

ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পথচারীদের নিরাপদ পারাপারে প্রতিটি স্টেশন এলাকা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ফুট ওভারব্রিজ। কিন্তু অধিকাংশ ফুট ওভারব্রিজই ফাঁকা পড়ে আছে। পথচারীরা ওই ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পারাপার করছে দেশের লাইফ লাইন-খ্যাত ব্যস্ততম মহাসড়কটি।
শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিতসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ মহাসড়কে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করছে না। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও মহাসড়কের মাঝ দিয়েই এক পাশ থেকে অন্য পাশে যান পথচারীরা। এতে প্রায়ই ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। কেউ বা চিরতরে হচ্ছেন পঙ্গু।
পথচারীদের ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নিচু বিভাজনের ওপর কোথাও এক থেকে দুইশ মিটারজুড়ে লোহার গ্রিল দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয়রা রাতের অন্ধকারে ওই গ্রিল ভেঙে যাতায়াতের পথ নিশ্চিত করে। আর অসচেতন পথচারী দিন-রাত ওই ভাঙা গ্রিল দিয়েই মহাসড়ক পারাপার হন।
কুমিল্লা সড়ক বিভাগ বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০৫ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকায় ৫৪টি ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে। প্রতিটি ব্রিজ নির্মাণে সরকারের কোটি কোটি খরচ হয়েছে। কিন্তু মানুষ সেসব ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে চলাচল করছে মহাসড়কে।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, গত ৯ মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৪৬৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ২৮৪ জন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ৫০৯ জন। রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়িচাপায় প্রাণ গেছে অনেকের।
সরেজমিন দেখা গেছে, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাসস্টেশনে রয়েছে একটি ফুট ওভারব্রিজ। কোটি টাকা ব্যয়ে ফুট ওভারব্রিজটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু এই ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে একজনকেও পারাপার হতে দেখা যায়নি। ফুট ওভারব্রিজটি মাত্র ১০০ ফুটের মধ্যে নিচু বিভাজন ও বিভাজনের কাটা অংশ থাকায় সব বয়সের নারী-পুরুষ ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার হচ্ছেন।
চান্দিনা-বাগুর বাসস্টেশনটি জেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। চান্দিনা-দেবিদ্বার, বরুড়া উপজেলার এবং বুড়িচং উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা ওই স্টেশনটি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। স্টেশনে থাকা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ উভয় পাশে অন্তত ২০০ মিটার লোহার উঁচু গ্রিল স্থাপন করে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে ওই গ্রিল ভেঙে ফেলে স্থানীয়রা। আর ওই ভাঙা অংশেই প্রতিদিন যাতায়াত করছে হাজার হাজার পথচারী। ফলে ওই স্টেশনটিতে যানজট নিত্যসঙ্গী। এ ছাড়া মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ, কুটুম্বপুর, গোবিন্দপুর, নিমসার অংশের ফুট ওভারব্রিজগুলো ব্যবহারই হচ্ছে না।
গত ১৯ নভেম্বর মহাসড়কের কুটুম্বপুর স্ট্যান্ডে ফুট ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও নিচ দিয়ে পারাপারের সময় দ্রুতগতির বাসের ধাক্কায় ডাম্প ট্রাকচালকের মৃত্যু হয়। মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড ও চান্দিনা বাসস্ট্যান্ডে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। অথচ পাশেই ফুট ওভারব্রিজ।
জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়ে সড়ক পারাপার করা এসব মানুষের কেউ অসুস্থতার অজুহাতে, কেউ সময় বাঁচাতে, কেউ আবার অভ্যাস থেকেই দ্রুতগতির গাড়ির সামনেই সড়ক পার হতে দেখা গেছে।
গোলাম মর্তুজা নামে এক ব্যক্তি সড়কের ওপর দিয়েই পার হয়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশে এলেন। তিনি বলেন, আসলে আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে এটা। মোবারক নামে এক পথচারী বলেন, আমরা সব সময় সড়কের ওপর দিয়ে যেতে যেতে অভ্যাস হয়ে গেছে। তবে এভাবে যাওয়া-আসা ঠিক না।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কে রাস্তা পারাপারে মানুষের সচেতন হতে হবে। এর বিকল্প কিছু নেই। পুলিশের হাতে যে ক্ষমতা রয়েছে, আমরা সেটাকে ব্যবহার করে মানুষকে ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে পারাপারে উদ্বুদ্ধ করছি। কিন্তু পথ যারা ব্যবহার করেন, প্রত্যেককে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা ফুট ওভারব্রিজ তৈরি করে দিয়েছি। সড়কে চলাচলকারী সবার উচিত নিজ দায়িত্বে এটাকে ব্যবহার করা। মানুষকে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে সচেতন করতে আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মহাসড়কের মাঝখানে লোহার রড দিয়ে ঘেরাও করে দিই, মানুষ সেসব রড ভেঙে রাস্তার মাঝ দিয়ে চলাচল করে। আমরা আমাদের পক্ষে যেটা করণীয় সেটা করে যাচ্ছি, মানুষকে সচেতন হতে হবে।
মন্তব্য করুন