মার্চে হওয়া ইংল্যান্ড সিরিজের কথা মনে আছে? তিন ওয়ানডেতে উইকেটশূন্য ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। তখনই অভিজ্ঞ বাঁহাতি পেসারের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। একটা সময় প্রশ্নটা ছিল দেশের বাইরে এ সিমারের পারফরম্যান্স নিয়েও। দেশের মাটিতেও নখদন্তহীন হয়ে যাওয়ার পর ২৮ বছর বয়সী পেসারকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে—জাতীয় দলে ‘অটো চয়েস’ হয়ে খেলে যাচ্ছেন কি না মুস্তাফিজ?
মুস্তাফিজ যে অটো চয়েস নন, আয়ারল্যান্ড সিরিজেই তার প্রমাণ মেলে। ১৫ ওয়ানডেতে মাত্র ১১ উইকেট পাওয়া বাঁহাতি এ পেসারকে অন্যদের মতো দলে জায়গা পেতে হিমশিম খেতে হয়েছিল। একটা পরিসংখ্যানই বলে দেবে, এ তথ্যের সত্যতা; ইংল্যান্ড সিরিজের পর বাংলাদেশ খেলেছে ১৭ ওয়ানডে। নয় ম্যাচেই একাদশের বাইরে ছিলেন মুস্তাফিজ। ইংল্যান্ড সিরিজে ওই সময়ের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল স্পষ্ট জানিয়ে দেন—দলে কেউ ‘অটো চয়েস’ নন। মুস্তাফিজের ওপর টিম ম্যানেজেমেন্টের আত্মবিশ্বাস আছে জানিয়ে তামিম বলেছিলেন, ‘আমাদের অনেক বিশ্বাস মুস্তাফিজের ওপর। আমি মনে করি, সে পারফর্ম করবে। আগেও সে এমনটা করেছে।’
যে মুস্তাফিজকে নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছিল। সে মুস্তাফিজ তো একটা সময় বাংলাদেশের সেরা পেসার ছিলেন। ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তার ধারেকাছে ছিল না অন্য কেউ। ইংল্যান্ডে হওয়া ওই বিশ্বকাপে একাই ২০ উইকেট নিয়েছিলেন ফিজ। পরিসংখ্যান বলছে, অভিষেকের পর থেকে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ—৫৪ ম্যাচে ৬.৪৪ ইকোনমিতে ১০৩ উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। প্রতি উইকেটের জন্য ২২.৬৫ রান দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তী সময়ের পরিসংখ্যানটা দেখে মুস্তাফিজ নিজেও হয়তো হতাশ হবেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজের আগে ৩৭ ম্যাচে ৭.২৫ ইকোনমিতে নিয়েছেন মাত্র ৪৮ উইকেট। প্রতিটি উইকেটের জন্য ২৮.৬২ রান খরচ করতে হয়েছিল বাঁহাতি এ পেসারকে। এসব কারণে এ বছরে খেলা বেশ কয়েকটি ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে তার ওপর আস্থা রাখতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামদের বিশ্রামের কারণে পাওয়ার প্লেতে বোলিংয়ের সুযোগ মেলে মুস্তাফিজের। শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি উইকেটও এনে দিয়েছিলেন এ পেসার। মুস্তাফিজের খোলস থেকে বেরিয়ে আসা নিয়ে পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড কালবেলাকে বলেছেন, ‘৫০ ওভারের ক্রিকেটে মুস্তাফিজ একটু বেশি আগেই ডিফেন্সিভ হয়ে যায়। কিন্তু এই আলোচনা ওর সঙ্গে আমি করেছি, আমি চাই সে নিজেকে ফিরে পাক তার বোলিং দক্ষতা ও অ্যাগ্রেশন দিয়ে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের দুই ম্যাচেই সে সেটা দেখিয়েছে; সে অসাধারণ বোলিং করেছে। শর্ট বলটা দারুণ করেছে, এর বেশি আর কী চাই।’
মুস্তাফিজের ধার কমে যাওয়া নিয়ে শঙ্কাও দেখা দিয়েছিল। ফলে তাসকিনকে শুরু থেকেই বেশি চাপ নিতে হতো। বিষয়টি টিম ম্যানেজমেন্টের চোখেও পড়েছিল। এ প্রসঙ্গে ডোনাল্ড বলেছেন, ‘অনেকেই নানা কথা বলছে (মুস্তাফিজের পারফরম্যান্স নিয়ে)। কিন্তু আমরা সবাই জানি, সে কী করতে পারে। পাওয়ার প্লে-তে তার থেকে আমরা সেরাটা বের করতে চেষ্টা করছি।
শেষের দিকে ইয়র্কার, বাউন্সার দিয়ে সে প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলতে পারে। সে তাসকিনের চাপ কমিয়ে দিতে পারে।’ ডোনাল্ড বিশ্বাস করেন, ভারতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপে মুস্তাফিজ নিজেকে ফিরে পাবে।