কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রয়াত সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হক ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও পরিচিত। তার মৃত্যুর পর চার ছেলে ও এক মেয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে ১২ জুন অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে তার বড় ছেলে মাসেদুল হক রাশেদ দলের বাইরে গিয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ কারণে দলের বিভিন্ন পদে থাকা পরিবারটির সব সদস্যকে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন। মাসেদুল হক রাশেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তার ছোট ভাই শহিদুল হক সোহেল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, ছোট বোন তাহমিনা চৌধুরী লুনা যুব মহিলা লীগের সভাপতি এবং কায়সারুল হক জুয়েল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় মাসেদুল হক রাশেদকে বহিষ্কার করা হয়। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আঞ্চলিকতাসহ নানা কারণে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থীর চেয়ে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন মাসেদুল হক রাশেদ। দিন দিন এ জনপ্রিয়তা আরও বাড়ছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাশেদকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব থেকে বহিষ্কার করা হয় রাশেদের ছোট ভাই কায়সারুল হক জুয়েলকে। জুয়েল কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। যদিও জুয়েলের দাবি, আহ্বায়কের অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এর আগেই পদত্যাগ করেছেন তিনি। এর কয়েকদিন যেতে না যেতে বহিষ্কার করা হয় জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ছোট বোন তাহমিনা চৌধুরী লুনাকে। জুয়েলের মতো লুনাও দাবি করেছেন, পারিবারিক কারণে দলের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে আবেদন দিয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ গত ৮ জুন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় রাশেদের ছোট ভাই শহিদুল হক সোহেলকে। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। সোহেলের দাবি, মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে মাঠে ছিলেন তিনি। দলের এমন সিদ্ধান্তে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। সোহেলকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে মোজাম্মেল পরিবারকে পদবিশূন্য করা হয়েছে। এর ফলে কক্সবাজার আওয়ামী রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। সোহেল বলেন, আমার ভাই নাগরিক কমিটির ব্যানারে ভোট করলেও আমি সব সময় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছি। মিটিং, মিছিল গণসংযোগসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছি। তার পরও আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পদবি হারালেও রাশেদের জনপ্রিয়তায় কোনো ভাটা পড়েনি। উল্টো তাদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বাড়ছে। নাগরিক কমিটির প্রার্থী রাশেদ বলেন, জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থী হয়েছি। জনগণই আমাদের শক্তি। মোজাম্মেল পরিবার সব সময় মানুষের পক্ষে ছিল, আছে এবং থাকবে।
মন্তব্য করুন