মেডিকেল পরীক্ষায় মিলেছে ধর্ষণের প্রমাণ। আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে আসামি। তবু বগুড়ার ধুনটের এক স্কুলশিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় বছর ঘুরলেও মামলা যেন এগোচ্ছেই না। বিচারের জন্য মামলার চার্জশিটের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাবা-মা।
ধর্ষণের বিচার চেয়ে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছিল ওই ভুক্তভোগী। এ ছাড়া ধর্ষণের ধারণকৃত ভিডিও থানার তৎকালীন ওসি নষ্ট করেন, সে প্রমাণও উঠে আসে পিবিআইর তদন্তে। তার পরও বিচারকাজ এগোচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার সকাল ১১টার দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথায় অবস্থান নেন ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা। প্রায় এক ঘণ্টা তিনি সাতমাথায় অবস্থান করে বিচারের দাবি জানান।
স্কুলছাত্রীর মা জানান, পুলিশ বলছে চার্জশিট মিলবে, তবে ধর্ষণের আলামত নষ্টকারী পুলিশ কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালার নাম বাদ দিতে হবে। বিষয়টি গত ১৩ সেপ্টেম্বর আইজিপির কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এর একটি অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বগুড়ার পিবিআই কার্যালয়ে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩ মার্চ সকাল ১১টার দিকে স্কুলশিক্ষার্থীকে নিজ ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মুরাদুজ্জমান। কিছু আপত্তিকর দৃশ্যও মোবাইল ফোনে ধারণ করেন ওই প্রভাষক। তার বিরুদ্ধে ওই বছরের ১২ মে সকালে ধুনট থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা। ওইদিন সন্ধ্যায় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ১৯ মে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর নিজ হাতে চিঠি লেখে নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রী।
পরে ওই বছরের ২ আগস্ট ধুনট থানার তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে ধর্ষণের আলামত ধ্বংসের অভিযোগ করেন ওই স্কুলছাত্রীর মা। তিনি বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীর কাছে লিখিতভাবে ওই অভিযোগ দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়ায় ওই বছরের ২৮ আগস্ট পিবিআইর কাছে মামলা ও ওসির বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগের তদন্তভার দেওয়ার দাবি জানান তিনি। তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের অক্টোবরে মামলার দায়িত্বভার নেন পিবিআই পরিদর্শক সেলিম মালিক। পরে ১ নভেম্বর থেকে মামলার তদন্ত করছেন এসআই সবুজ আলী।
বাদী আরও বলেন, মামলার শুরু থেকে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা আমাদের সঙ্গে অন্যায় করে আসছেন। সঠিক চার্জশিট দেওয়ার জন্য তিনি ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার ঘুষ দাবি করেন। বিভিন্ন সময়ে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা নেন। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা ওসি কৃপা সিন্ধু নিজেই নিয়েছিলেন। পরে আসামি মুরাদের সঙ্গে আপস করে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করেন তিনি। আলামত হিসেবে জব্দ মোবাইল ফোন বেআইনিভাবে নিজের হেফাজতে নিয়ে সেগুলো বগুড়া সদর থানা, ছিলিমপুর ফাঁড়ি, আদমদীঘি থানায় পাঠিয়েছেন। সবশেষ তিনি ধর্ষণের ভিডিওগুলো নষ্ট করেন। বিষয়টি পিবিআই পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবিরের তদন্তে প্রমাণিতও হয়েছে। সেই প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্টেও ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসামি জবানবন্দিও দিয়েছেন। তাহলে তো মামলার তদন্তের আর কিছু নেই। তার পরও চার্জশিট মিলছে না।
টাকা নেওয়া ও ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগের বিষয়ে পাবনা সদর থানার বর্তমান ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, সব বানোয়াট, মিথ্যা। আমাকে হয়রানি ও আমার সম্মানহানির জন্য তিনি এসব করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই সবুজ আলী বলেন, মামলার তদন্ত এখনো চলমান। শুনেছি মামলার আসামি মুরাদুজ্জামান জামিন পেয়েছেন। তবে আমার কাছে
এ-সংক্রান্ত কোনো নথি নেই।
এদিকে ভুক্তভোগীর মায়ের অভিযোগটি সত্য নয় বলে জানান পিবিআই বগুড়া কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী এহসানুল কবির। কৃপা সিন্ধু বালাকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, এমন কোনো কিছু আমি বলিনি। মামলার তদন্ত এখনো চলছে। ধর্ষণের আলামত নষ্টের ঘটনায় বিভাগীয় তদন্তে আমরা কিছু পারিপার্শ্বিক প্রমাণ পেয়েছি। শিগগির আমাদের তদন্ত শেষ হবে। অভিযোগকারী যেন ন্যায়বিচার পান, সেটি আমরা অবশ্যই দেখব।