চলতি একাদশ জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়ন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব ও সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর ছিল না বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির মতে, সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও কার্যকর বিরোধী দলের অভাবেই মূলত সংসদ প্রত্যাশিত মাত্রায় ভূমিকা রাখতে পারেনি।
গতকাল রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন। টিআইবির গবেষক রাবেয়া আক্তার ও মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান সাখিদার প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।
টিআইবির ওই গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম থেকে ২২তম অধিবেশনে কোরাম সংকটে ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট সময় ব্যয় হয়েছে, যার প্রাক্কলিত অর্থমূল্য ৮৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা প্রায় ২০ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রশংসায়।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সংসদের কার্যকর ভূমিকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। সংসদে বিরোধী দল পরিচয়ধারী যে দলটি এখন আছে, তারা আগের তুলনায় কিছুটা সক্রিয় ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেছে; কিন্তু তারা সার্বিকভাবে আত্মপরিচয়ের সংকটে ছিল। ফলে বিরোধী দলের প্রত্যাশিত ভূমিকা দেখা যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিবেশন শুরুর তুলনায় বিরতি পরবর্তী সময়ে কোরাম সংকট বেশি দেখা গেছে। কোরাম সংকটের কারণে ৮৪ শতাংশ কার্যদিবসে অধিবেশন দেরিতে শুরু হয়েছে। আর বিরতির পর অধিবেশন শুরু হতে শতভাগ কার্যদিবসেই দেরি হয়েছে।
কোরাম সংকটে নষ্ট হওয়া সময়ে মিনিটপ্রতি ব্যয় প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ টাকা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন গড়ে কোরাম সংকট ছিল ১৮ মিনিট। অবশ্য অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদের তুলনায় চলতি সংসদে এই কোরাম সংকট কমেছে। দশম সংসদে গড়ে ২৮ মিনিট কোরাম সংকট ছিল। নবম সংসদে যা ছিল গড়ে ৩২ মিনিট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জনপ্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ সময়। রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও এর ওপর আলোচনায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ সময়। এ আলোচনায় সরকারি দলের এমপিরা প্রায় ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে। আর ১৮ শতাংশ ব্যয় করেছেন অন্য দলের সমালোচনায়। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সময়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতি মাসে অন্তত একটি বৈঠক করার কথা থাকলেও সংসদীয় কমিটিগুলোর কোনোটিই এ নিয়ম মানেনি।