ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া মাদ্রাসার দুটি আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। হল বন্ধের ঘোষণা এলেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে মাদ্রাসা এলাকায়। ক্যাম্পাসের আশপাশে চলছে খণ্ড-খণ্ড মহড়া। শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, হল বন্ধ থাকলেও মাদ্রাসার আশপাশে আবারও ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
গতকাল রোববার মাদ্রাসাটির ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে হল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ ও হল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মস্তুফা কামাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত শুক্রবার হলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার আল্লামা কাশগরী (রহ.) হল ও শহীদ ইব্রাহিম হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। একই সঙ্গে হলে অবস্থান করা সব শিক্ষার্থীকে সকাল ৮টার মধ্যে হল ত্যাগ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়ায় ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষ হয়। হামলা চলাকালে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনায় দুগ্রুপের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়। মাদ্রাসার পশ্চিম পাশে একাধিক দোকানপাট ভাঙচুর, মালপত্র লুট, স্থানীয়দের বাসাবাড়িতে ঢুকে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অস্ত্র ও ডাকাতি মামলার আসামি আজিজের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হয়ে তিনি এ সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।
আজিজের বিরুদ্ধে এর আগেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, হামলা চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ছিল। এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে আটক হন। ছাত্রত্ব না থাকলেও থাকেন আলিয়া মাদ্রাসার হলে। আলিয়া মাদ্রাসা এবং তার আশপাশে একচ্ছত্র আধিপত্য এ নেতার।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জানান, দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫টি রুম ভাঙচুর করা হয়েছে। শহীদ ইব্রাহিম হলে অন্তত আটটি রুমে ভাঙচুর হয়েছে। এদিকে ঘটনার পর পরই আলীয়া মাদ্রাসার পশ্চিম পাশে একাধিক দোকানপাট ভাঙচুর, মালপত্র লুট, স্থানীয়দের বাসাবাড়িতে প্রবেশ করে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সংঘর্ষের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুরাদ হোসাইনের কর্মীদের থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। এ সময় অপরপক্ষের কর্মীরা ভাঙচুর চালায়। ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতারা বলছেন, নতুন কমিটি গঠনের পর থেকে আধিপত্য হারিয়েছেন সাবেক কমিটির সভাপতি যুবায়ের ও সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ। দীর্ঘদিন ধরে তারা চেষ্টা করছিলেন হারানো আধিপত্য পুনরুদ্ধারের। এদিকে কমিটি বিলুপ্ত এবং হল বন্ধের ঘোষণার পরও ক্যাম্পাসের আশপাশে মহড়া দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সাবেক কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক বরকত হোসেনের নেতাকর্মীরা এই শোডাউন দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আজিজকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সদ্য স্থগিত কমিটির সভাপতি মুরাদ হোসাইন কালবেলাকে বলেন, মাদ্রাসা প্রশাসন হল বন্ধ ঘোষণা করার পরও একটি পক্ষ আশপাশে অবস্থান নিয়ে হুমকি দিচ্ছে এবং মহড়া দিচ্ছে। আমার কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে।