রাজধানীর গুলিস্তানে শান্তি সমাবেশ থেকে ফেরার পথে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সমাবেশ শেষ হওয়ার পরপরই ওই সংঘর্ষে আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত ব্যক্তির পরিচয় মেলেনি। তার আনুমানিক বয়স ২৫ বছর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের অনুসারীদের সঙ্গে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের অনুসারীদের ওই সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষই ভিড়ের মধ্যে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। সমাবেশের পরপর ওই ঘটনায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলের সিনিয়র নেতারা ছিলেন কর্মসূচিতে। পুলিশের ছিল কড়া নিরাপত্তা। এর মধ্যে দুই নেতার অনুসারীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে সেখানে কীভাবে ঢুকলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
গতকালের সমাবেশ চলাকালেও উত্তেজিত ছিলেন কামরুল ইসলাম ও শাহীন আহমেদের অনুসারীরা। বসা ও ব্যানার উঁচু করে ধরা নিয়ে সেখানে বিবাদে জড়ান। মঞ্চ থেকে বারবার দুই পক্ষকে ব্যানার সরাতে বললেও তারা তা করছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে তারা সংঘর্ষে জড়ান। ঢাকা-২ আসনের রাজনীতিতে কেরানীগঞ্জে এ দুই নেতার অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরেই বিভক্ত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। প্রথম দিকে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হলেও পরে কমলা রঙের ক্যাপ পরিহিত একদল কর্মী ধারালো অস্ত্র নিয়ে অন্যগ্রুপকে ধাওয়া দিতে থাকে। সমাবেশে ওই রঙের ক্যাপ পরেছিলেন কামরুল ইসলামের সমর্থকরা। এক পর্যায়ে সামনে যাকে পাওয়া গেছে, তাকেই কোপানো ও পেটানো হয়। তখন লোকজন আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। ঘটনার অদূরে পুলিশ থাকলেও কাউকে প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি। ওই সংঘর্ষ জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরিফুল ইসলাম, মো. জোবায়ের, নোমান হোসেন রনি ও মো. মোবাশ্বের। তাদের মধ্যে রনি কেরানীগঞ্জ মডেল থানা যুবলীগের কর্মী, মোবাশ্বের দিনমজুর, জোবায়ের স্কুলছাত্র ও আরিফুল রাজমিস্ত্রি। তারা কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের হয়ে সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। আহত কয়েকজন মিটফোর্ড হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের ব্যক্তিগত সহকারী সিফাত হাসান দাবি করেন, তারা শাহীন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে অংশ নেন। কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর এলাকায় ফেরার পথে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের লোকজন ওই হামলা চালান।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সদস্য সৈকত হাসান দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তৃতা যখন শেষ পর্যায়ে, তখন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সমর্থকরা কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের সমর্থকদের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান।
শাহীন আহমেদের সমর্থকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে অ্যাডভোকট কামরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা রিসিভ করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী ইকবাল হোসেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাদের কর্মীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তারা কেউ এতে যুক্ত নন বলে জানিয়েছেন।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার মো. হায়াতুল ইসলাম খান কালবেলাকে বলেন, শান্তি সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা যার যার গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। ওই সময় ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক এক যুবককে মৃত ঘোষণা করেন। তার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, কী নিয়ে ওই সংঘর্ষ হয়েছে, দুই পক্ষ কারা, তা পুলিশ তদন্ত করছে।
মন্তব্য করুন