বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিলেন তনিমা আফরিন। এইচএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলেও আর লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। অধিকাংশ সময়ই কেটেছে স্বামীর কর্মস্থলে। নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ছাদবাগান।
লোহার পাত দিয়ে র্যাক তৈরি করে তার ওপর রাখা সারি সারি টব। সরাসরি ছাদের ওপরও রাখা আছে অনেক টব। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে পাকা হাউস তৈরি করে মাটি দিয়ে লাগানো হয়েছে গাছ। শজিনা, পুঁইশাক, বেগুন, উচ্ছে, কলমি, সবুজ, লালশাক, ডাঁটা, ফুলকপির যত্ন করছিলেন তিনি। ছাদজুড়ে রয়েছে নানা ফলের গাছ।
বছর তিনেক আগে নড়াইল শহরের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের খেলার মাঠের দক্ষিণ দিকে রাস্তার পাশে চারতলা ভবন। এ বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন বিশাল আকৃতির ছাদবাগান। এ শখের বাগান থেকে প্রতিবছর রোজগার করছেন লক্ষাধিক টাকা। পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। তনিমার ছাদবাগান দেখে নড়াইল শহরে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় শতাধিক ছাদবাগান।
তনিমা আফরিন বলেন, আমার মা তহমিনা হুসাইন ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। ছোটবেলা থেকে মাকে দেখেছি নানা ফল ও ফুলের গাছ বাড়িতে লাগাতে। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে মা নিজের হাতে গাছের পরিচর্যা করতেন। নড়াইল শহরে বাড়ি করে ছাদবাগানের জন্য স্বামীর কর্মস্থল থেকে গাছসহ ৩৮টি টব নিয়ে এসেছিলাম। সেই থেকে ছাদবাগান করা। অল্প অল্প করে গড়ে তুলেছি বিশাল আকৃতির এ বাগান।
তিনি আরও বলেন, বাগান সমৃদ্ধ করতে দেশের নামকরা নার্সারিগুলোতে গিয়েছি। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ছাদবাগান দেখেছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা এনেছি।
ছাদবাগান-সংক্রান্ত চারটি ফেসবুক গ্রুপ চালান তনিমা। যুক্ত আছেন এ সংক্রান্ত অর্ধশতাধিক ফেসবুক গ্রুপে। এর মাধ্যমে চারা সংগ্রহ করেন, পরিচর্যা শেখেন, অন্যদের পরামর্শ দেন। বিভিন্ন জেলায় চারা বাজারজাত করেন এ ফেসবুকের মাধ্যমেই।
শহরের মহিষখোলা এলাকার ছাদবাগান করেছেন মাইমুনা রুনা। তিনি বলেন, তনিমার বাগান দেখে আমিসহ শহরের অন্যরাও ছাদবাগান করেছি। নিজের বানানো ছাদবাগান থেকে প্রাকৃতিক বিষমুক্ত ফল পাচ্ছি। আমার বাগানে অন্তত ১২ প্রকার ফল আছে।
শহরের আলাদাৎপুর এলাকায় নিজের ছাদবাগানে কাজ করছিলেন রুমানা পারভীন কেয়া। তিনি বলছিলেন, তনিমার ছাদবাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেও করেছি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কুড়িগ্রাম এলাকার নাজমুল হক লিজা বলেন, শখের বসে বাসার ছাদে ড্রাগনের বাগান করেছি। বাগান থেকে ড্রাগন ফল এবং চারা বিক্রি করে আয়ের সুযোগ রয়েছে।
নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রোকনুজ্জামান বলেন, তনিমা আফরিন একজন গৃহিণী হয়েও একক প্রচেষ্টায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল ও নানা জাতের গাছ সংগ্রহ করেছেন। তা পরিচর্যা করে সফল হয়েছেন। ছাদে এত ধরনের ফসল আবাদ করা যায়, তার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তিনি। এভাবে দিন দিন জেলায় ছাদবাগানের সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন