আট বছরের ছোট্ট তুষার মন খুলে সাঁতার কাটছে। তবে পুকুর কিংবা নদীতে নয়, রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ের রাস্তায়। ঢাকার রাস্তায় এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে গত বৃহস্পতিবারের ৬ ঘণ্টার বৃষ্টিতে। এতে ডুবে গিয়েছিল নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি—সবখানেই জলাবদ্ধতা ও যানজট। অচল হয়ে পড়েছিল গোটা শহর। ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যানবাহনের
চালক-যাত্রীরা। সেই দুর্ভোগ গতকাল শুক্রবার সারা দিনেও কমেনি। নিউমার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছিল পানির নিচে। কোমরসমান পানিতে সড়কে বিকল হয়েছে যানবাহন। দোকান খুলতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। বাসাবাড়িতে আটকা পড়েছেন অনেকে। অনেকে আবার উপায় না পেয়ে ময়লাপানি মাড়িয়েই ছুটছেন কর্মস্থলে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নষ্ট হওয়ায় জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকছে অনেক এলাকা। আর নগরবাসীর অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনে সিটি করপোরেশনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, নীলক্ষেত মোড় থেকে পিলখানা সড়ক পানিতে ডুবে ছিল গতকাল বিকেল পর্যন্ত। কোমরসমান পানির কারণে নিউমার্কেটের অনেক দোকান ছিল বন্ধ। পানি থেকে রক্ষা পেতে অনেকে রাস্তা ছেড়ে দেয়াল বেয়ে এগিয়ে চলেছেন গন্তব্যে। নীলক্ষেত মোড় থেকে নিউমার্কেট এক নম্বর গেট হয়ে পিলখানা পর্যন্ত রাস্তায় কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোমরপানি। সেই পানি ভেঙে গাড়ি-মোটরসাইকেল ছুটেছে গন্তব্যে। নগরবাসীর কেউ ভ্যানে চড়ে, আবার কেউ রিকশায় রওনা হয়েছেন গন্তব্যে। এ সুযোগে রিকশা-ভ্যান চালকরাও নিয়েছেন বাড়তি টাকা।
ঢাকা কলেজের হলের সামনে গতকাল দুপুরে যেন বইছিল স্রোত। পুকুর প্লাবিত হয়ে একাধিক হলেও ঢুকেছে পানি। বন্ধ রয়েছে হলের ডাইনিং। বন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী।
তাদের একজন সাখাওয়াত আল হোসাইন বলেন, সবকিছু পানিতে একাকার। ডাইনিং বন্ধ। হলে পানি উঠেছে। বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। পুরো ক্যাম্পাসে পানি আর পানি। তাতে ময়লা ভাসছে, ঢুকছে হলের রুমে।
ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশের গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স, বদরুদ্দোজা মার্কেটের বিক্রেতাদের দোকান থেকে পানি বের করতে দেখা গেছে। ভিজে গেছে দোকানের পণ্য। বস্তাবন্দি কাপড় বের করে সড়কের পাশে রেখে তা পরিষ্কার করছেন কর্মচারীরা।
নিউমার্কেটের ভেতরে নিচতলার বেশিরভাগ দোকানের ভেতরে ঢুকেছে পানি। কেউ বিক্রিযোগ্য পণ্য রক্ষা করতে পেরেছেন। কেউ পানিতে মালপত্র নষ্ট হওয়ায় হতাশ। যথাযথ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় অসন্তোষ ও ক্ষোভ জানিয়েছেন নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা হতে পারে। তাই বলে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পরও পানি নামবে না, এটা কেমন কথা! এই ব্যর্থতার জন্য যারা দায়ী, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও থইথই করছিল পানিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট, কুয়েত মৈত্রী হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, শহীদ শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসসহ বেশকিছু জায়গা তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে নিচু হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে কুয়েত মৈত্রী হলের শিক্ষার্থীরা। এ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী লাবণ্য তাসফী বলেন, এখনো পানি নামেনি, বিদ্যুৎও আসেনি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সবাই অসহনীয় অবস্থায় রয়েছে। খাবার পানিও নেই। ওয়াসা থেকে খাবার পানি এনে সবাইকে দেওয়া হয়েছে।
মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুন নাহার বলেন, কী বীভৎস অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি বলে বোঝানো যাবে না। এখন পর্যন্ত পানি নেমে যাওয়ার লক্ষণ দেখছি না। আমাদের পাওয়ার স্টেশন গতকাল রাতেই ব্লাস্ট হয়ে বিদ্যুৎ নেই। খাবার পানির রিজার্ভ ট্যাঙ্ক এখনো পানির নিচে।
জলাবদ্ধতা দেখা গেছে শনিরআখড়া, পুরান ঢাকার বংশাল, সিক্কাটুলি পার্ক, সিক্কাটুলি ছাতাওয়ালা মসজিদ রোড, চানখাঁ মসজিদ রোড, আগামসি লেন ও কসাইটুলী এলাকায়। উত্তরের মিরপুরের কয়েকটি এলাকাসহ দক্ষিণখান এলাকারও সড়ক ও অলিগলি পানির নিচে।
গতকাল সকালে চাঁনখারপুল লেন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি ভাঙাড়ির দোকানে কয়েকজন কর্মচারী পানি বের করছেন। পানিতে দোকানের মালপত্র ভিজে গেছে।
নাজিমুদ্দিন রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে সড়কের পাশে জমিয়ে রাখা ময়লা-আবর্জনা ও ড্রেনের ময়লা একাকার হয়ে গেছে। রাত থেকে নোংরা পানি মাড়িয়েই চলাচল করছেন মানুষ। রাস্তার দুপাশের বেশিরভাগ দোকানে পানি ঢুকেছে।
হোসনী দালান রোডে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পর ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও জলাবদ্ধতা কমেনি। পানি সরছে না প্রধান সড়ক থেকে। সেখানে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বাবলু হাওলাদার বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার করলে জলাবদ্ধতা হতো না।
লালবাগের মুদিদোকানি শাহ আলম খোকন বলেন, রাতে দোকানে পানি ঢুকে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার মালপত্র ভিজে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও পানি সরাতে না পেরে অনেক মালপত্র ফেলে দিতে হয়েছে।
ছুটির দিনে ধানমন্ডি লেকে ঘুরতে এসে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। লেকের পাশের অধিকাংশ এলাকা ছিল পানির নিচে। হাঁটার স্থান ও বসার স্থানগুলোতে জমেছে পানি। লেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী লাভলুর রশীদ বলেন, ছুটির দিনে এখানে এসে বিব্রত হয়েছি। চারদিকে পানি জমে আছে, স্যাঁতসেঁতে একটা অবস্থা। চলে যাচ্ছি।
মিরপুরের কুর্মিটোলা পূর্ববিহারি ক্যাম্পের অবস্থা আরও করুণ। ক্যাম্পের ভেতরে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি। বেশিরভাগ ঘরেই পানি জমে রয়েছে। অনেক বাসিন্দা চৌকি বা খাটের ওপর অবস্থান নিয়ে দিন পার করছেন। যাদের ঘরে শিশু আছে, তাদের দুর্ভোগ আরও বেশি।
ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, বৃষ্টি থেমে যাওয়ার ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পার হলেও পানি নামছে না। ক্যাম্পের পাশের খালটি ভরাট করায় পানি সরছে না। রাতেই ঘরের তোশক-বালিশসহ সব ভিজে গেছে। রান্নাবান্নাও করা যাচ্ছে না।
স্থানীয় কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খালে বাঁধ দেওয়ায় পানি সরছে না। তারা পানি নামাতে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে আগুনে রক্ষা পাওয়া কিছু চালের আড়ত এবার ডুবেছে বৃষ্টির পানিতে। শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, পানিতে ভিজে যাওয়া
চাল-ডালসহ বিভিন্ন পণ্যের বস্তা বের করছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ জমে থাকা পানি সরাতে ব্যস্ত। এরপর ভিজে যাওয়া চালের বস্তা নামমাত্র দামে বিক্রি করছেন। সালমা আক্তার নামে এক নারী ১ হাজার ৬০০ টাকা দামের ২৫ কেজির দুই বস্তা কিনেছেন মাত্র ৫০০ টাকায়। তার মতো অনেককেই অল্প দামে চাল, ডাল, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য কিনে নিয়ে যেতে দেখা গেছে কৃষি মার্কেটে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একজন বিসমিল্লাহ ট্রেডিংয়ের মালিক শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, দুই দোকানের প্রায় ৩০০ বস্তা চাল নষ্ট হয়েছে বৃষ্টির পানিতে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৯ লাখ টাকা। তিন মাস আগেও একবার পানি উঠেছিল। তখনও ১০০ বস্তা চাল নষ্ট হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, রাত থেকেই তাদের কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে। শুক্রবার সাধারণ ছুটি হলেও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল হয়েছে। কোথাও পানি জমে থাকলে ১৬১০৬ নম্বরে নগরবাসীকে ফোন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সমস্যার সমাধানে দুই সিটি করপোরেশনই নগরবাসীর সাহায্য চেয়েছে।
ডিএসসিসির একজন প্রকৌশলী বলেন, বৃষ্টির পানি যে ভূগর্ভে যাবে তেমন উন্মুক্ত স্থান নেই। ৪০ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত রেখে ভবন করার কথা বলা হলেও মালিকরা তা করেন না। পুরোটাই কংক্রিটে ঢেকে ফেলেন। অনেক জলাশয় ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ঢাকা শহরকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়নি। ইচ্ছামতো খালে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। নাজুক ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পানি কোন পথ দিয়ে নামবে, সেই কাজ আগে করা উচিত ছিল। তা না করে শুধু সংযোগ লাইনের কাজ করলে কি পরিবর্তন আসবে? লাইনের পানি সরার জায়গা তো আগে ঠিক করতে হবে। ঢাকাবাসীর ভোগান্তি কমাতে পরিকল্পিত এবং যথাযথ উন্নয়ন না করলে কোনো ক্ষেত্রেই সুফল পাওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতার ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। নালা সংযোগ ব্যবস্থার মহাপরিকল্পনা তৈরি না করে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করা হলে তা হবে শুধুই টাকার অপচয়। পুরান ঢাকার ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। এ অপচয় বন্ধে দ্রুত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন শেষ করে সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
নাজিমুদ্দিন রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে সড়কের পাশে জমিয়ে রাখা ময়লা-আবর্জনা ও ড্রেনের ময়লা একাকার হয়ে গেছে। রাত থেকে নোংরা পানি মাড়িয়েই চলাচল করছেন মানুষ। রাস্তার দুপাশের অধিকাংশ দোকানে পানি ঢুকেছে।
হোসনী দালান রোডে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পর ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও জলাবদ্ধতা কমেনি। পানি সরছে না প্রধান সড়ক থেকে। সেখানে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বাবলু হাওলাদার বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। নিয়মিত ময়লা পরিষ্কার করলে জলাবদ্ধতা হতো না।
লালবাগের মুদি দোকানি শাহ আলম খোকন বলেন, রাতে দোকানে পানি ঢুকে অন্তত ৫ লাখ টাকার মালপত্র ভিজে গেছে। চেষ্টা করেও পানি সরাতে না পেরে অনেক মালপত্র ফেলে দিতে হয়েছে।
ছুটির দিনে ধানমন্ডি লেকে ঘুরতে এসে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। লেকের পাশের অধিকাংশ এলাকা ছিল পানির নিচে। হাঁটার স্থান ও বসার স্থানগুলোতে জমেছে পানি। লেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী লাভলুর রশীদ বলেন, ছুটির দিনে এখানে এসে বিব্রত হয়েছি। চারদিকে পানি জমে আছে, স্যাঁতসেঁতে একটা অবস্থা। চলে যাচ্ছি।
মিরপুরের কুর্মিটোলা পূর্ব বিহারি ক্যাম্পের অবস্থা আরও করুণ। ক্যাম্পের ভেতরে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর সমান পানি। অধিকাংশ ঘরেই পানি জমে রয়েছে। অনেকে চৌকি বা খাটের ওপর অবস্থান নিয়ে দিন পার করছেন। যাদের ঘরে শিশু আছে, তাদের দুর্ভোগ আরও বেশি।
ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, বৃষ্টি থেমে যাওয়ার ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পার হলেও পানি নামছে না। ক্যাম্পের পাশের খালটি ভরাট করায় পানি সরছে না। রাতেই ঘরের তোশক-বালিশসহ সব ভিজে গেছে। রান্নাবান্নাও করা যাচ্ছে না।
স্থানীয় কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খালে বাঁধ দেওয়ায় পানি সরছে না। তারা পানি নামাতে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে আগুনে রক্ষা পাওয়া কিছু চালের আড়ত এবার ডুবেছে বৃষ্টির পানিতে। শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, পানিতে ভিজে যাওয়া চাল-ডালসহ বিভিন্ন পণ্যের বস্তা বের করছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ জমে থাকা পানি সরাতে ব্যস্ত। এরপর ভিজে যাওয়া চালের বস্তা নামমাত্র দামে বিক্রি করছেন। সালমা আক্তার নামে এক নারী ১ হাজার ৬০০ টাকা দামের ২৫ কেজির দুই বস্তা কিনেছেন মাত্র ৫০০ টাকায়। তার মতো অনেককেই অল্প দামে চাল, ডাল, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য কিনে নিয়ে যেতে দেখা গেছে কৃষি মার্কেটে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একজন বিসমিল্লাহ ট্রেডিংয়ের মালিক শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, দুই দোকানের প্রায় ৩০০ বস্তা চাল নষ্ট হয়েছে বৃষ্টির পানিতে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৯ লাখ টাকা। তিন মাস আগেও একবার পানি উঠেছিল। তখনো ১০০ বস্তা চাল নষ্ট হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, রাত থেকেই তাদের কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে। শুক্রবার সাধারণ ছুটি হলেও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল হয়েছে। কোথাও পানি জমে থাকলে ১৬১০৬ নম্বরে নগরবাসীকে ফোন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সমস্যার সমাধানে দুই সিটি করপোরেশনই নগরবাসীর সাহায্য চেয়েছে।
ডিএসসিসির একজন প্রকৌশলী বলেন, বৃষ্টির পানি যে ভূগর্ভে যাবে, তেমন উন্মুক্ত স্থান নেই। ৪০ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত রেখে ভবন করার কথা বলা হলেও মালিকরা তা করেন না। পুরোটাই কংক্রিটে ঢেকে ফেলেন। অনেক জলাশয় ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ঢাকা শহরকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়নি। ইচ্ছামতো খালে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। নাজুক ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, পানি কোন পথ দিয়ে নামবে, সেই কাজ আগে করা উচিত ছিল। তা না করে শুধু সংযোগ লাইনের কাজ করলে কি পরিবর্তন আসবে? লাইনের পানি সরার জায়গা তো আগে ঠিক করতে হবে। ঢাকাবাসীর ভোগান্তি কমাতে পরিকল্পিত এবং যথাযথ উন্নয়ন না করলে কোনো ক্ষেত্রেই সুফল পাওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতার ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। নালা সংযোগ ব্যবস্থার মহাপরিকল্পনা তৈরি না করে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করা হলে তা হবে শুধুই টাকার অপচয়। পুরান ঢাকার ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। এ অপচয় বন্ধে দ্রুত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন শেষ করে সে অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
মন্তব্য করুন