মাইনসের বাড়ি কাম কইর্যা একসের চাইল দিচে, আরেক বাড়ি থিক্যা এল্লা তেল চাইয়্যা আনচি, আরেকজন একটা পল্যা (ঝিঙে) দিচে। চাইল কয়ডা রানচি কিন্তু তা দিয়্যা অইবো না, তাই ১০ ট্যাহার আটা কিন্যা আইন্যা ফ্যান রাইনত্যাছি।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে হাঁট পাচিল এলাকায় যমুনা নদীর ওয়াপদা বাঁধের ঢালে একটি টঙ ঘরে আটা দিয়ে ফ্যান রান্না করছিলেন আর কথাগুলো বলছিলেন প্রায় আটচল্লিশ বছর বয়সী বিধবা মাজেদা খাতুন। পাশে তার ছোট ছোট তিন শিশু সন্তানকে ফ্যান খেতে দিয়েছেন। আরও তিন ছেলে তখনও বাড়ির বাইরে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাটপাচিল ওয়াপদা এলাকায় সরেজমিনে গেলে মাজেদা খাতুনের অসহায়ত্বের এমন চিত্র দেখা যায়।
মাজেদা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘আমার মতো কষ্ট দুনিয়াতে কারু নাই’। তিন বছর আগে সোয়ামী মইর্যা যায়, তার দুই বছর পর বসতবাড়ি যমুনার প্যাটে যায়। মাইনসের দ্বারে দ্বারে ৮ ছওয়াল-মেয়ে নিয়্যা ঘুরত্যাছি। এক বাড়িত আশ্রয় নিলে কয়েকদিন পর বাইর কইর্যা দেয়, আরেক বাড়ি যাই, এইভাবে ৭ বাড়িতে আশ্রয় নেই। এ্যাহন ওয়াপদার বাঁধে আরেকজন গরীব মানুষ টঙ ঘর তুইলচে, বেড়া দেয় নাই। ছওয়ালপাল নিয়্যা এহেনেই কষ্ট কইর্যা আচি। কয়দিন পর এহেন থিক্যাও চইল্যা যাওয়া লাইগবো। কোনে যামু তাও জানি না।
মাজেদা আরও বলেন, দুইডা মিয়্যা মাইনসের বাড়িত কামে থুছি। কিন্তু থাইকপ্যার চায় না। কাইন্দা-কাইন্দা বাড়িত আইসে, আবার মাইর্যা-ধইর্যা থুইয়্যা আসি। তারা ভাত-তরকারি দেয়ই, আবার ঈদ আইলে জাকাত দেয়, এসব দিয়্যাই চলি।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাট পাঁচিল গ্রামের পূর্ব পাড়ায় মাজেদা খাতুনের বাড়ি ছিল। সম্প্রতি যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। বছর তিনেক আগে তার স্বামী রমজান আলী মারা যাওয়ার পর থেকেই পরিবারটি কুল কিনারা হারিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। তাদের ৬ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে রমজান আলী বেঁচে থাকতেই বড় মেয়েটার বিয়ে হয়। বাকী ৮ সন্তান নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন মাজেদা। কোনো সন্তানকে স্কুলে দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। কোরবান আলী নামে ১৭ বছর বয়সী এক ছেলে থাকলেও সে সংসারের কোনো কাজ করে না। ১৪ বছর বয়সী আরেক ছেলে রতন যমুনায় নদীতে মৎস্যজীবীদের জাল ঠেলে ৫০ থেকে ১শ টাকা পায় আর অন্যের বাড়িতে কাজ করে মাজেদা খাতুন কখনো ৫০ টাকা, কখনো বা এক সের চাল পায় এ দিয়েই কোনোমতে সংসারের ৮ জনের মুখে আহার তুলে দেন।
স্থানীয় সমাজসেবক জয়নাল আবেদীন বাচ্চু বলেন, মাজেদা খাতুনসহ এখানকার বেশ কিছু পরিবার যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে কষ্টে দিনপাত করছে। তাদের সরকারি সহযোগিতা এবং একটি গুচ্ছগ্রাম করে দেওয়া প্রয়োজন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান আলী কালবেলাকে বলেন, মাজেদা খাতুন এখন খুব অসহায় অবস্থায় আছে। আগে ঝুরি বানিয়ে সংসার চালাতো। বর্তমানে যমুনার ভাঙনে ঝুরি বানানোর জায়গা বিলীন হয়ে যাওয়ায় তারা কোনো কাজ করতে পারছে না। এই মুহূর্তে ইউনিয়ন পরিষদে কোনো বরাদ্দ নেই, তাই আমরা তার জন্য কিছুই করতে পারছি না। বরাদ্দ এলে আমরা তাকে দেব।
মন্তব্য করুন