মাত্র একটি কম্পিউটার নিয়ে ড্রয়িংরুমে সাবিনা আক্তারের ফ্রিল্যান্সিং শুরু। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কাজের চাহিদা। সেখান থেকেই গড়ে ওঠে প্রাতিষ্ঠানিক ফ্রিল্যান্সিং। এর মধ্যে তাকে করতে হয়েছে অনেক সংগ্রাম। এখন তিনি দেশের অন্যতম সেরা আইটি ফার্ম বিডিকলিং আইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান। প্রায় চার শতাধিক তরুণ-তরুণী কাজ করছেন তারই হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানে। মাস শেষে প্রায় দেড় কোটি টাকার বেশি বেতন দিচ্ছেন কর্মীদের। স্বপ্ন দেখছেন ফিল্যান্সিংকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার। নিজের আইটি খাতে ব্যবস্থা করবেন পাঁচ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের।
ফিল্যান্সিংয়ে সফল হয়ে থেমে থাকেননি সাবিনা। নিজ প্রতিষ্ঠানে তরুণ-তরুণীদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ফিল্যান্সিং শেখার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। ফ্রিল্যান্সিংকে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। সেখানে ফিল্যান্সিং শিক্ষাকে আরও সহজলভ্য করে যুবসমাজকে বেকারত্ব নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে চান তিনি।
সাবিনা বলেন, দেশে কর্মক্ষম মানুষের তুলনায় সরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। কর্মক্ষম প্রতিটি মানুষ দেশের জন্য মূল্যবান মানবসম্পদ। শিক্ষিত বেকার মানবসম্পদকে যদি আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি, তারাই হয়তো দেশের অর্থনীতিতে বড় একটি ভূমিকা রাখবে। আমি মনে করি, দেশের বেকারত্ব রোধে ফ্রিল্যান্সিং একটি বড় উপকরণ হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে এই বেকার যুবসমাজকে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে এমন একটি প্রশিক্ষিত যুবসমাজ গড়তে চেষ্টা করছি, কিন্তু এ কাজ আমাদের একার পক্ষে করা খুবই কঠিন। সরকার যদি আমাদের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেয়, অবশ্যই আমরা ভালো কিছু করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, আমি নারী উন্নয়নে বিশ্বাসী। নারী ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই নারীদের আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং নারীদের জন্য বিশাল সুযোগ। আমাদের প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আমরা রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের এখানে নারীদের চাকরিতে আমরা ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছি। এ ছাড়া তাদের জন্য অফিসে আলাদা খাবারের জায়গা, নামাজের জায়গাসহ আলাদা একটি কমনরুম রয়েছে। চাকরির ক্ষেত্রে যেমন নারীরা এখানে আলাদা ফ্যাসিলিটি পায়, আমাদের ইন্টার্নশিপেও তাদের আমরা বিশেষ সুযোগ দিয়ে থাকি।
তিনি জানান, দেশে আইটি খাতে পাঁচ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান
করতে চাই। রাজধানীর বনশ্রীতে আমাদের দুটি অফিস, আমরা শিগগিরই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েকটি অফিস শুরু করতে যাচ্ছি। একপর্যায়ে আমাদের পরিকল্পনা সারা দেশেই আমরা বিডিকলিং ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরাও দেশের ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে শক্ত একটা অবস্থান গড়তে পারব, সেইসঙ্গে বড় একটা সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান গড়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারব।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হলেও বিডিকলিং আইটি লিমিটেডের এ অবস্থায় আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে তার স্বামী মোহাম্মদ মনির হোসেনের, বললেন সাবিনা আক্তার। স্বামীর কাছ থেকে যেমন আইডিয়া পেয়েছেন, বাস্তবায়নেও সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন।
সাবিনা আক্তারের মতে, অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করছে। নতুন করে তরুণ সমাজের মধ্যেও আগ্রহবোধ কাজ করছে। তবে আগ্রহ এবং কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা দেখি যে, তারা নানা বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কিছু অভাববোধও আমরা দেখে থাকি। প্রথমত হলো, আন্তর্জাতিক মার্কেটে কাজ করতে হলে যে স্কিলের (দক্ষতা) চাহিদা রয়েছে, আমাদের দেশের ছেলেদের মধ্যে ওই লেভেলের দক্ষতা অর্জন করাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয়ত হলো, আন্তর্জাতিক মার্কেট থেকে যে কোনো কাজ পেতে বা সম্পন্ন করে ডেলিভারি দিতে যোগাযোগের মাধ্যম হলো ইংরেজি। কিন্তু এ ইংরেজিতেই আমাদের দেশের মানুষের দুর্বলতা আছে। আরেকটি সমস্যা হলো, আমাদের মধ্যে প্রফেশনালিজমে বেশ দুর্বলতা আছে। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে যখন আমরা প্রোফাইলগুলো দেখি, আমরাই তেমন একটা সন্তুষ্ট হতে পারি না। এ বিষয়গুলো যদি আমরা সমাধান করতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের তরুণদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্তব্য করুন