জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার নবাবগঞ্জঘাট মহাশ্মশান, মন্দির ও সংলগ্ন দেবস্থান অবকাঠামো তুলসীগঙ্গা নদীতে যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীপাড়ে আরসিসি পাইলিং, রিটার্নিং ওয়াল ও ব্লক না থাকায় প্রতিবছর মন্দির ও শ্মশান প্রাঙ্গণ বন্যায় এবং অতি বৃষ্টিতে ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড তুলসীগঙ্গা নদী খননের যে কার্যক্রম চালায়, এতে শ্মশানের পাড়ঘেঁষে খননের ফলে আরও বেশি ভাঙনের মুখে পড়েছে মহাশ্মশান। নদীর পানি একটু বাড়তে থাকলে তীব্র হয় পাড়ের ভাঙন। আক্কেলপুর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার সনাতন সম্প্রদায়ের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
নবাবগঞ্জ ঘাট মহাশ্মশান, দেবস্থান ও সমাজকল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক সুশীল কুমার আগরওয়ালা বলেন, ১৮১৬ সালে আক্কেলপুর উপজেলার শ্রী সুরতলাল চৌধুরী, শ্রী মহাদেব আগরওয়ালা, শ্রী ভীমরাজ আগরওয়ালা ও স্থানীয় মারোয়ারী সমিতির উদ্যোগে তুলসীগঙ্গা নদীতীরে নবাবগঞ্জ ঘাটে সনাতন সম্প্রদায়ের মৃত ব্যক্তিদের দাহ, সমাধি ও সৎকারের জন্য নিজেদের অর্থে ১১ বিঘা জমি শ্মশানের নামে দান করেন। সেই জমিতে বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির নির্মাণ করা হয়। প্রতিবছর এখানে দুর্গাপূজা, সন্যাস পূজা, কালীপূজা ছাড়াও অন্য দেবতাদের পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া এখানে সমাধির স্থান, পাকা চুল্লি ও বিশ্রামাগার বহু পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বটগাছ ও পাইকরগাছ রয়েছে। এ গাছের নিচে পথচারীরা বিশ্রাম করেন, সৎকাজ করতে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কীর্তন করেন। এ মহাশ্মশান সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে যথাক্রমে নিবন্ধন এবং তালিকাভুক্ত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আক্কেলপুর ও নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার কয়েক হাজার হিন্দু ও মারোয়ারী জনগোষ্ঠীর সবদেহ দাহ ও সমাধি দেওয়ার একমাত্র জায়গা এ মহাশ্মশান। পানি উন্নয়ন বোর্ডে শ্মশান ও মন্দির রক্ষায় লিখিতভাবে বারবার আবেদন করা হয়েছে। এমনকি জয়পুরহাট-২ আসনের মহান জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে শ্মশান রক্ষার জন্য নদীপাড়ে আরসিসি, পাইলিং, রিটার্নিং ওয়াল ও ব্লকের কাজ অতিসত্বর টেন্ডারের মাধ্যমে শুরু করার জন্য ডিও লেটারও দিয়েছেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের আক্কেলপুর উপজেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট রাজেন্দ্র প্রসাদ আগরওয়ালা বলেন, শ্মশান, মন্দির ও সংলগ্ন অবকাঠামো নদীভাঙন থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের আক্কেলপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ওমপ্রকাশ আগরওয়ালা বলেন, এ মহাশ্মশান, মন্দিরের জায়গা নদীভাঙন থেকে অতিসত্বর রক্ষা করা প্রয়োজন। আর যারা শ্মশানের জায়গা অবৈধ দখল করেছে, তাদের উচ্ছেদ করা দরকার।