রাজধানী শহরের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। বর্ষা মৌসুম এলেই নগরবাসীকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। ঢাকা শহরের অন্যতম একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় ঢাকার রাস্তাঘাটসহ অনেক এলাকা। গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) টানা বৃষ্টিতে পানিতে থইথই করে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা। অনেক এলাকায় দুই-তিন ফুট পর্যন্ত পানি ওঠে। কিন্তু এই পানি নেমে যেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক থেকে দুদিনও লেগে যায়। যার ফলে রাস্তাঘাটে মানুষ এবং যানবাহন চলাচলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। খুবই দুঃখজনক বিষয় হলো, ২১ সেপ্টেম্বর রাতের বৃষ্টির সময় মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজ এরিয়ায় রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পর্শে শিশুসহ একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়। এ দায়ভার কাদের!
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একসময় ঢাকা মহানগরীতে প্রধান ড্রেন লাইনগুলো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। শাখা লাইনগুলোর দায়িত্ব ছিল সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত। সেই সময় রাজধানীর মোট ড্রেনেজ লাইনের মধ্যে ৩৮৫ কিলোমিটার ঢাকা ওয়াসার অধীনে এবং প্রায় ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে ছিল। এর বাইরে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৬টি খাল ও ১০ কিলোমিটার বক্স-কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ছিল ঢাকা ওয়াসার। যে কারণে বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে সংস্থাগুলো একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে আসছিল। কিন্তু ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সেগুলো দখলমুক্ত করে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করে তারা। খালের মূল দায়িত্ব গ্রহণের পর তারা প্রায় আড়াই বছরের মতো সময় পেয়েছে। এর মধ্যে দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কতটুকু কাজ করতে পেরেছে, তা প্রশ্ন থেকেই যায়! ঢাকার আশপাশের সবকটি নদীর অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। আগে বৃষ্টি হলে পানি খাল দিয়ে নদীতে চলে যেত কিন্তু এখন এসব খাল বা নদী প্রায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে শহরের পানি নেমে যাওয়ার মতো জায়গা পায় না, ফলে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো, ঢাকার দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম খালগুলো অবৈধ দখল ও কঠিন বর্জ্যে ভরাট হয়ে আছে। নগরের খাল, ড্রেন, বক্স-কালভার্ট ও ব্রিক স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে পানি নদীতে যেতে পারছে না। ড্রেনেজ সিস্টেমেও সমস্যা রয়েছে। যেখানে সহজেই পানির সঙ্গে বিভিন্ন বর্জ্য যেমন পলিথিন এবং অন্যান্য অপচনশীল পদার্থ ভেসে গিয়ে নালার মধ্যে আটকে যায়, ফলে পানি সহজে নিষ্কাশন হতে পারে না, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। শহরে অনেক ছিন্নমূল মানুষ থাকে যাদের নিজস্ব বাড়িঘর নেই। রাত হলে তাড়া আশ্রয় নেয় শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে তারা সেই আশ্রয়টুকুও হারায়। আবার পথচারী থেকে শুরু করে ছোট আকারের যানবাহন প্রায়ই গর্তে পড়ে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়। অনেক সময় মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। তাই রাজধানী ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ নির্মাণ করতে হবে। যাতে করে বৃষ্টির পানি সহজেই নদীতে চলে যেতে পারে, সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। নগরের খাল, ড্রেন, বক্স-কালভার্ট ও ব্রিক স্যুয়ারেজ লাইনগুলোকে পরিষ্কার এবং পানি চলাচলের উপযুক্ত রাখতে হবে। ঢাকার আশপাশের সব নালা-খাল, নদীগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। সাধারণ মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শুধু সরকার বা সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে এটি ভেবে বসে থাকলে এর ফল হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। কারণ আমরা অনেকেই বর্জ্য ড্রেনে ফেলে দিই ফলে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। তাই সরকারের পাশাপাশি নিজে সতর্ক হতে হবে এবং অন্যকেও এ বিষয়ে সতর্ক করতে হবে। তাহলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব।
সাকিবুল হাছান, ঢাকা কলেজ, ঢাকা
মন্তব্য করুন