বিশ্বের দীর্ঘতম ও অখণ্ডিত ১২০ কিলোমিটারজুড়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের একদিকে পাহাড়ে ঘেরা সবুজ প্রকৃতি, অন্যদিকে বিস্তীর্ণ সমুদ্র। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমুদ্রসৈকতের চেয়ে কক্সবাজারের বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হওয়ায় এখানে পর্যটকের সমাগম বেশি এবং এর রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ ও মহাপরিকল্পনা হাতে নিলেও সম্ভাবনাময় এ খাতটি এখনো অবহেলিত। কক্সবাজারে সৌন্দর্যের নানা উপাদান কাজে লাগানো যাচ্ছে না। উল্টো অপরিকল্পিত নগরায়ন, পাহাড় কাটা, নদী দখল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে সৌন্দর্যের জৌলুস হারাচ্ছে কক্সবাজার। এরই মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা। রোহিঙ্গারাই এখন পর্যটন শিল্পের মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে প্রত্যাবাসন বিলম্ব হওয়ায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। এসব রোহিঙ্গা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, অবৈধ পাহাড় কাটা, বনাঞ্চল নিধন, সরকারি খাসভূমি দখল, অপরিকল্পিত ইমারত তৈরির ফলে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ব্যবসার নামে যত্রতত্র নির্মাণ করা হচ্ছে ইট-পাথরের স্থাপনা। সৈকতে গড়ে তোলা হয়েছে ঝুপড়ি দোকান। এতে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, পর্যটন শিল্পকে উন্নত করা গেলে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে, তেমনি বেকার সমস্যাও দূর হবে। একই সঙ্গে বিদেশি পর্যটকদের কক্সবাজারের প্রতি আকৃষ্ট করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে কক্সবাজারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব।
হোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তা ও আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের সমন্বয়ক মো. কলিম উল্লাহ বলেন, এখন পর্যটন শিল্পের অন্যতম সমস্যা রোহিঙ্গা, মাদক। একই সঙ্গে যেভাবে পাহাড় ও পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে মরুভূমি হবে কক্সবাজার। কোনো পর্যটক তখন মরুভূমি দেখতে কক্সবাজার আসবেন না।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরা রয়েছে। তাদের খারাপ ব্যবহার, অশালীন আচরণ, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে রিকশা ভাড়া বেশি আদায়সহ নানা কারণে পর্যটকরা বিরক্ত হচ্ছে। বারবার অভিযোগ করার পরও সঠিক পদক্ষেপ নিতে কেউ এগিয়ে আসছে না।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার সেহরিন আক্তার বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. শাহিন ইমরান বলেন, পর্যটন শিল্প বিকাশে সবার সমন্বয়ে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।