নারায়ণগঞ্জ আদালত এলাকায় মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষা করছিলেন বাকপ্রতিবন্ধী মা স্মৃতি আক্তার। তার সাংকেতিক ভাষায় তিনি জানিয়েছেন, কয়েকজন মানুষ জুস খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে তার দুই বছর বয়সী মেয়ে আমেনাকে নিয়ে যায়। তারপর আর ফিরিয়ে দিয়ে যায়নি। ঘটনাটি ঘটেছে চলতি বছরের ১৫ মার্চ। হতদরিদ্র স্মৃতি আক্তারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে তার মেয়েকে ছিনিয়ে নিয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি করে চলে যাদের জীবন, ছেলেমেয়েকে জুস খাওয়ানো যাদের স্বপ্ন, তাদের কাছে এমন প্রস্তাব অগ্রাহ্য করা কঠিন। আর সে সুযোগটিই নিয়েছে দুর্বৃত্তচক্র। আমাদের সমাজ যে কতটা অমানবিক, কতটা মিথ্যে এবং প্রহসনে পূর্ণ; এর প্রমাণ এমন ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা অহরহ পাই। প্রায়ই সংবাদপত্রে প্রকাশ হয় এমন দুঃখজনক খবর। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই এসব খবর আমাদের মধ্যে বিশেষভাবে নাড়া দেয় না। তবু কিছু কিছু খবরে আমাদের চোখ ভিজে যায় জলে। বাকপ্রতিবন্ধী স্মৃতি আক্তারের দুই বছর বয়সী মেয়েকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা আমাদের ব্যথিত করে।
আমেনাকে ছিনিয়ে নেওয়ার দুদিন পর ফতুল্লা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। এরপর ১৫ মে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করা হয়। তারপর কেটে গেছে আরও সাড়ে চার মাস; কিন্তু হারিয়ে যাওয়া আমেনার কোনো খোঁজ তো দূরের কথা, এ বিষয়ে কোনো তথ্যই বের করতে পারেনি পুলিশ। আমেনার বাবা আলী আকবরের অভিযোগ, তিনি গরিব হওয়ায় কেউ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। এজন্য তার মেয়েকে উদ্ধারেও তৎপরতা নেই। মেয়েকে খুঁজে পেতে অনেক চেষ্টা করেছেন। বারবার পুলিশের কাছে ধরনা দিয়েছেন। সিসিটিভি ফুটেজ বের করার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু পুলিশ বলেছে, ফুটেজে কিছু পাওয়া যায়নি। এরপর মেয়েকে খুঁজে পেতে তার করা মামলা পিবিআইকে দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনও গ্রহণ হয়নি। ছোট্ট আমেনাকে খুঁজতে খুঁজতে পাগলপ্রায় তার নানা আবুল হোসেন। নাতনিকে খুঁজে পেতে তিনি হন্যে হয়ে ঘুরছেন বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার দুয়ারে; কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কিছুর কূল-কিনারা হয়নি। পেশায় রিকশাচালক আবুল হোসেন জানিয়েছেন, তার নাতনি তো উধাও হয়ে যায়নি। কেউ নিয়ে গেছে। তিনি অনেক বড় বড় পুলিশ কর্মকর্তার কাছে গিয়েছেন। কেউ তাকে আশ্বাস দেননি। পুলিশ যে সিসিটিভি ভিডিও বের করেছে, ওই ভিডিও নিয়ে বড় স্যারদের দেখিয়েছেন। এ কারণে আবার এসপি স্যার তার ওপর রাগ হয়েছেন। তার দাবি, তিনি নাতনিকে খুঁজে পেতে পুলিশপ্রধানের অফিস
ও তার বাসাতেও যান। এরপর ঢাকায় পিবিআই সদর দপ্তরেও যান; কিন্তু নাতনিকে এখনো
খুঁজে পাননি।
শিশু আমেনার পরিবারের অভিযোগ, গরিব হওয়ায় থানা-পুলিশের সহায়তা পাচ্ছেন না তারা। নারায়ণগঞ্জ শহরের অলিগলিতে এ সংক্রান্ত লিফলেট বিলি করেছে শিশুটির পরিবার, যদি কোনো খোঁজ পাওয়া যায়, সে আশায়; কিন্তু দিনের পর দিন তা দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। নানা ঘাটে দৌড়েও মেয়েকে ফিরে না পাওয়ায় বাকপ্রতিবন্ধী মা আর রিকশা গ্যারেজের মিস্ত্রি বাবার চোখের পানি
শুকিয়ে যাচ্ছে।
আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্যরা তৎপর হলে আমেনাকে খুঁজে বের করা সম্ভব। আমাদের প্রত্যাশা আমেনাকে খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টরা আরও আন্তরিক হবেন। তাদের প্রচেষ্টায় আমেনা আবার ফিরে আসবে তার বাবা-মায়ের কোলে।