যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গত শনিবার পালিত হলো পবিত্র আশুরা। দেশজুড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সাওম তথা রোজা রাখার মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেছেন।
পবিত্র কোরআনে ঘোষিত চারটি পবিত্র মাসের অন্যতম মহররম। এ মাসের দশম দিবস বা আশুরা মুসলমানদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ দিনে রোজা রাখতেন এবং অন্যদের তা রাখার নির্দশ দিতেন। সহিহ বুখারির হাদিসে পাওয়া যায়, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) মদিনায় এসে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? (তোমরা এই দিনে রোজা রাখ কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এই দিনে আল্লাহতাআলা বনি ইসরাইলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে নাজাত দান করেন, ফলে এই দিনে মুসা (আ.) রোজা রাখেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসার অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এই দিনে রোজা রাখেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০০৪)।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরাইশরা জাহিলি যুগে আশুরার দিন সিয়াম পালন করত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এদিন রোজা পালন করতেন। এরপর যখন তিনি মদিনায় হিজরত করলেন তখনো তিনি আশুরার সিয়াম পালন করেছেন এবং লোকদেরও তা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর যখন রমজানের সিয়ামকে ফরজ করা হলো তখন যার ইচ্ছা সে আশুরার সিয়াম পালন করত আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দিত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৫০৪)। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে আমি আশা পোষণ করি যে, তিনি আশুরার রোজার মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছরের (গুনাহ) ক্ষমা করে দেবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৭৫২)। আশুরার দিনের আরও অনেক তাৎপর্যের কথা সমাজে প্রচলিত থাকলেও মুসা (আ.) এর ঘটনা ছাড়া কোনোটিই সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এ ছাড়া মহানবী (সা.) এর ওফাতের ৫০ বছর পর হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে তার দৌহিত্র হজরত হুসাইন (রা.)-কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এজন্য এটি মুসলমানদের কাছে অতিশয় শোকাবহ একটি দিনও বটে। এ মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণে শিয়া সম্প্রদায় নানা আয়োজনে দিনটি পালন করে। শনিবার সকাল ১০টায় একটি তাজিয়া মিছিল বের হয় রাজধানীর লালবাগের হোসনী দালান ইমামবাড়া থেকে। এতে নেতৃত্ব দেন হোসনী দালানের সুপারিনটেনডেন্ট এম এম ফিরোজ হোসাইন এবং হোসনী দালানের সদস্য সৈয়দ বাকির হোসাইন মাজলুম। তাজিয়া মিছিল ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন