অজয় দাশগুপ্ত
১১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচনের আগে শুদ্ধি ও অতিভক্তির নিয়ন্ত্রণ জরুরি

প্রবাসে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তা এড়ানোর সুযোগ নেই। আগেও লিখেছি যতদিন জাতীয় ঐক্য আর সংহতি দৃঢ় না হবে, ততদিন দেশের বাইরে রাজনীতি থাকবে। উপমহাদেশের সব দেশের রাজনীতি কোনো না কোনোভাবে সচল। আমরা ভেবেছিলাম প্রশান্তপাড়ে বাংলাদেশিদের সংখ্যা যেহেতু খুব বেশি নয়, দেশের রাজনীতি এখানে তেমন প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু এখন এটা স্পষ্ট আর সবকিছুর মতো দেশের রাজনীতির প্রভাব দিবালোকের মতোই সত্য। এ রাজনীতি মাঝেমধ্যে ঝামেলা করলেও মূলত এর ভেতরেই বেড়ে উঠছে সংস্কৃতি ও জীবন।

স্বীকার করতেই হবে, আওয়ামী লীগই ধরে রেখেছে মূল প্রবাহ। এর কারণ আমরা সবাই জানি। বায়ান্ন থেকে একাত্তর যাবতীয় আন্দোলন আর সংগ্রামে আওয়ামী লীগই ছিল একক কাণ্ডারি। সে দলের নেতা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। যিনি পাড়াগাঁ থেকে উঠে আসা বিশ্বসেরা বাঙালি। ইতিহাসের অন্যতম সেরা রাজনীতিবিদ। আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিও বলতে গেলে এক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিশাল এই দল আজ অনেক বছর ধরে দেশ শাসনে। নেতৃত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত দেশ আজ সারা দুনিয়ায় স্বীকৃত এক এগিয়ে চলা দেশ। এ ধারাবাহিকতা একদিনে তৈরি হয়নি।

এসব কথা বললাম এই কারণে যে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই জটিল হয়ে উঠছে পরিবেশ। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, এবারের নির্বাচন সহজ কিছু হবে না। তার প্রজ্ঞা আর মেধায় এগিয়ে চলা দেশের কথা তার চেয়ে ভালো কে জানে? সবাই জানেন দেশের মানুষ রাজনীতি বিষয়ে যতটা সচেতন, তার চেয়ে অধিক দেশের বাইরের বাংলাদেশি। তারা দেশ ছেড়ে এলেও তাদের ধ্যানজ্ঞানে সবসময় স্বদেশ। এ স্বদেশপ্রেম একদিকে যেমন দেশ ও প্রগতির সহায়ক, আরেকদিকে এর সঙ্গেই বাড়ছে জঞ্জাল। আওয়ামী লীগের আমলে যাবতীয় উন্নয়ন ভোগ করা বাঙালির একাংশ মজে আছে দেশবিরোধিতায়। এরা সরকারবিরোধিতা ও দেশবিরোধিতা এক করে ফেলেছে। আজকাল বাড়িতে বাড়িতে ডিনারের পর লাঞ্চের পর আলোচনা মানেই সরকার বিরোধিতা। এ কাজগুলো যারা করে তারাই দেশের সুবিধাভোগী। তাদের আত্মীয়স্বজনরাও দেশে আছে মোটামুটি ভালো। তারপরও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার বিরোধিতা না করলে তাদের ভাত হজম হয় না।

ডিজিটাল যুগে সবাই একেকটি মিডিয়া। এ সামাজিক মিডিয়ার যুগে এর আশীর্বাদ ও অভিশাপ আজ আমাদের চোখের সামনে। বিদেশে নিরাপদ ভুবনে বসবাসরত বাঙালির এক অংশ সরকারবিরোধিতার নামে যা খুশি বলার প্রতিযোগিতা ও নোংরামিতে রেকর্ড করার পথে। এদের ওপর নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে সব মিলিয়ে দেশের বাইরে জটিল এক সমীকরণে আছে মিনি বাংলাদেশগুলো।

সিডনির জনবহুল বাঙালি জনগোষ্ঠীতে আল নোমান শামীমকে আমি এগিয়ে রাখি। এ যুবক যৌবন পেরিয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলিতে পূর্ণ হওয়ার পথে। তার কথা আলাদা করে বলছি এই কারণে, সংকটে, সমস্যায়, সমস্যা উত্তরণে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে আছে সে। এ দেশের সরকারি দল লেবারের সঙ্গেও আত্মিক সম্পর্ক তার। যার সুফলে লবিং করার বিষয়টি তার জন্য সহজ। এরই মধ্যে এ দেশের মন্ত্রী-এমপিসহ রাজনীতির বিখ্যাতজনদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ বিষয়ে সভা-সেমিনার করার পাশাপাশি গতিও এনে দিতে পেরেছে। আমি মনে করি, তার মতো উদ্যমী নির্ভীক কর্মী দরকার। যারা দুর্দিনে হাল ধরতে জানে।

এমনি আরেকজন আতিকুর রহমান শুভ। না, রাজনীতি করে না। রাজনীতি নিয়ে ভাবনা থাকলেও ও আসলে সংস্কৃতিকর্মী। সেটা বড় বিষয় নয়। বড় কথা তার হাত ধরেই সিডনিতে শুরু হয়েছে বাংলা বইয়ের বিস্তার। প্রথম একটি বাঙালি লাইব্রেরি করে আমাদের চমকে দেওয়ার পাশাপাশি সংস্কৃতি সাহিত্যে বাংলাদেশিদের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করার কাজটি সময় নিশ্চয়ই মনে রাখবে।

এদের কথা বললাম এই কারণে, এসব কাজ বা কর্মপ্রবাহ ভাষণ বক্তৃতা দল করার চেয়ে অধিক কার্যকরী। আওয়ামী লীগের হয়ে তারা কাজ না করলেও আখেরে এসব কাজের ফলাফল জমা হয় প্রগতির ঘরে। যার অভাবে আজ আমাদের সংস্কৃতির নাভিশ্বাস উঠছে। দেশের বাইরে যে অপপ্রচার, দেশবিরোধী বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তৎপরতা তাকে রুখতে এদের মতো বাঙালির দরকার। আমি এটাও বলব, ছোট ছোট বিষয়ে আত্মঘাতী প্রচার বা বিরোধিতার অবসান না হলে দেশের বাইরে দেশের সঠিক রাজনীতি গতি পাবে না। মজার ব্যাপার, এই বিএনপি-জামায়াত কিংবা আওয়ামীবিরোধীদের বেলায় নিশ্চুপ বা চুপ থাকা যারা নিজেদের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন, তারা জানেন না তাদের জন্য কী লোকসান হচ্ছে বা কতটা বিপদ হতে পারে।

মোট কথায় নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে, তখন সাবধানতার বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের শক্তি, সাহস বা দেশ শাসনে উন্নয়নের দিক বিবেচনা করলে তাদের জয়লাভ করা ব্যাপার কিছু নয়। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। বিএনপির আসন এখনো জনমনে শক্ত। বিরাট এক অংশ তাদের দিকে ঝুঁকে আছে। মাঝখানে বিশ্বমন্দা, কভিড আগুন, বাজারে আগুন—সব মিলিয়ে সরকারের জন্য সময়টা সুখকর কিছু না। এখন তো ভয়াবহ গরম আর বিদ্যুৎ সংকটে মানুষের ত্রাহি ত্রাহি হাল। বিরোধী দল মাঠে-ময়দানে সে সুযোগ নিতে না পারলেও ষড়যন্ত্রে এগিয়ে। বলাবাহুল্য, শেখ হাসিনা থাকার কারণেই বারবার বেঁচে যাচ্ছি আমরা। সে জায়গায় নিজেদের ভেতর বিরোধ বা দেশের বাইরে পরিবেশ আওয়ামীবিরোধীদের হাতে তুলে দেওয়া আত্মহননের নামান্তর। একটা কথা মনে রাখতে হবে, গঠনমূলক বিরোধিতা আর সমালোচনাই এগিয়ে রাখে। বাংলাদেশের রাজনীতি সেটা জানে। বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন, সৈয়দ নজরুল, শেখ হাসিনা থেকে সৈয়দ আশরাফ তার সেরা উদাহরণ। তারা সমালোচনা সহ্য করতে করতে, নিন্দা-গালমন্দ শুনতে শুনতে কবেই তার আওতার বাইরে পৌঁছে গিয়েছিলেন বা গেছেন, নিজেরাই টের পাননি। তারা সহ্য করতেন এবং করেন। যারা সহ্য করতে জানে না তাদের মাঠপর্যায়ে থাকাটাও আশঙ্কার।

আবারও বলি, দেশের বাইরে প্রান্তিক ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশিদের উচিত নির্বাচনের আগেই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে ঐক্যে থাকা। তারা তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ সবাইকে উদ্দীপ্ত করবেন। নিজেদের আদর্শের প্রচার করবেন বা মানুষকে উন্নয়ন ও প্রগতির কথা বলবেন। আর যারা একটু অগ্রসর তারা চাবুক মেরে হলেও দলের ভেতরের ময়লা-জঞ্জাল ধরিয়ে দেবেন। যেসব বিষয়ে মানুষের রাগ সেসব সেনসিটিভ বিষয় নির্বাচন বা ভোট নিয়ে খোলামেলা সমালোচনার মাধ্যমে পথ সুগম করে তুলবেন। সেটা না করে বিদ্বেষ আর আবেগ ও অতিভক্তির আতিশয্যে যেন নিজেদের পায়ে কুড়াল মারার কাজটি করা না হয়।

মনে রাখতে হবে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তাকে ঘিরে আবর্তিত দেশের রাজনীতি বিদেশের বা বিদেশিদের কুনজরে পড়লে দেশ ও জাতির কপালে দুঃখ আছে। বিদেশিদের হাতে যেন না যায় রাজনীতি—সে কারণেই আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযান আর প্রবাসে অতি আবেগীদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

লেখক : প্রাবন্ধিক, সিডনি প্রবাসী

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছাত্রলীগ নেতার ঘুষিতে স্কুলছাত্র নিহতের অভিযোগ

খালেদা জিয়াকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর

বিয়ে সেরে ফেরার পথেই প্রাণ গেল নবদম্পতির!

ফরিদপুরে দুই এমপি প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২০

‘আমার সঙ্গে যারা খারাপ করবে, তারা পৃথিবী থেকে নাই হয়ে যাবে’

দ্বিতীয় দিনে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন যারা

যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে সেটি হবে রাজনৈতিক : বিকেএমইএ’র সভাপতি

ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘে বসছে বিশেষ অধিবেশন

গভীর রাতে ম্যাগনেট পিলার খুঁজতে গিয়ে আটক ৫

একীভূত হচ্ছে দেশের ৯৪৪ প্রাথমিক বিদ্যালয়

১০

সাতক্ষীরায় পেঁয়াজ মজুতের দায়ে ৪ ব্যবসায়ীকে জরিমানা

১১

সোনালী ব্যাংকে অভিযোগ প্রতিকার ও জিআরএস সফটওয়্যারবিষয়ক কর্মশালা

১২

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা : যে নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী

১৩

যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল

১৪

বিশ্বকাপ শুরু ১৯ জানুয়ারি / ভারতের গ্রুপে বাংলাদেশ

১৫

জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

১৬

ঢাকায় ৪০০ টাকায় ৫ কাঠার প্লট, স্বর্ণের ভরি ১৩৩৩

১৭

নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নেতা বহিষ্কার

১৮

সিসিইউতে খালেদা জিয়া 

১৯

হামলা করলে মামলা হবেই, কোনো ছাড়াছাড়ি নেই : ওবায়দুল কাদের

২০
X