স্বপ্নের মতো শুরু ‘হ্যারি পটার’ সিরিজ দিয়ে। শৈশবেই দুনিয়া জুড়ে খ্যাতির শীর্ষে। অভিনয় আর নানা সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত থেকে আলোচনার তুঙ্গে ছিলেন এমা ওয়াটসন। কিন্তু হঠাৎ করেই অভিনয় থেকে একদম উধাও। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনয় থেকে বিরতি নিয়ে কথা বলে আবারও আলোচনায় জনপ্রিয় তারকা এমা।
বলেছেন, খুব একটা খুশি ছিলাম না। সত্যি বলতে কি, তখন নিজেকে খাঁচাবন্দি মনে হতো। নিজের কথার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অকপটে। যার ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই; তা করা সামাজিক মূল্যায়নে কারও ব্র্যান্ডের পোশাক বিবেচ্য নয়। কারণ তাকে তার পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে হয়। মানুষের মূল্যায়ন তার মূল্যবোধে, আচরণে। সাফল্য আর ব্যর্থতা আপেক্ষিক, যা সময়ের আর ভাগ্যের ওপর ন্যস্ত। মানুষকে বিবেচনা করতে হবে তার পারিপার্শ্বিক সবকিছুর ওপর ভিত্তি করে।
বিশ্বের সিনে দুনিয়ায় ‘এমা’ নামেই খ্যাত। পুরো নাম এমা শার্লট ডিউয়ার ওয়াটসন। জন্ম ১৯৯০ সালের ১৫ এপ্রিল। জন্ম ঐতিহ্যের শহর প্যারিসে। বয়স তখন সবে ছয়। তখন থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন বুনতেন। অদম্য আগ্রহের কারণেই এমা স্টেজকোচ থিয়েটার আর্টসের অক্সফোর্ড শাখায় সংগীত, নাচ ও অভিনয়ে প্রশিক্ষণ নেন।
বাবা জ্যাকলিন লুসবি। মা ক্রিস ওয়াটসন। ব্যক্তিজীবনে পেশায় দুজনই ব্রিটিশ আইনজীবী। তবে ওয়াটসনের বাবা-মা দুজনই আজ দুই ঘরের বাসিন্দা। তাই এমা বেড়ে উঠেছেন অনেকটা যাযাবরের মতো করেই। যাকে বলে একাই লড়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া।
মাত্র ১০ বছর বয়সেই তিনি স্টেজকোচের বেশকটি নাটকে অভিনয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। কিন্তু হ্যারি পটার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগে তিনি কখনো পেশাগত অভিনয় করেননি। সাক্ষাৎকারে এমা বলেছিলেন, হ্যারি পটার চলচ্চিত্র সিরিজের ধারাবাহিকতা নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না। আর তেমন ধারণা থাকাও ছিল বিস্ময়কর। কারণ ইতিহাসকে খুব বেশি আগে থেকে অনুমান করা সহজ নয়।
ব্যক্তিজীবনে ওয়াটসন দ্য ড্রাগন স্কুলে ২০০৩ সাল পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। পরে হেডিংটন স্কুলে ভর্তি হন। এটি শুধু ছাত্রীদের জন্য পরিচালিত একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কুল। স্কুলটি অক্সফোর্ডে অবস্থিত। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরচেস্টার কলেজে অস্থায়ী শিক্ষার্থী হয়ে অধ্যয়ন করেন। ২০১৪ সালে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক করেন।
অভিনয়ের পাশাপশি ওয়াটসন দিনে পাঁচ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন। অভিনয়ের বাড়তি চাপ থাকলেও বরাবরই পরীক্ষায় ভালো ফল করেছেন। ২০০৬ সালে জিসিএসই পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষায় দশটি পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে আটটিতে ‘এ প্লাস’ আর বাকি দুটিতে এ গ্রেড অর্জন করেন। ২০০৮ সালের এ লেভেল পরীক্ষায় ওয়াটসন ইংরেজি সাহিত্য, ভূগোল ও মানবিকে এ গ্রেড অর্জন করেন।
বিদ্যালয় ছাড়ার পর ওয়াটসন ২০০৯ সালে ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস’-এ অভিনয়ের জন্য এক বছরের জন্য শিক্ষা বিরতি নিয়েছিলেন। সময় চক্রে এরপর আসে ২০০৭ সালের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। হ্যারি পটার সিরিজে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য এমা ১ কোটিরও বেশি পাউন্ড আয় করেন। তিনি অর্থের জন্য অভিনয় করবেন না বলেও সাফ মন্তব্য করে সমালোচনা তোপে পড়েছিলেন।
২০০৯ সালে বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস এমাকে বিশ্বের ষষ্ঠ মূল্যবান তরুণ তারকার মর্যাদা দেয়। ২০০৯ এমার আয় ১ কোটি ৯০ লাখ ডলারে পৌঁছায়। ২০১০ সালে এমা হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের নারী তারকা বনে যান। কিন্তু উচ্চশিক্ষার মোহ
ছেড়ে অভিনেত্রী হওয়ার ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এমার মতে, শিক্ষাজীবন আমাকে বন্ধুদের সান্নিধ্যে রাখে। বাস্তবতার খুব কাছাকাছি করে, যা হয়তো অনেকেই অনুধাবন করতে পারি না।
এরপর একে একে শুধুই ইতিহাসের পাতায় নিজেকে বিনির্মাণ করেছেন এমা ওয়াটসন। অর্থ আর অল্প বয়সেই সেলিব্রেটি খ্যাতি পেলেও লেখাপড়ায় টেবিল থেকে কখনোই মন উঠিয়ে নেননি এ তরুণ বিশ্বতারকা। চরিত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করেছেন নিখুঁতভাবে। তাই ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের অপেক্ষায়
আছেন এমা।
মন্তব্য করুন