আশ্বিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রংপুর নগরীসহ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ শহর। একই অবস্থা বগুড়া শহরেরও। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা তৈরির পাশাপাশি বেড়েছে জনদুর্ভোগ। আবহাওয়া জানিয়েছে, শনিবার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল রোববার ১২টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগে ১ হাজার ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমা প্রায় ছুঁইছুঁই। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—
রংপুর: অবিরাম বৃষ্টির কারণে রংপুর নগরীর লালবাগ, খামার মোড়, নেসকো গেট, নূরপুর, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, বোতলা, নিউ জুম্মাপাড়া, পূর্ব জুম্মাপাড়া, তাজহাট, বাবুপাড়া, মহাদেবপুর, কামারপাড়া, শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, দর্শনা, আশরতপুর, ধাপ এলাকা, মুন্সিপাড়া, হনুমানতলা, মুলাটোল, মেডিকেল পাকার মাথা, জলকরসহ বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে হওয়া ১ হাজার ৩০০ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের মধ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ ৪১৫.৪ মিলিমিটার এবং রংপুরে ১৬২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও দুদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
বগুড়া: টানা বৃষ্টিতে বগুড়া শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার ভোর ৬টা থেকে রোববার ভোর ৬টা পর্যন্ত বগুড়ায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার সকাল ভোর থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এবং নিম্নচাপ থাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এরপর আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকবে।
পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বলেন, মাস্টারপ্ল্যান না থাকায় জলাবদ্ধতা কমানো যাচ্ছে না। তবে আমাদের কার্যক্রম চলমান। বড় বড় ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে।
সৈয়দপুর (নীলফামারী): শহরের কুন্দল এলাকায় খড়খড়িয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তোড়ে পাটোয়ারীপাড়া শহর রক্ষা বাঁধ ১০০ মিটার ভেঙে গেছে।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভেঙে যাওয়া শহর রক্ষা বাঁধ জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কাজ চলছে। গত শনিবার রাত থেকে রোববার টানা বৃষ্টিপাতে এমন বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিভিন্ন এলাকার পুকুরে পানি উছলে মাছ বেরিয়ে যাওয়ায় গ্রাম এলাকায় মাছ ধরার উৎসব চলছে।
সৈয়দপুর পৌরসভার কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন জানান, তার ওয়ার্ডের হাতিখানা এলাকার ৭০ ভাগ বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে।
দিনাজপুর: দিনাজপুরে গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে শহরের বিভিন্ন সড়ক। জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, গতকাল রোববার সকাল ৯টায় দিনাজপুরে ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে আরও মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হবে। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সম্প্রতি দিনাজপুরের নদীনালাগুলো খনন করা হয়েছে। নদী খননের বালুগুলো নদীর দুই ধারে বাঁধ হিসেবে রক্ষা করছে। তবে টানা কয়েক দিন ধরে যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
লালমনিরহাট: টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণের পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭ মিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার), যা বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, তিস্তা ব্যারেজে সব কপাট খুলে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় আরও তিস্তার পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মন্তব্য করুন