আ ন ম আমিনুর রহমান
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:২০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নাম তার সপ্তপদ্মরাগ

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের উল্টোপাশের ছাপরা হোটেলে বসে তেলছাড়া পরোটা খাচ্ছিলাম বুটের ডাল ও ডিমের ওমলেট দিয়ে। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। খানিক পর বৃষ্টি থেমে ঝলমলিয়ে রোদ উঠল। আর কোত্থেকে যেন আলতা লাল কালো ডানাওয়ালা এক পতঙ্গ উড়ে এসে হোটেলের সামনের খোলা জায়গার মাটিতে বসল! তাকে বেশ অস্থির লাগছে। এই বসছে, এই উড়ছে—কেমন যেন একটা তাড়াহুড়া ভাব। তবে পতঙ্গটি ঘুরে ঘুরে একই জায়গায়ই আসছে। দূরে চলে যাচ্ছে না। নাশতা খেতে খেতে সেটির কীর্তিকলাপ দেখছিলাম। নাশতা খাওয়া শেষ হলে পাশে রাখা ৩০০ মিমি ল্যান্সসহ ক্যানন সেভেন ডি ক্যামেরাটা নিয়ে পতঙ্গটির কীর্তিকলাপের কিছু সচিত্র প্রমাণ নেওয়ার জন্য বের হলাম। তবে সেটির অস্থিরতার জন্য ছবি ভালো হচ্ছিল না। সেবার অনেক কষ্ট করেও একটা ভালো ছবিও পাইনি। পরবর্তী সময়ে পতঙ্গটির সঙ্গে অনেকবার দেখা হয়েছে কাপ্তাই ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। সর্বশেষ তার কিছু ভালো উড়ন্ত ছবি তুললাম খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির সাজেক থেকে।

আলতা লাল দেহের কালো ডানাওয়ালা এ পতঙ্গটি এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান এক প্রজাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক ড. বাশার ও তার গবেষক দল পতঙ্গটির নাম দিয়েছেন সপ্তপদ্মরাগ। আর পশ্চিমবঙ্গে এটি আলতে নামে পরিচিত। সপ্তপদ্মরাগের ইংরেজি নাম Common Rose। Papilionidae পরিবারভুক্ত প্রজাপতিটির বৈজ্ঞানিক নাম Pachliopta aristolochiae। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও চীন পর্যন্ত এগুলো বিস্তৃত।

প্রসারিত অবস্থায় সপ্তপদ্মরাগের এক ডানার প্রান্ত থেকে অন্য ডানার প্রান্ত পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৮০ থেকে ১১০ মিলিমিটার। সপ্তপদ্মরাগের দেহ আলতা লাল, তবে উপরের অংশে বড় কালো দাগ ও নিচে কালো ছিটছোপ। সামনের ডানা পুরোপুরি কালো হলেও পেছনের ডানার মধ্য অংশে সাদা ছোপ ও কিনারায় গোলাপি-বাদামি ফোঁটা রয়েছে, ডানার নিচের অংশে গিয়ে যেগুলো আরও বড় ও লাল হয়ে গেছে। পেছনের ডানায় একটি করে সুন্দর লেজ রয়েছে। চোখ, শুঁড় ও পা কালো। পুরুষ ও স্ত্রী প্রজাপতি দেখতে একই ধরনের।

সপ্তপদ্মরাগ বাংলাদেশের সবখানেই পাওয়া যায়। সুন্দরবনসহ বিভিন্ন ধরনের বনাঞ্চল, বনের কিনারা, চষা জমি, ঝোপ-জঙ্গল ও উন্মুক্ত এলাকায় বেশি দেখা যায়। এগুলো অল্প উঁচু থেকে মধ্যম উঁচুতে অর্থাৎ মাটি থেকে ৩ থেকে ৪ মিটার ওপরে ধীরে ও ডানা ঝাপটানোর মতো করে ওড়ে। গাছের মগডালে রোদ পোহায়। কখনো কখনো ভেজা বালু বা স্যাঁতসেঁতে মাটির রস চুষতে দেখা যায়। মধুর জন্য ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াতে ও পানির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে।

স্ত্রী প্রজাপতি ঈশ্বরমূল, গন্ধম প্রভৃতি পোষক গাছের পাতার ওপর, নিচ বা কুঁড়িতে একটি করে ডিম পাড়ে। সরু কালো দাগছোপসহ গোলাকার এ ডিমের রং লালচে। তিন দিনে ডিম ফুটে কালচে লাল কণ্টকময় শূককীট বের হয়, যার মাঝামাঝি সাদা দাগ থাকে। পাঁচবার খোলস পাল্টে শূককীট ১৪ থেকে ১৫ দিনে মুককীটে রূপান্তরিত হয়। প্রায় ১১ থেকে ১২ দিন পর মুককীটের খোলস কেটে নতুন প্রজাপতি বেরিয়ে আসে নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে।

লেখক: পাখি, বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক, বশেমুরকৃবি, গাজীপুর

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আ.লীগ প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুলকে শোকজ

পঞ্চগড়ে বাকপ্রতিবন্ধীর জমি দখলের অভিযোগ

ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচন করতে দিবে না জনগণ : রিজভী

দক্ষিণ আফ্রিকায় অর্থ পাচারে ৫ বাংলাদেশির নাম

স্বামীর খোঁজে বাংলাদেশে ভারতীয় তরুণী

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন : শামীম ওসমানকে শোকজ

ইসির সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের আস্থা আছে : ওবায়দুল কাদের

ফার্মগেটে জোড়া ককটেল বিস্ফোরণ

মায়ের হত্যার বিচার করতে, বিপাশা হতে চায় পুলিশ

বিশিষ্টজনদের মতামত / গণতন্ত্র রক্ষায় নির্বাচনের বিকল্প নেই

১০

ভার্চুয়াল বৈঠক / ইইউকে নির্বাচন বয়কটের কারণ জানাল বিএনপি 

১১

ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি

১২

যে কারণে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শেষ করে দিল ইসরায়েল

১৩

‘নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের নামে প্রজন্ম ধ্বংসের নীলনকশা করেছে সরকার’

১৪

ভূমিকম্প আতঙ্কে দোতলা থেকে লাফ দিয়ে দুই শিক্ষার্থী আহত

১৫

জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় সর্বজনীন আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার আহ্বান তথ্যমন্ত্রীর

১৬

ইউএনওর বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর 

১৭

যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল ইরাক

১৮

অলিম্পিকে ৪ ডিসিপ্লিনে আবেদন করবে বাংলাদেশ

১৯

সমমনা জোট থেকে মাইনরিটি জনতা পার্টিকে বহিষ্কার

২০
X