প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে বড় ধরনের ধস নেমেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৯১ কোটি ৬১ লাখ ডলার,Ñ যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে বৈধ পথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। প্রবাসী আয়ের এ অঙ্ক গত ৪০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিলে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। গত মাসের রেমিট্যান্সের এই অঙ্ক আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১৯ কোটি ৫৯ লাখ বা ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এ ছাড়া গত আগস্টের তুলনায়ও সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় কমেছে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বা প্রায় ১৬ শতাংশ। আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। খাত-সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থ পাচার এবং ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধানের কারণেই কমছে রেমিট্যান্স। আর রেমিট্যান্স কমায় কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, মূলত অর্থ পাচারের কারণেই প্রবাসী আয় কমেছে। দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়েছে। তারা কিন্তু ১১৮ টাকা দিয়েই পাচার করছেন। হুন্ডির মাধ্যমে এই অর্থ পাচার হচ্ছে। যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে, তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। এটিই স্বাভাবিক। নির্বাচনী অনিশ্চয়তাকে সামনে রেখে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং অবৈধভাবে টাকা উপার্জনকারীরা এই পদ্ধতিতে টাকা পাচার করছেন। পাচার বেড়েছে বলেই রেমিট্যান্স কমে গেছে। নির্বাচনের আগে এবং পরে বেশ কিছুটা সময় এই অবস্থা বজায় থাকবে। এ ছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম বেশি। এই কারণেও প্রবাসী আয় কিছুটা কমেছে। খোলা বাজারে ডলারের দাম ব্যাংকের চেয়ে ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি। তাই বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ ৬০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৬ লাখ ডলার। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। ওই বছর ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে।
সাধারণত ডলার সংকট ও বাজার স্থিতিশীলতার জন্য রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলো। এখন প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দাম দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। রপ্তানি বিল নগদায়নে প্রতি ডলারের বিপরীতে দাম দেওয়া হচ্ছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর আমদানি ও আন্তঃব্যাংক লেনদেনে দেওয়া হচ্ছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। তবে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের নগদ প্রতি ডলার কিনতে দেশি মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা পর্যন্ত।
কমছে রিজার্ভ: আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬) অনুযায়ী, গত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ ২ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার।