ধ্রুব নীল
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:১২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গল্প

পবন ভূত

আনন্দপুরের পবন ভূতের কথা কে না জানে। গ্রামের এমন কেউ নেই যে ভূতটাকে দেখেনি। আর এতেই বিপত্তি। সবাই চেনে-জানে বলে কেউ পবনকে ভয় পায় না। এমনকি গভীর রাতে হারুমাঝি যখন বনের রাস্তা ধরে বাড়ি ফেরে তখন বাঁশঝাড়ের ডগায় পবন ভূতকে পা দোলাতে দেখেও সে ভয় পায় না। উল্টো জানতে চায়, ‘ও পবন মিয়া, রাইতে কী খাইসো? কালিপেঁচার হাড্ডি নাকি শকুনের ডিম?’

এ নিয়ে পবনের মন খারাপ। ভূত হয়ে ভয় দেখাতে না পারলে ভূতজীবনই বৃথা। কালেভদ্রে অন্য গ্রামের কেউ যদি সন্ধ্যার পর এদিকে আসে তাহলে ঘূর্ণি বাতাস সেজে তাকে ভয় দেখাতে পারে পবন। এর বেশি কিছু পারেও না। ঘাড় মটকানো বা কাউকে তুলে মগডালে রেখে দেওয়ার ক্ষমতা তার নেই। তার নামই হলো পবন। পবন মানে বাতাস। বাতাস হয়ে কতটুকুই বা করতে পারবে।

একদিন রাত করে আমড়া গাছে ঢিল ছুড়তে বের হয়েছিল কিশোর রতন। পবনকে দেখে এগিয়ে এলো। ঝাড়ের তলায় চুপচাপ বসে আছে পবন।

‘পবন মিয়া, তুমি তো দিন দিন বেকার হইয়া যাইতাস। কাজ কাম নাই। কেউ ডরায় না।’

‘ঠিক রতন। একদম ঠিক। আমার কিছু ভালো লাগে না। ওই দিন বিলাসপুর গ্রামের এক মাস্টারকে ভয় দেখাইতে গেলাম, উনি কইলেন, আরে তুমি তো পবন ভূত। তোমারে তো চিনি। তুমি এমন কাতুকুতু দিতাসো কেন! কী শরমের কথা কও তো রতন মিয়া।’

‘হুম। অন্য গ্রামের লোকজনও তোমাকে চিনে ফেলছে। বিরাট সমস্যা।’

‘তুমি এত রাইতে কই যাও?’

‘কালাখালে মাছ ধরার চাঁই বসাইছিলাম। দেখি কিছু ধরা পড়সে কিনা। থাকলে তোমারে দুই-চারটা পুঁটি দিয়া যাব।’

‘তোমার মায়েরে কইও আমার জন্য ঝিংগা পোড়া ছাই যেন রাখে। ওই ছাইয়ের আচার খুব স্বাদের।’

‘তার আগে তোমারে একটা বুদ্ধি দিয়া যাই।’

এই বলে পবন ভূতের কানে কানে কী যেন বলল রতন। চিন্তায় পড়ে গেল পবন। তবে শেষে ঠিক করল রতনের কথামতোই কাজ করবে।

পর দিন থেকে পবন ভূতকে আনন্দপুরে আর দেখা গেল না। কোথাও নেই। বাঁশঝাড়, তেঁতুল তলা, শ্যাওড়া গাছের কোটর, বেতঝোপের জংলা, মজা পুকুরের পাড়ের নিচে থাকা মোটা গাছের গুঁড়ি; কোথাও নেই পবন ভূত। সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। গ্রামে সভা বসল। সবার এক কথা, ভূত আবার গায়েব হবে কী কারণে। ভূতকে তো ভূতে ধরার কথা নয়।

দিন গেল সপ্তাহ গেল, মাস গেল। শোঁ করে বাতাস এলেই লোকজন ডাকাডাকি শুরু করে, কে রে! ও পবন ফিরে এলি নাকি! নাহ, বাতাসটা সাঁ সাঁ হুশ হাশ করে চলে যায়। কোনো কথা বলে না। রাতে গাছের পাতা নড়ে উঠলেও মানুষ চমকে ওঠে, কে পবন? নাহ। বাতাস নীরব।

কয়েক মাস পরের কথা। শীত পড়া শুরু করেছে। এক দুপুরে ছাতা মাথায় বাজার থেকে ফিরছিলেন মিয়াজি বাড়ির মিজান তালুকদার। দুই দিন পর মেয়ের বিয়ে। বিয়ের বাজার বলে কথা। তাই দরকার না হলেও ছাতা নিয়ে ঘোরেন। ভরদুপুর হলেও রোদের তেজ নেই। হাঁটছিলেন জমির আইল ধরে। আচমকা শোঁ করে বাতাস এসে তার হাতের ছাতাটাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল। ঠিক যেন ঘুড়ির মতো। হা করে উড়ন্ত ছাতার তাকিয়ে রইলেন মিজান সাহেব। ছাতাটা আর নিচে নামলোই না!

বিকেলে গরুকে খাবার দিচ্ছিলেন রানী তরফদার। হুট করে গরুটা লাফালাফি শুরু করল। রানী তরফদারও টের পেলেন গরুর খাবারের পানি তির তির করে কাঁপছে। বলা নেই কওয়া নেই বাতাস এসে খড়গুলো সব উড়িয়ে নিয়ে গেল।

রাতের আড্ডা শেষে বনের জংলা পথে সাইকেল চালিয়ে ফিরছিলেন কালিরহাট হাইস্কুলের আজিজ স্যার। বাঁশঝাড়ের নিচে আসতেই বাতাসের ধাক্কায় সাইকেল গেল পড়ে। ঘুটঘুটে রাতে হাতের টর্চটা আর খুঁজে পেলেন না। ‘কে! কে! পবন নাকি!’

ভয়ে ভয়ে বললেন আজিজ মাস্টার। সাড়া নেই কারও। বাতাসই হবে হয়তো। এমনটা ভেবে কোনোমতে সাইকেল আঁকড়ে ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরলেন তিনি।

রাতে ঘুমুচ্ছিল না ছোট্ট তিনু। মা বারবার ভয় দেখিয়ে বলছেন, ঘুমা! না হয় ভূত আসবে। এমন সময় আচমকা দমকা বাতাসে খটাশ করে লেগে গেল জানালা। ভয় পেয়ে তিনুকে কোলে নিয়ে পাশের রুমে ছুট লাগালেন মা নিজেই।

গ্রামে মাঝে মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটতে লাগল। তবে কেউ কাউকে সেটা বলল না। কেন বলল না? কারণ সবাই জানে গ্রামে এখন পবন ভূত থাকে না। ভূত ছাড়া ভয় পেয়েছে শুনলে সবাই হাসাহাসি করবে। মিজান সাহেব যেমন বাড়িতে বলতে পারলেন না যে তার শক্তপোক্ত ছাতাটা ঘুড়ির মতো উড়িয়ে নিয়ে গেছে বাতাস, তেমনি গ্রামের একজন ব্যবসায়ীও বলতে পারলেন না যে ঘূর্ণি বাতাসে পড়ে তিনি টানা দশ সেকেন্ড শূন্যে ভেসে ছিলেন।

মনে মনে সবাই এই বাতাসের ভয়ে কাবু। ঘটনাগুলো সেভাবে সারা গ্রামে ছড়ালও না। দুয়েকজন কানাকানি কলল শুধু। তবে একজন ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে তার বুদ্ধিতে কাজ হয়েছে। গ্রামের লোকজন এবার সত্যি সত্যি ভূতের ভয় পেতে শুরু করেছে। কে বুঝতে পেরেছে? নাম তার রতন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৭ বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল

নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করতে সবাইকে কাজ করতে হবে : তথ্যমন্ত্রী

জন্মের আগেই নবজাতক বিক্রি, অতঃপর...

ফরিদপুর-৩ / নৌকার প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিলে এ. কে. আজাদের আপিল

একাত্তরে গণহত্যা / জাতিসংঘের স্বীকৃতি দাবি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১০০০ প্রতিনিধির 

নবম গ্রেডে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি

নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকে গুলি

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের অপরিহার্যতা বিষয়ে সেমিনার

স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি, নৈশপ্রহরীকে হত্যা

যবিপ্রবিতে চাকরিপ্রার্থীদের আটকে মারধর, ৬ জনের নামে মামলা

১০

ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৫১

১১

রাজবাড়ীতে ট্রেন আটকে দিল এলাকাবাসী

১২

জলাশয় ভরাট করে বিএডিসির ল্যাব নির্মাণ বন্ধে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি

১৩

শান্তিনগর, শাহজাহানপুর ও আরামবাগে বাহাউদ্দিন নাছিমের মতবিনিময়

১৪

শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা আ.লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি : নাছিম

১৫

একই সিনেমায় অনুপম-পরমব্রত!

১৬

ইসরায়েলকে সমর্থন করার ফল ১১ কোটি টাকা লোকসান

১৭

মানবাধিকার দিবসে দেশে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চক্রান্ত হচ্ছে : তথ্যমন্ত্রী

১৮

সৌদি আরবে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, সব আরোহী নিহত

১৯

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৩৩০ অভিবাসী আটক

২০
X