মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:১৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভরা মৌসুমে কেন নাগালের বাইরে ইলিশ

উচ্চমূল্যের কারণে বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছে আজ নাগালের বাইরে ইলিশ। সারা বছরই ইলিশের যে দাম থাকে, তা একমাত্র উচ্চবিত্ত ছাড়া কেউ কিনে খেতে পারে না। বর্ষার ভরা মৌসুমে ৬৫ দিন ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে গেলেও বাজারে ইলিশের তেমন দেখা মেলেনি বেশ কিছুদিন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা ইলিশ ধরতে সাগরে যেতে পারেনি। সামান্য যা কিছু ধরা পড়েছে, তা ছিল দুর্মূল্য। অনেকে অবশ্য বলছেন, সাগরে ইলিশ মাছ কমবেশি সবসময়ই ধরা পড়ে। কিন্তু সাগর থেকে বিক্রি হয়ে কোথায় চলে যায়, ইলিশ মোকামে আসে না! ক্রেতারাও তাই বাজারে ইলিশ চোখে দেখে না। তবে নদনদীর পানি কমে যাওয়া আর পানি দূষণের কারণে ইলিশের উৎপাদন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। ইলিশের ভরা মৌসুমে মাছের দাম ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি জোরদার করতে হবে। মৎস্য ব্যবসায়ী, আড়তদাররা যাতে অন্যায়ভাবে মাছের দাম বাড়াতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখা আবশ্যক। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। দেশে প্রায় পাঁচ লাখ জেলে সরাসরি ইলিশ আহরণের সঙ্গে জড়িত। তা ছাড়া ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল-নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ। ইলিশ ধরার নিষিদ্ধকালীন বেকার জেলেরা কখনো মা-ইলিশ শিকারে বাধ্য হয়। অভয়াশ্রম এলাকায় মৎস্য আহরণে বিরত থাকা নিবন্ধিত জেলেদের দুই দফায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যে ৮০ কেজি হারে ভিজিএফ চাল সহায়তা দেয়, তার সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা জরুরি। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নৌকা, জাল, মাছ ধরার অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহের মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন। অভয়াশ্রমগুলোতে সব ধরনের মাছ ধরা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অমান্যকারীদের কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান কার্যকর করতে হবে। মৎস্যজীবীরাই ইলিশকে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়ার প্রধান শক্তি। ইলিশ ব্যবসায়ী মহাজন, আড়তদারদের অতি মুনাফার লোভের শিকার হয়ে জেলেদের যাতে আর্থিক দুর্দশায় পড়তে না হয়, তার বিহিত করতে হবে। বহির্দেশের জেলেদের ইলিশ ধরা এবং অবৈধ পথে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ না হলে ইলিশ উৎপাদনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। বাংলাদেশের বর্তমান নদনদীর পানি প্রবাহ, জলজ পরিবেশ ও আবহাওয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় ইলিশ উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্যে পৌঁছতে সহায়তা করবে। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান মোট জিডিপির ৩.৫৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭৪.০৪ হাজার টন মাছ রপ্তানিতে আয় করেছে ৫১৯১.৭৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয় এবং সামুদ্রিক এলাকায় মৎস্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার সাফল্যে বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আগামী অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০২১-২৫) মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ এবং জেলেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে তার দ্রুত বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও প্রকৌশলী

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফার্মগেটে জোড়া ককটেল বিস্ফোরণ

মায়ের হত্যার বিচার করতে, বিপাশা হতে চায় পুলিশ

বিশিষ্টজনদের মতামত / গণতন্ত্র রক্ষায় নির্বাচনের বিকল্প নেই

ভার্চুয়াল বৈঠক / ইইউকে নির্বাচন বয়কটের কারণ জানাল বিএনপি 

ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি

যে কারণে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শেষ করে দিল ইসরায়েল

‘নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের নামে প্রজন্ম ধ্বংসের নীলনকশা করেছে সরকার’

ভূমিকম্প আতঙ্কে দোতলা থেকে লাফ দিয়ে দুই শিক্ষার্থী আহত

জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় সর্বজনীন আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার আহ্বান তথ্যমন্ত্রীর

ইউএনওর বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর 

১০

যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল ইরাক

১১

অলিম্পিকে ৪ ডিসিপ্লিনে আবেদন করবে বাংলাদেশ

১২

সমমনা জোট থেকে মাইনরিটি জনতা পার্টিকে বহিষ্কার

১৩

আ.লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন যারা

১৪

মোতালেবের সমর্থকদের হুমকি-ধমকি, দুই থানায় জিডি

১৫

নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে নকল, কারাগারে ২

১৬

ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমল, হাসপাতালে ভর্তি ৬০৫

১৭

ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা আওয়ামী লীগের 

১৮

অবরোধ সফলে রিজভীর নেতৃত্বে রাজধানীতে মশাল মিছিল

১৯

পুলিশ পরিচয়ে পুলিশের সঙ্গেই প্রতারণা, গ্রেপ্তার ১

২০
X