

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রথম দফায় গত ৩ নভেম্বর দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। সেদিন খুলনা-১ ছাড়া বাকি সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। যারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তারা হলেন খুলনা-২ আসনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৩-এ রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪-এ আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা-৫-এ মোহাম্মদ আলী আসগর ও খুলনা-৬ আসনে মনিরুল হাসান বাপ্পী।
জেলার অন্য সব আসনে খুব একটা সমস্যা দেখা না দিলেও বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত খুলনা-২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে এখনো মেনে নিতে পারেননি মনোনয়ন দৌড়ে থাকা অন্য নেতারা। এ কারণে মঞ্জুকে নিজ অনুসারীদের নিয়ে একাই নির্বাচনী প্রচার চালাতে হচ্ছে। নগর, থানা, এমনকি ওয়ার্ডের নেতাদেরও কেউ এখন পর্যন্ত মঞ্জুর হয়ে প্রচারে নামেননি।
স্থানীয় নেতাদের অনেকের দাবি, খুলনা-২ আসনে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাদের অভিযোগ, নিজের কিছু অনুসারী নেতার সঙ্গে ক্লাবে বা হোটেলে বৈঠক করলেও এখন পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ে যাননি মঞ্জু। নির্বাচনী এলাকার দুটি থানা ও ১৬টি ওয়ার্ড কমিটির বর্তমান নেতাকর্মীদেরও ডাকেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অবশ্য মঞ্জু কালবেলাকে বলেছেন, ‘সময় হলে সবাই তার পক্ষে মাঠে নামবে।’
অভ্যন্তরীণ এই বিভেদ কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত খুলনা-২ আসনে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করছেন বিএনপির নেতারা। তাদের ভাষ্য, দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে খুলনা-২ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন থেকেই ২০০১ সালে নির্বাচিত হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া দুবার নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক স্পিকার রাজ্জাক আলী।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ছন্দপতন ঘটে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর। ওই বছর ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। কমিটি থেকে বাদ পড়েন মঞ্জু ও তার অনুসারীরা। ১২ ডিসেম্বর দলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় তাকে। পরে ২৫ ডিসেম্বর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় খুলনার দীর্ঘকালের বিএনপির এই কান্ডারিকে।
ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর কমিটি বিলুপ্তির পর থেকে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে রয়েছেন মহানগর বিএনপির দুপক্ষ। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন শফিকুল আলম মনা ও শফিকুল আলম তুহিন। অন্য পক্ষে রয়েছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে নগর ও থানা বিএনপির সাবেক নেতাকর্মীরা। তিন বছর ধরে কেন্দ্রীয় ও দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করে আসছেন তারা।
মঞ্জু ছাড়াও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন মহানগর বিএনপির বর্তমান সভাপতি শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ধারাবাহিক বৈঠকে ঢাকায় আমন্ত্রণ পান মনা ও তুহিন। তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর হাতেই ধানের শীষ প্রতীক তুলে দিয়েছেন তারেক রহমান। সেই থেকে উচ্ছ্বসিত মঞ্জু শিবিরে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসানুর রশীদ মিরাজ বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম তিনি (নজরুল ইসলাম মঞ্জু) পার্টি অফিসে আসুক, আলোচনার মাধ্যমে তার নির্বাচনের দায়িত্ব নেতাকর্মীদের হাতে তুলে দিক। কিন্তু আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।’
এ বিষয়ে খুলনা-২ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু কালবেলাকে বলেন, ‘দলে কোনো বিভেদ নেই। শিগগির সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের প্রার্থীর সঙ্গে মাঠে নামবে। আমার বিশ্বাস, অতীতের মতো এবারও খুলনার আসনগুলোতে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।’
মন্তব্য করুন