শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০১ পিএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘মাদক’ সন্দেহে স্কুল শিক্ষককে হাতকড়া পরাল পুলিশ

রৌমারী থানা, কুড়িগ্রাম। ছবি : সংগৃহীত
রৌমারী থানা, কুড়িগ্রাম। ছবি : সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককে অকারণে হাতকড়া পরানোর অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে। শিক্ষকের সঙ্গে থাকা ল্যাপটপের ব্যাগের ভেতর সিলিকা জেলের প্যাকেট ‘মাদক’ দাবি করে ওই শিক্ষককে হাতকড়া পরায় পুলিশ।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই শিক্ষক। এ ছাড়াও অভিযোগের অনুলিপি ইউএনও ও থানার ওসি বরাবর দাখিল করেন।

এর আগে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) উপজেলার সদর ইউনিয়নের খাটিয়ামারী-বামনের চর সড়কের বাঁশের সেতু সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পরে এ নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে ইউএনও’র কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষকের কাছে ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন ওসি ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট উপপরিদর্শক। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মইনুল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

পুলিশের হয়রানির শিকার ওই শিক্ষকের নাম মো. নজরুল ইসলাম। তিনি উপজেলার বেকরিবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। তার বাড়ি যাদুরচর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামে।

অভিযোগ পত্রে ওই শিক্ষক উল্লেখ করেছেন, সোমবার রৌমারী সদরের বামনের চর গ্রামে বোনের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে খাটিয়ামারী-বামনের চর সড়কের বাঁশের ব্রিজের কাছে সাদা পোশাকের কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার পথরোধ করেন। নিজের পরিচয় দিয়ে চলে যাওয়ার সময় সামন্য দূরত্বে তিন পুলিশ সদস্য আবার তার পথরোধ করেন।

তাদের সেকেন্ড অফিসার না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তারপর পেছনে থাকা আরও তিন পুলিশ সদস্য গিয়ে ওই শিক্ষকের সঙ্গে থাকা ল্যাপটপের ব্যাগ (ল্যাপটপ ছিল না) তল্লাশি করে। তারা ওই শিক্ষককে মাদক কারবারি বলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। বারবার শিক্ষক পরিচয় দিলেও তারা নিবৃত হননি। তাকে হাতকড়া পরান।

শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তারা আমার ল্যাপটপের ব্যাগ তল্লাশি করে একটি ফ্রিজিং তরকারির প্যাকেট ও একটি সিলিকা জেলের প্যাকেট পান। ল্যাপটপের ব্যাগ হওয়ায় সেখানে সিলিকা জেলের প্যাকেটটি ছিল। কিন্তু আমি সেটা জানতাম না। ওই প্যাকেটি তারা মাদকের প্যাকেট দাবি করে সঙ্গে সঙ্গে আমার হাতে হাতকড়া পরান। সবার সামনে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। আমি নিজের পরিচয় দিয়ে প্রতিবাদ করি।’

পুলিশের কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, ‘একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা থানায় ফোন দিয়ে আমাকে নেওয়ার জন্য গাড়ি ডাকেন। উপস্থিত লোকজনের সামনে পরিচয় দিয়ে নিজেকে নির্দোষ এবং মাদকের সঙ্গে জড়িত নই বলে দাবি করি। সবার সামনে প্যাকেটটি খোলার দাবি জানাই। তখন সেখানে থাকা থানার সেকেন্ড অফিসার প্যাকেটটি খোলেন। সিলিকা জেল নিশ্চিত হয়ে আমার হাতকড়া খুলে দিয়ে চলে যেতে বলেন। কিন্তু ততক্ষণে আমার যতটা সম্মানহানী হওয়ার হয়ে যাই।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সামাজিক মার্যাদাহানী করা হয়েছে। থানায় নিলে আমাকে মাদক কারবারি বানিয়ে চালান দেওয়া হতো। পুলিশ ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি হয়তো মিটে গেছে। কিন্তু আর কোনো শিক্ষক কিংবা নাগরিকদের যেন এভাবে হেনস্থা করা না হয়।’

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মঈনুল হোসেন বলেন, ‘পুলিশ বলেছে তাদের সোর্স ভুল তথ্য দিয়েছিল বলে এমন ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। ইউএনও স্যারের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান হয়েছে।’

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া থানার সেকেন্ড অফিসার ও উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদত হোসেন অভিযানে থাকার কথা স্বীকার করলেও শিক্ষককে হাতকড়া পরানোর প্রশ্নে ওসির সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করেন।

এদিকে শিক্ষকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকেলে ইউএনও’র কার্যালয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষককে নিয়ে বৈঠকে বসেন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, থানার ওসি ও দুই উপপরিদর্শক। বৈঠকে ওসি ও থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই শাহাদত হোসেন) ঘটনার জন্য ওই শিক্ষকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও রাসেল দিও বলেন, ‘ভুলবোঝাবুঝির কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ দুঃখ প্রকাশ করেছে।’

একজন শিক্ষক কিংবা নাগরিককে এভাবে হাতকড়া পরানো যায় কিনা, এমন প্রশ্নে থানার ওসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন ইউএনও।

রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি লুৎফর রহমান বলেন, ‘সীমান্ত এলাকা থেকে আসা এক ব্যক্তিকে নিয়মিত বসা চেক পোস্ট চলাকালে সার্চ করে ব্যাগ থেকে একটি প্যাকেট পাওয়া যায়। পরে প্যাকেট খুলে পাওয়া যায় ল্যাপটপের সিলিকা জেল এবং তিনি শিক্ষক পরিচয় দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ওই শিক্ষক অভিযোগ করলে ইউএনও’র রুমে এ ব্যাপারে বসে সমাধান করা হয়েছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বুয়েট শিক্ষার্থী সনি হত্যা মামলার আসামি টগর গ্রেপ্তার

শ্রীলঙ্কার জয়ে ভর করে সুপার ফোরে বাংলাদেশ

গাজায় ইসরায়েলের চার সেনা নিহত

রাজধানীর ইন্দিরা রোড থেকে এক আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

ইন্দোনেশিয়ায় আন্তঃধর্মীয় সম্মেলন / অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন ও সম্প্রীতিময় আন্তঃধর্মীয় সংলাপে গুরুত্ব

পেনশন নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বড় সুখবর

অস্ত্র মামলায় যুবকের ১০ বছরের কারাদণ্ড

চাকসুতে ১০ পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা

চট্টগ্রামকে ক্লিন সিটি করতে নতুন ল্যান্ডফিল্ড কেনার উদ্যোগ চসিকের

রাত নামলেই লুট হচ্ছে কীর্তনখোলা নদীর বেড়িবাঁধের ব্লক

১০

পূজা উদযাপন পরিষদ নেতা গিরীধারী লালের পরলোকগমন

১১

‘বাংলাদেশ-চীন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে’

১২

পাল্টে গেল সমীকরণ, এখন যেভাবে সুপার ফোরে যেতে পারে বাংলাদেশ

১৩

নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধের সাজা বাড়ছে

১৪

ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতালের অনন্য অর্জন

১৫

বিসিএস পরীক্ষা / সেনানিবাস এলাকায় প্রবেশে বিশেষ নির্দেশনা

১৬

বিএনপি নেতার বাড়িতে গুলি, কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ

১৭

কক্সবাজারে ৩১৭ মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

১৮

জুলাই ঘোষণার আইনি ভিত্তি দিয়েই আগামী নির্বাচন হতে হবে : গোলাম পরওয়ার 

১৯

সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে গবেষণা ও উদ্ভাবনী সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে

২০
X