রাজপথে শক্তি প্রদর্শনে আজ শুক্রবার আবারও মাঠে নামছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুটি দল একই সময়ে রাজধানীতে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে বড় কর্মসূচি পালন করবে। রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি মহাসমাবেশ এবং বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতে এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশেই বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অশনি সংকেত হিসেবে উল্লেখ করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে সংযত আচরণের পরামর্শ দিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি উত্তরণে অবিলম্বে সংলাপের পরামর্শ দিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ কালবেলাকে বলেন, দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে ব্যস্ত।
তাদের পাল্টাপাল্টি বা মুখোমুখি কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ না হলেও সারা দেশেই একটা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংঘাত বা সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। তারা নাগরিকদের কথা চিন্তা করে বলে মনে হয় না। যদিও একদল সংবিধানের দোহাই দেয় এবং আরেকদল জনগণের অভ্যত্থানের কথা বলে। তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতির কোনো সভ্যতা বা সংস্কৃতি নেই বলে মনে হয়। নেতাদেরও কোনো ক্যারিশমা আছে বলে মনে হয় না। শুধুমাত্র যে যার শক্তির খেলায় ব্যস্ত। আর এ দেশের নাগরিক সমাজও তাদের দায়িত্ব পালন করে না। তারাও সক্রিয় নেই। পরিস্থিতি উত্তরণে কোনো আশার আলো দেখছি না। দুই দল সংযত না হলে শুধু জনগণই নয়, তাদেরও এর খেসারত দিতে হবে।
সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, বড় দুই দলের
সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশ বা মুখোমুখি যে অবস্থান তা মোটেও গণতন্ত্র ও দেশের জন্য ভালো কোনো সংকেত নয়। এ থেকে উত্তরণের একটি মাত্র পথ, তা হলো একটি ভালো নির্বাচন। সেজন্য পথ তৈরি করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য
দেশ-বিদেশেও নানা কথা হচ্ছে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো ভালো নির্বাচন চায়। সে জন্য সংঘাতময় এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সেই নির্বাচনের পথ বের করে সংকটের সমাধান করতে হবে। না হলে সবাইকেই চরম মূল্য দিতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থানে নাগরিকরা সম্ভাব্য সংঘর্ষের আশঙ্কায় চিন্তিত-বিচলিত। কিন্তু যাদের মধ্যে বেশি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকার কথা, তাদের মধ্যে সেরকম নেই; বরং নিজ নিজ গন্তব্য নির্ধারণ নিয়ে তার রয়েছে অনড় অবস্থানে। তিনি বলেন, দুদলের মধ্যবর্তী যেসব বুদ্ধিজীবী তথা সিভিল সোসাইটির মানুষ ছিলেন, তাদের সংখ্যা কমে আসছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় ব্যারিস্টার রফিকুল হকের মতো ব্যক্তিত্ব ছিলেন। মধ্যস্থতা করতে চেয়েছেন। ২০১৪ সালে শামসুল হুদার মতো মানুষ সমঝোতার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন। এখন এ ধরনের মানুষ দৃশ্যমান নয়। সবার শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব দু-চারজন যারা আছেন, তারা কোনো দলের কাছেই পাত্তা পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কোনো একটি প্রতিষ্ঠান যে উদ্যোগ নিতে পারবে বা উদ্যোগ নেওয়ার সক্ষমতা আছে, এমন নয়। তারপরও সংলাপ বা আলোচনা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলেই আমি মনে করি। কারণ এটি যুদ্ধ নয়, রাজনীতি। রাজনীতিকে বলা হয় সমঝোতার শিল্পকলা। দলগুলো দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করলে সমঝোতায় পৌঁছতেই হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সত্যিকারার্থেই এ দেশের মানুষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলে তারা এরকম মুখোমুখি ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করত না। এ দেশের জনগণ শান্তিপ্রিয়। তারা শান্তি চায়। কিন্তু সাধারণ জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যেন অসহায়। এসব কর্মসূচি ঘিরে যে কোনো সময় সংঘাত ও সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে; কিন্তু আমরা কিছু করতে পাারছি না। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথই হচ্ছে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সেই পথ রাজনীতিকদেরই বের করতে হবে। সেজন্য অবশ্যই সংলাপ বা আলোচনায় বসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্য করুন