

‘ঈ...ঈ...ঈ...ঈয়োয়য়য়...ই...ই...ইয়োয়য়য়...’
‘হোই মিয়া বেইন্না ফজরত এ্যটা কী শুরু করেন যে, ই...ই...ইয়োয়য়য়... ঈয়োয়য়য়...পাবনা যাওনের হাঁউস হোইছে নি?’
‘পাবনার মেন্টাল হসপিটাল মানে পাগলা গারদে যাবার মতো অবস্থা আমার হয়নি...’
‘তয় হক্কাল ব্যেলায় রাস্তার কুত্তাগো মতুন ই...ই...ইয়োয়য়য়... ঈয়োয়য়য়...শুরু করছেন কিল্লায়!!’
‘আরে বুড়বক অকালকুষ্মাণ্ড তোর কি মনে হচ্ছে আমি পথের খেঁকি কুকুরের মতো চিৎকার করছি ই...ই...ইয়োয়য়য়... ঈয়োয়য়য়...জি না, আমি তোর ভাষায় কুত্তার মতো ভোকতাছি না, আমি রাজাধিরাজ মহান ত্রাণকর্তাকে আহ্বান করছি।’
‘আপনে মিয়া যে ভাষায় আর যে কর্কশ কণ্ঠে, ইয়োয়য়য়... ঈয়োয়য়য়... কোইরা ডাক পাড়তাছেন, তায়লে কোইলাম রাজাধিরাজ মহান ত্রাণকর্তা ক্যেন, পাবনার পাগলা গারদের পাগোল গুলাভি আপনের ডাকে সাড়া দিব না, রাজাধিরাজ তো পরের কথা।’
‘আচ্ছা তুই বল, সন্তানের মা মারা গ্যেছে, এক সন্তানকে অন্য সন্তানরা শেষবারের মতো মার মরা মুখ দেখতে দেবে না। তাই সেই সন্তান আসার আগেই মাকে কবর দিয়ে দিল, এখন ক্যেন ওই সন্তানকে শেষবারের মতো মায়ের মুখ দ্যেখানো হলো না; এই নিয়ে গ্রামের মাঝে দুই দল হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফাইট করে প্রায় শতাধিক গ্রামবাসী আহত। যতদূর শুনেছি কেউ নিহত হয়নি।’
‘এইডা তো পুরা জন্তু-জানোয়ারের কাজ। কুনো মাইনষ্যে পারবনি, পোলারে তার মায়ের মরা মুখ শেষবারের মতো দ্যেখবার দিব না!! আবার এই লয়া বাঙালি বাঙালি মাইরপিট, লজ্জা লজ্জা!’
‘তারপর দ্যেখ, তোরা তোদের বসবাসরত স্থানটাকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিচার করে একটা জেলা চাচ্ছিস। ভালো কথা। কিন্তু তাই বলে স্টেশনে প্রবেশরত চলন্ত ট্রেনের মাঝে শত শত পাথর ছুড়ে মারা, এটা কি সভ্যসমাজে ঘটে?’
‘আরে ভাই এইডা তো ভাদ্র মাসের কুত্তার চেয়েও ন্যক্কারজনক কারবার। জেলার লিগা তোরা চলন্ত ট্রেনে পাত্থর মারবি, তাও আবার নিজেগো দেশের নিজেগো ট্যাক্সের পয়সায় ক্যেনা। আপনের ভাষায়, ধিক ধিক তোর সভ্যতার নিকুচি কোরেছি।’
‘তাহলে তুই-ই বল এগুলো কোনো মানুষের কাজ!’
‘আরে এগুলা মাইনষ্যের ক্যান, এগুলা তো জন্তু-জানোয়ারও করব না। কোই কোন আবু দুবাইতে পিলিয়ার কিরকেট খেলায় ক্যাচ মিস করল আর লঘে লঘে আপনে হ্যের হালাল কামাইয়ের বাংলাদেশের গ্রামের বাড়ি আগুন দিয়া পুড়াই দিলেন, এইটা হোইলো!’
‘তাহলে তুই বল এটা কোনো মানুষের কাজ হলো?’
‘আরে হুমুন্দির পুতেরা আর মানুষ নাই হালারা সব সারমেয় সন্তান প্রশব করতাছে। কারে কী কমু, আমার তো মনে লয় এইসব ব্যেজাইত্তা পোলাপান মনে হয় সঠিক পথ দিয়া ভূমণ্ডলে আসে নাই। হুমুন্দিরা ভুল পথ দিয়া বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রবেশ করছে।’
‘আরে এ্যতো না পেঁচিয়ে তুই সোজা করে বল, তুই কী বলতে চাস?’
‘আমি কোই কি, এই যে দুইদিন আগে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পইড়া, নিষ্পাপ নিরীহ পথচারী নিহত হোইলেন, লগে লগে আপনে কী কোইলেন, আমি তদন্ত কোইরা দেখমু যে এইডা নাশকতা কিনা, কোনো হালায় দূর থ্যেইক্কা বা আশপাশের দেশ থ্যেইক্কা রিমুট বাটন টিইপ্পা মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড ফালাইতেছে কিনা?’
‘আচ্ছা তুইই বল, এটা হলো!! এত হাজার কোটি টাকার প্রজেক্টে যেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লোক মেট্রোরেলে ভ্রমণ করছে, লক্ষ লক্ষ মেট্রোরেলে ভ্রমণকারীর নিরাপত্তার বিষয় জড়িত, সেখানে এই বালখিল্যতা চলে!’
‘ক্যা মিয়া ভাই, আমি তো মরার লগে লগে ঢাকা মেট্রোরেলের ফান্ড থ্যেইক্কা পাঁচ লাখ ট্যাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিছি। লগে লগে চাকরির ভি, আশ্বাস দিছি...’
‘ঠিক আছে ঢাকা মেট্রোরেলের ফান্ড থ্যেইক্কা পাঁচ লাখ ট্যাকা দেবা আশ্বাস দিয়েছিস, টাকা কি দিয়েছিস?’
‘আরে ভাই, লগে লগে কি ট্যাকা দেওন যায় নাকি! তদন্ত রিপোর্টের পর যদি দ্যেখা যায় যে ভিকটিম হালায় নিজেই এই নাশকতায় জড়িত, ভিকটিম নিজেই রিমুট দিয়া বিয়ারিং প্যাড ফালায়ছে, তয়লে তো আর ট্যাকা পাইব না।’
‘এইটা তুই কী বলছিস, কেউ কি নাশকতার সময় নিজে নিজকে হত্যা করে!’
‘এ্যাঁ কুচি খুকা। ক্যা মিয়া সুইসাইড স্কোয়াডের নাম হুনেন নাই!! গায়ে তার প্যেঁচায়া এক লগে বাংলাদেশের পাঁচশ জায়গায় বোম ফুটাই ছিলাম। ভুইল্লা গ্যেছেন!!’
‘তাই বলছিলাম, এইসব জন্তু-জানোয়ারকে সঠিক পথ দ্যেখানোর জন্য সঠিক নেতা দরকার, তাই তোর ভাষায় বেইন্না ফজরত আমি আমার মহান ত্রাতাকে আমাদের দেশ পরিচালনার জন্য আহ্বান করছিলাম।’
‘এইসব সম্ভবের দেশ, জন্তু-জানোয়ারের দেশ চালনার লইগ্যা কারে ডাকতাছেন, আশপাশের দেশের কেউ নাতো?’
‘আরে না আমি ডাকছি ১৮৩৫ সালে এডগার রাইস স্যারের নায়ক পৃথিবীর সকল প্রাণীর রাজা “বনের রাজা টারজান” স্যারকে ডাকছিলাম। টারজান স্যার জন্তু-জানোয়ারের ভাষা বুঝতে পারেন। তাই উনি যদি দেশ পরিচালনা করেন তাহলে উনি খুব সহজেই দেশের প্রজাদের ভাষা বুঝতে পারবেন আর সেই মতো শুখে শান্তিতে দেশ পরিচালনা করবেন। কারণ, বর্তমান পরিচালকরা তো জন্তু-জানোয়ারের ভাষা বোঝেন না, তাই দেশও সঠিক রূপে পরিচালিত হোচ্ছে না।’
‘আরে ভাই আপনে তো দারুণ কতা কোইছেন। আমরা ব্যেবাগতে জন্তু-জানোয়ারের মতো চলতাছি, তাই আমাগো “কিং অব জাঙ্গল টারজান”রেই লাগব। চলেন চলেন আমরা সবাই মিল্লা এক লগে টারজান স্যাররে আহ্বান করি... “ঈ...ঈ...ঈ...ঈয়োয়য়য়...ই...ই...ইয়োয়য়য়...”’
‘হে দেশবাসী, দেশ বাঁচাইতে চাইলে আপনেরাও ব্যেবাগতে আমগো লগে ডাক পাড়েন ই...ইয়োয়য়য়য়য়য়...ইয়োয়য়য়... ই...ই...ইয়োয়য়য়...ঈ...ঈ...ঈ...ঈয়োয়য়য়...ই...ই...ইয়োয়য়য়...’
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা ও রম্য লেখক
মন্তব্য করুন