মেট্রোরেল বদলে দিয়েছে ঢাকাবাসীর জীবন। শহরে এখন এটি স্বপ্নবাহনে রূপ নিয়েছে। নগর যোগাযোগে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে মেট্রোরেল। যানজটের শহরে এ যেন স্বস্তির সুবাতাস।
সামিয়াদের বাসা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। সে উত্তরার একটি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। একসময় তাকে নিয়মিত কলেজে পৌঁছে দিতেন মা। আগারগাঁও থেকে উত্তরা যাতায়াতে তাদের বেশ ভোগান্তি হতো। তা ছাড়া খরচেরও বিষয় ছিল। সব চিন্তা করে সামিয়াকে উত্তরায় একটি হোস্টেলে রেখে পড়ালেখা করানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। এজন্য প্রতি মাসে হোস্টেল ভাড়া, খাওয়া, হাত খরচ, মোবাইল বিল ও তাকে দেখতে যাওয়া-আসাসহ বেশ ভালো অঙ্কের টাকা ব্যয় হতো। তবে মেট্রোরেল চালু হওয়ায় সে এখন মায়ের কাছেই থাকতে পারছে। কারণ আগারগাঁও থেকে উত্তরা যেতে লাগছে মাত্র ২০ মিনিট। ফলে যাওয়া-আসায় আর আগের মতো ঝক্কি-ঝামেলা নেই। মেট্রোরেল এভাবে অনেকের খরচ কমিয়ে দিয়েছে।
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত সানজিদা ইসলামের বাসা আগারগাঁওয়ে। তার কর্মস্থল মিরপুরের পল্লবীতে মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে। আগে তিনি ভেঙে ভেঙে ব্যাংকে যেতেন। এজন্য লাগত ঘণ্টাখানেকের মতো। মেট্রোরেল চালু হওয়ায় অনেক সুবিধা হচ্ছে তার। এখন আর তাকে বাসে চড়ার কথা চিন্তা করতে হয় না। বাসে নারীদের যাতায়াতে হয়রানির ঘটনা হরহামেশাই পাওয়া যায়। এখন ঘড়ি ধরে বাসা থেকে বের হন তিনি। আগারগাঁও থেকে ২০ মিনিটে দিয়াবাড়ী পৌঁছে সময়মতো অফিসে যান তিনি। কম সময়ের পাশাপাশি খরচ কমেছে। মেট্রোরেল এভাবে আগারগাঁও থেকে উত্তরায় অফিসে যাতায়াত করা অনেক নারীর জন্য স্বস্তি এনে দিয়েছে। যানজটের দুর্ভোগ এড়াতে পারায় খুশি তার মতো ঢাকাবাসী অনেকে।
মেট্রোরেলে চলাচলকারী বেশিরভাগ যাত্রী বেসরকারি কর্মজীবী। নগরে এ গণপরিবহন থাকায় উত্তরা ও মিরপুরে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন মোড় এসেছে। অনেকে উত্তরা, টঙ্গী, আবদুল্লাহপুর থেকে উত্তরা উত্তর মেট্রোরেল স্টেশনে এসে আগারগাঁওয়ে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী, নিরাপত্তারক্ষী, শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মেট্রোরেলের যাত্রী।
ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) পরিচালিত উত্তরা-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো হলো—উত্তরা উত্তর, উত্তরা দক্ষিণ, উত্তরা সেন্টার, পল্লবী, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশন। মঙ্গলবার সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৬০ টাকা ভাড়া। একটি টিকিট এক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী। এ সময়ের মধ্যে বের না হলে অর্থদণ্ড হবে।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মেট্রোরেল চালু হয়। আগামী ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর কথা রয়েছে। আর মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত অংশ চালু হতে পারে ২০২৫ সাল নাগাদ। তখন প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী হিসাব করে দিনে ১৬ ঘণ্টায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করবে বলে আশা ডিএমটিসিএলের।
চলাচলে খেয়াল
মেট্রোরেল পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে চলাচলে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা যাত্রীদের দায়িত্ব। মেশিনে টিকিট কেনার জন্য ১০০ টাকা কিংবা এর চেয়ে ছোট নোট দিলে ভালো। প্রতিদিন টিকিট কেনার পরিবর্তে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে ৫০০ টাকায় এমআরটি পাস (দীর্ঘমেয়াদি টিকিট) পাওয়া যায়। স্টেশনের প্রবেশপথে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হয়। প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোরের ওপর দিয়ে মাথা বাড়িয়ে মেট্রোরেল দেখার চেষ্টা করবেন না। ট্রেনের দরজা বন্ধ হওয়ার সময় ঢোকা কিংবা বেরোনো ঠিক নয়। বগির দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো যাবে না। ওঠানামার সময় হুড়োহুড়ি করলে বিপদ হতে পারে। আগে নামতে দিন, পরে উঠুন। বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত স্থান ছেড়ে দিতে হবে। মেট্রোরেল স্টেশনের লিফটে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিন।
মডেল : মারশিয়া শাওন ছবি : রনি বাউল
মন্তব্য করুন