সাড়ে চার বছরের বেশি সময়েও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন না করায় সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, আরেকটি সংসদ নির্বাচন দোরগোড়ায় এসে গেলেও বিগত নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ না করা দুর্ভাগ্যজনক। সদিচ্ছা থাকলে আগামী মাসে সংসদের শেষ অধিবেশনে এবং কিছু নির্বাহী আদেশে দ্রুততম সময়ে এসব অঙ্গীকার পূরণ করা সম্ভব।
গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৪৮ ঘণ্টার গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এ কর্মসূচি চলাকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শারদীয় দুর্গাপূজার আগে প্রতি বছরের মতো এবারও মূর্তি ভাঙা শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ২০২১ সালের শারদ সন্ত্রাসের সময় গ্রেপ্তার হওয়া সহিংসতার সূচনাকারী কুমিল্লার ইকবালকে যদি পাগল না সাজিয়ে যথাযথ বিচার ও সাজার মুখোমুখি করা হতো, তাহলে এত মূর্তি ভাঙা, মন্দির ভাঙার ঘটনা দেখতে হতো না। আমরা ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পূজার আগে-পরে নিরাপত্তার প্রশ্নে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছি।
চলতি অনশন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করে আগামী ৬ অক্টোবরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘুবিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনসহ সরকারি দলের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের দাবিতে এ অনশন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আগামীকাল রোববার ভোর ৬টায় এ কর্মসূচি শেষ হবে।
এতে বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সম্প্রীতি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, জয়ন্ত সেন দীপু, অধ্যাপক জিনোবোধি ভিক্ষু, রঞ্জন কর্মকার, মিলন কান্তি দত্ত, যোসেফ সুধীন মণ্ডল, বাসুদেব ধর, মঞ্জু ধর, জয়ন্তী রায়, বিকাশ রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, তাপস কুমার পাল, শ্যামল কুমার রায়, কিশোর রঞ্জন মণ্ডল, প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, রবীন্দ্রনাথ বসু, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোরাইয়া, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (প্রভাষ-পলাশ) সভাপতি প্রভাষ বিশ্বাস, নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, হিন্দু মহাজোটের (এমকে) সভাপতি এম কে রায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহের আদিবাসী সংগঠনগুলোর ঐক্য পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক অরণ্য চিরান প্রমুখ। আজ শনিবার ঢাকা বিভাগের জেলা ও মহানগর পর্যায়ে গণঅনশন কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছেন ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা।
চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে গণঅনশন পালিত : একই দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগের ১২ জেলা ও ১ মহানগর এবং বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা ও ১ মহানগরে এদিন ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় এ কর্মসূচি পালিত হয়। বরিশাল বিভাগের বরিশাল মহানগর, বরিশাল জেলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠি জেলায় কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মন্তব্য করুন