ময়মনসিংহ ব্যুরো
০২ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৪৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মানুষ ক্ষুধার তোয়াক্কা করে না গণতন্ত্র চায়

ড. মঈন খান

সরকার মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেটা বলবে, দেশের ১৮ কোটি মানুষ তা-ই শুনবে, এটা হতে পারে না। দেশের মানুষ ক্ষুধার তোয়াক্কা করে না, তারা গণতন্ত্রের অধিকার চায়।

গতকাল রোববার ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত রোডমার্চে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বাতিল, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এ রোডমার্চ করে বিএনপি।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ত্রিশালের বগারবাজারের সমাবেশ থেকে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন আবদুল মঈন খান। তার বক্তব্য শেষে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায় রোডমার্চের গাড়িবহর। বগারবাজার থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চটি কিশোরগঞ্জ বাইপাসে গিয়ে শেষ হয়। ১১৪ কিলোমিটার রোডমার্চে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চুরখাই, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের চায়না মোড়, শম্ভুগঞ্জ, ঈশ্বরগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে সমাপনী পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। দুই হাজারের বেশি গাড়ির বহরে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা ও শেরপুরের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন।

মঈন খান বলেন, আমরা রাস্তায় নেমেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে না পারব এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বহীন এই সরকার স্বেচ্ছায় বিদায় না নেব, ততক্ষণ পর্যন্ত এ রাজপথ ছেড়ে যাব না। এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। যত তাড়াতাড়ি তারা ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে, বাংলাদেশের জন্য ততই মঙ্গল হবে।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আন্দোলন ক্রমান্বয়ে জোরদার হবে। কারণ, মানুষ বাঁচতে চায়। জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে মানুষের আর বাঁচার উপায় নেই। যদি বাঁচতে চান এবং নিজের ভোট নিজে দিতে চান, তাহলে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আগামী দিনে লড়াই হবে, সবাই মিলে লড়াই গড়তে হবে এবং তাতে আমাদের জিততে হবে।

‘সরকার বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়ার মৃত্যু চাইছে’—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, যদি সরকার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দেয়; তাহলে পরিষ্কার বোঝা যাবে, সরকার চাইছে বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়ার মৃত্যু হোক।

বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার অভিযোগ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, যারা বাধা দেবেন, তাদের দীর্ঘদিন মনে রাখা হবে।

এর আগে সকাল ৯টা ৪৩ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রোডমার্চের আনুষ্ঠানিকতা। অংশ নিতে সকাল থেকেই বগারবাজার সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সমাবেশ শেষে সেখান থেকে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রোডমার্চ শুরু হয়। রোডমার্চ শুরুর পর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ও বাজারে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন জানায় এবং রোডমার্চে যুক্ত হন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা।

প্রতীকী কারাগারে শিশু লুবাবা: খোলা পিকআপভ্যান। সেখানে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় কারাগার। কালো রঙের কারাগারের ভেতর গোলাপি শাড়ি পরা ছয় বছর বয়সী শাহ রুফায়দা লুবাবা। ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’—এমন স্লোগান লেখা কারাগারের ভেতর থেকে কখনো চেয়ারে বসে, কখনো দাঁড়িয়ে হাতে নাড়িয়ে উৎসুক মানুষকে শান্ত করার চেষ্টা করে শিশুটি। হাতে ধানের ছড়া, চোখে কালো চশমা পরা লুবাবা নিজেকে প্রতীকী খালেদা জিয়া সাজিয়েছে। প্রতীকী কারাগারের ভেতর থেকে তার মায়ের গলার সঙ্গে মিলিয়ে শিশুটি বলতে থাকে, ‘আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আমি আপসহীন নেত্রী। আমি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।’ তার গাড়ি থামিয়ে পথে পথে ছবি তোলেন বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। রোডমার্চে গৌরীপুরের শিবপুর এলাকায় দেখা মেলে প্রতীকী কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে। লুবাবা নার্সারি শ্রেণির ছাত্রী। সে গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ময়মনসিংহ উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি তানজিন চৌধুরী লিলির মেয়ে। তার বাবা কেন্দ্রীয় যুবদলের এজিএস শাহ নাসিরুদ্দিন রুমন।

বাকৃবি এলাকায় বিএনপি সমর্থকদের মারধর: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বিএনপি সমর্থকদের মারধর ও টি-শার্ট পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড় ও কেআর মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর ৩টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোডমার্চে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপি সমর্থকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তা ব্যবহার করেন। অনেকে উদ্বোধন শেষে বাসায় ফেরার সময়ও একই রাস্তা ব্যবহার করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ আগে থেকেই অবস্থান নেন তাদের পথ রুখতে। বিএনপি সমর্থক সন্দেহ হলেই শুরু করেন মারধর। যে কোনো মোটরসাইকেল গেলেই থামিয়ে চেক করা হয় মোবাইল ফোন। বিএনপি সম্পর্কিত কিছু পেলেই করা হয় মারধর। রোডমার্চ উপলক্ষে তৈরি করা টি-শার্ট, ক্যাপ ও প্ল্যাকার্ড দেখলেও মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে মারধর করা হয়। পরে টি-শার্ট পোড়ানো হয়। তবে অনেক সাধারণ যাত্রীও এ সময় ভোগান্তির শিকার হন বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আতিকুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের একটি গাড়ির বহর বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে প্রবেশ করলে ওতপেতে থাকা ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় চার থেকে পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক শাজাহান শাওনসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়।

এ বিষয়ে বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান বলেন, বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে এসে সরকারবিরোধী উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করে। তারা ক্যাম্পাসের কেউ না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা সেটি অবশ্যই প্রতিহত করব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মোটরসাইকেল ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে শোডাউন দেয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হন। পরে তারা তাদের বাধা দেন। এতে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

মহাসড়কে যানজট, ভোগান্তি: রোডমার্চকে ঘিরে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড রোদ আর অসহনীয় গরমে এ যানজটে রীতিমতো ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও সাধারণ যাত্রীরা।

‘বিচার মানি; কিন্তু তালগাছ আ.লীগের’: রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের লতিফাবাদ চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন ময়দানে। এখানে রাত ৯টার দিকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল মঈন খান বলেন, ১৯৯১ সালে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের অধীনে একটি নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছিল। আমার প্রশ্ন হলো, সেই সংবিধানে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। ছিল না। তাহলে আজকের সরকার, আওয়ামী লীগ সরকার, বাকশাল সরকার কীভাবে সংবিধানে না থাকা সত্ত্বেও সেই সময় একানব্বই সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। সোজা বাংলায় সাধারণ মানুষের ভাষায় বলব, ১৯৯১ সালে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা হালাল হয়ে থাকে, তাহলে আজ ২০২৩ সালে কেন হারাম হয়ে গেল। আরও বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। আসলে এ সরকারের কাছে যুক্তিতর্ক দিয়ে কোনো লাভ নেই। গ্রামে একটা কথা আছে, যুক্তি মানি; কিন্তু তালগাছ আওয়ামী লীগের।

সমাপনী সমাবেশে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরিফুল আলমে সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফজলুর রহমান ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। আরও বক্তব্য দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ত্রিশাল, গৌরীপুর, বাকৃবি প্রতিনিধি)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন : শামীম ওসমানকে শোকজ

ইসির সিদ্ধান্তে আ.লীগের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে : ওবায়দুল কাদের

ফার্মগেটে জোড়া ককটেল বিস্ফোরণ

মায়ের হত্যার বিচার করতে, বিপাশা হতে চায় পুলিশ

বিশিষ্টজনদের মতামত / গণতন্ত্র রক্ষায় নির্বাচনের বিকল্প নেই

ভার্চুয়াল বৈঠক / ইইউকে নির্বাচন বয়কটের কারণ জানাল বিএনপি 

ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি

যে কারণে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শেষ করে দিল ইসরায়েল

‘নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের নামে প্রজন্ম ধ্বংসের নীলনকশা করেছে সরকার’

ভূমিকম্প আতঙ্কে দোতলা থেকে লাফ দিয়ে দুই শিক্ষার্থী আহত

১০

জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় সর্বজনীন আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার আহ্বান তথ্যমন্ত্রীর

১১

ইউএনওর বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁসের অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর 

১২

যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল ইরাক

১৩

অলিম্পিকে ৪ ডিসিপ্লিনে আবেদন করবে বাংলাদেশ

১৪

সমমনা জোট থেকে মাইনরিটি জনতা পার্টিকে বহিষ্কার

১৫

আ.লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন যারা

১৬

মোতালেবের সমর্থকদের হুমকি-ধমকি, দুই থানায় জিডি

১৭

নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে নকল, কারাগারে ২

১৮

ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমল, হাসপাতালে ভর্তি ৬০৫

১৯

ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা আওয়ামী লীগের 

২০
X