদের ঘিরে যত কাজকর্ম, সবকিছুর মূলে ফটোগ্রাফারদের অবদান বেশি। মূলত এসব ভাবনা থেকেই ফটোগ্রাফির শুরু। স্ট্রিট ও ল্যান্ডস্কেপ বেশি পছন্দ করি। ফোন দিয়ে ফটোগ্রাফির শুরুটা হলেও পরে দেখলাম প্রফেশনাল ক্যামেরা ছাড়া গতি নেই। নতুনদের জন্যও আমার দিকনির্দেশনা এটা—ফটোগ্রাফিতে প্যাশন থাকলে প্রফেশনাল ক্যামেরা কেনা উচিত। শুধু ডিভাইস থাকলেই চলবে এমনটাও না। ছবি তোলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বেসিক ফ্রেমিং, কম্পোজিশন এবং লাইটের ব্যবহার শিখতে হবে। প্রচুর ছবি দেখতে হবে। পছন্দের জনরা বেছে বিশ্বখ্যাতদের ছবি দেখে নিতে হবে অনুপ্রেরণা।
নারীদের পথটা মসৃণ নয়
ফারজানা ভূঁইয়া, ফার্মেসি বিভাগ
আমি যা দেখি, যেভাবে দেখি সেই ‘দেখাটা’ আরও দশজনকে দেখাতে চাই। ফটোগ্রাফি চর্চার আসল শুরুটা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ফটোগ্রাফিক সোসাইটির হাত ধরে। শুরুতে অত ব্যাকরণ জানতাম না। চোখের দেখায় যা ঠিক মনে হতো সেভাবেই তুলে ফেলতাম। পরে জানলাম, কিছু ব্যাকরণ মানলে আরও ভালো ছবি পাওয়া সম্ভব। ক্যাম্পাস লাইফ আসলে এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, যে-যেদিকে যেতে চায় তার জন্য সেই দরজা খোলা। আর ফটোগ্রাফি প্রসঙ্গে বলব, দেশে নারীদের ফটোগ্রাফির পথ একেবারে মসৃণ নয়। বিশেষ করে স্ট্রিট ফটোগ্রাফি, ওয়াইল্ডলাইফ করতে গেলে বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে এখনো। তবে পেশাদার ফটোগ্রাফি করতে চাইলে এগুলো উপেক্ষা করতে হবে।
ফটোগ্রাফি ব্যতিক্রম কিছু দিয়েছে
মো. তাওহিদুজ্জামান, পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ
ক্যামেরায় কিছু তুললেই সেটা যে ফটোগ্রাফির কাতারে পড়বে তা নয়। কিছু শিল্প আর গল্প মিলে পূর্ণতা পায় একটা ছবি। ২০১৪ সালে বড় ভাইভার প্রথম স্যালারি আর পরিবারের সহযোগিতায় ক্যামেরা কিনে ফেলি। তখন ম্যানুয়ালি ছবি তোলার চেষ্টা করতাম। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে ‘Nat Geo Covershot’ নামে ফটোগ্রাফি নিয়ে প্রচারিত এপিসোডগুলো থেকে অনেক কিছুই শিখতাম। ভালো ফটোগ্রাফার হতে হলে প্রথমত আপনাকে অবশ্যই পড়াশোনা করা লাগবে। বেসিক আর ডিটেইলস ছাড়া পরিপূর্ণভাবে একটি ছবি উপস্থাপন করতে পারবেন না। তারপর অন্যের তোলা প্রচুর ছবি দেখতে হবে। এতে নিজস্বতা তৈরির একটা প্রক্রিয়া ভেতর থেকে চালু হবে। আমাদের ক্যাম্পাসে ফটোগ্রাফি নিয়ে আমার অনেক সুন্দর মুহূর্ত আছে। আর সেটার বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে আছে ভার্সিটির ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। আবার এ জীবনটাও বেশ উপভোগ্য। শীতের সকালে সবাই মিলে ফটোওয়াক, চায়ে চুমুক দিতে দিতে ফটো আড্ডা, ফটোগ্রাফি সেমিনার...। ফটোগ্রাফির জন্যই কতজনের সঙ্গে পরিচয় হলো!