দেশের বেশ কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। মহামারি করোনার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও এ ছুটি পেতেন। তবে করোনার কারণে একাডেমিক ক্ষতি পূরণে একটি পরিকল্পনা করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। বছরের শুরুতে সে পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবু গ্রীষ্মকালীন ছুটি পাচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মানসিক স্বস্তির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এখন তাদের দাবি, দ্রুত ছুটির পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মহামারি করোনার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতি পোষাতে ‘লস রিকভারি প্ল্যান’ হাতে নেয় ঢাবি কর্তৃপক্ষ। এ সময় নির্ধারিত অনেক ছুটি বাতিল করে চলতে থাকে অফলাইন-অনলাইন ক্লাস। এক বছরে দুই সেমিস্টার পাঠদান সম্পন্ন করলেও এ প্ল্যানের আওতায় বছরে তিন সেমিস্টার শেষ করা হয়। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য সময়ের চেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষার চাপ বেড়ে যায়। শিক্ষকরাও অতিরিক্ত চাপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে দিনের বেলায় সরাসরি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস হলেও রাতে অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। তবে এত চাপের মধ্যেও অনেক শিক্ষক সিলেবাস কমাননি। ফলে ছয় মাসের সিলেবাস অতিরিক্ত চাপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের চার মাসে শেষ করতে হয়েছে। তবে বর্তমানে মহামারি করোনা জয় করে দেশ স্বাভাবিক হলেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ কমেনি। এর মধ্যে ফের বাতিল করা হয়েছে গ্রীষ্মকালীন ছুটি।
শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীরা বড় যে কয়টি ছুটি পায়, তার মধ্যে মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি অন্যতম; কিন্তু গত রমজানে অনেক বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেক বিভাগে ঈদের পরপরই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে নির্ধারিত ছুটির আমেজ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল হওয়ায় ক্ষুব্ধ তারা।
এ বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ হাসান কালবেলাকে বলেন, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেওয়ার কারণে আমাদের ছুটি দেওয়া অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। গত রমজানে আমাদেরসহ অনেক বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল থাকায় আমরা পর্যাপ্ত ছুটি কাটাতে পারিনি। ঈদের ঠিক পরই বন্ধ না দিয়ে ফের ক্লাস শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগেও আমরা ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করেছি। আমাদের মানসিক স্বস্তি প্রয়োজন। তার ওপরে যা গরম পড়েছে, লোডশেডিংও হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। শুধু একটি বিষয় নয়, বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করলে অবশ্যই আমাদের গ্রীষ্মের ছুটি দেওয়া উচিত বলে মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি গবেষণার কাজ, সংসার সামলানো, বিভিন্ন সভা সেমিনারে অংশ নেওয়া, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া ও ফলাফল-সংক্রান্ত কাজসহ তাদের নানা কাজ করতে হয়; কিন্তু লস রিকভারি প্ল্যান হাতে নেওয়ার পর তাদের অনেক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল বাছির কালবেলাকে বলেন, লস রিকভারি প্ল্যান থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি। গরমের মাত্রার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে যদি কোনো খারাপ ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পরামর্শ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে পারে। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীরা লস রিকভারি প্ল্যানে সাড়া দিয়ে প্রচুর ক্লাস করেছে। শিক্ষকরাও এ সময় প্রচুর সময় দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েছেন। ওই সময়ে আমরা গ্রীষ্মকালীন ছুটিসহ অন্যান্য ছুটি সংকুচিত করেছি। যেহেতু আমরা লস রিকভারি প্ল্যান বাতিল করেছি, উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা পূর্বের অবস্থায় ফিরে গিয়েছি। আমাদের সিন্ডিকেটের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে, শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে যে কোনো অনুমোদিত ছুটি রিভাইজ করতে হতে পারে।
মন্তব্য করুন