ড. মো. মোরশেদ হোসেন
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪, ১১:৫০ এএম
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. মো. মোরশেদ হোসেনের নিবন্ধ

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন, প্রয়োগ ও আজকের বাংলাদেশ

প্রফেসর ড. মো. মোরশেদ হোসেন। ছবি : সৌজন্য
প্রফেসর ড. মো. মোরশেদ হোসেন। ছবি : সৌজন্য

‘বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন’ হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি (Economic and Social View)। যদিও বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন, রাষ্ট্রচিন্তা, সমাজ ভাবনা, রাজনৈতিক দর্শন, উন্নয়ন দর্শন আলাদা করে দেখা কষ্টকর, কারণ সবই হলো পরস্পর সম্পর্কিত এক সমগ্রক রূপ (Holistic Form)। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন গণমানুষের স্বার্থ- কল্যাণ- সমৃদ্ধির লক্ষ্যে তার আন্দোলন- সংগ্রামের ফসল। এর মূলনীতি-ভিত্তি হলো বৈষম্যহীন অর্থনীতি ও অসাম্প্রদায়িক আলোকিত মানুষের সমৃদ্ধ সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণ। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের অন্যতম সুষ্পষ্ট প্রতিফলন হয়েছে ১৯৭২- এর সংবিধান প্রস্তাবনায় যেখানে বলা হয়েছে ‘আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা - যেখানে সকল নাগরিকের আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন একদিনে গড়ে ওঠেনি। সুদীর্ঘ লড়াই- সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন, যার ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছিল রাজনৈতিক দর্শন এবং তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন দর্শন। এ উন্নয়ন দর্শনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বিশ্বের নানা ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব, রুশ বিপ্লব পরবর্তী সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্রুতগতিতে আর্থসামাজিক মৌলিক পরিবর্তন, ১৯২৯-৩৩ সালের মহামন্দা (Great Depression) যা পুঁজিবাদের প্রথম বৈশ্বিক পতনের লক্ষণ, দ্বিতীয় বিশ্বিযুদ্ধ ((১৯৩৯-১৯৪৫), দ্বিতীয় বিশ্বিযুদ্ধ পরবর্তী স্নায়ু যুদ্ধ, জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বে উপনিবেশসমূহে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীন- সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের অভ্যুদয় এবং এ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণ, ১৯৪০-৫০ এর দশকে সমাজতান্ত্রিক চীনা বিপ্লব, চীনের অগ্রযাত্রা ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব, ১৯৬০ এ দশকে তৃতীয় বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও সাম্রাজ্যবিরোধী আন্দোলন যেমন পানামা, ইকুয়েডর, নিকারাগুয়ায় মার্কিন আগ্রাসন, কিউবার বিপ্লব ও বিপ্লবী চে গুয়েভারার হত্যা, ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলন, দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের অসারতা এবং পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তানের শোষন- নির্যাতনসহ দুই অর্থনীতি (Two Economy) সৃষ্টির মাধ্যমে পূর্ব-পাকিস্তানের উন্নয়নে চিরস্থায়ী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি- সবই ছিল বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের পটভূমি।

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের মূল কথা হলো স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন। তাই ১৯৪৭ হতে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের যে পটভূমি তাতে সর্বাধিক দক্ষতা ও সফলতার সাথে পদচারণা একমাত্র বঙ্গবন্ধুর। বঙ্গবন্ধু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম বীর সেনানী, বাষট্টির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথিকৃৎ, ছেষট্টির ছয়দফা আন্দোলনের ঋত্বিক, ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণা-পুরুষ, সত্তুরের নির্বাচনের ঈর্ষণীয় বিজেতা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, বাঙালি জাতীয়তাবাদের রূপকার, সর্বোপরি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি। স্বাধীনতা অর্জনের এই যে সংগ্রাম তা যেমন ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য, তেমনি তা ছিল অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাচঁতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।... আমাদের ন্যাশনাল এসেমব্লি বসবে, আমরা শাসনতন্ত্র তৈরি করব এবং এদেশকে আমরা গড়ে তুলব, এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে।’

বঙ্গবন্ধু উন্নয়ন দর্শনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পশ্চিম পাকিন্তান ও পূর্ব- পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য তুলে ধরা। এ দু অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক বৈষম্যের ভয়াবহ চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে গত ২২ বছরে সরকারের রাজস্ব খাতের মোট ব্যয়ের মাত্র ১৫ শত কোটি টাকার মতো (মোট ব্যয়ের এক-পঞ্চমাংশ মাত্র) বাংলাদেশে খরচ করা হয়েছে। অথচ এর পাশাপাশি পশ্চিম পাকিস্তানে খরচ করা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। দেশের সর্বমোট উন্নয়ন ব্যয় খাতে বাংলাদেশে মোট ব্যয়ের এক তৃতীয়াংশ ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি।’ মূলত এই অর্থনৈতিক বৈষম্য বা দু অর্থনীতি তত্ত্ব ছয় দফার ভিত্তি। দুই অঞ্চলে স্ব-স্ব উদ্যেগে শিল্পায়ন, মুদ্রানীতি, বৈদেশিক মুদ্রানীতি, সুদের হার নীতিসহ এমন কিছু দাবি এই ছয় দফায় যুক্ত করেছিলেন তিনি, যা কার্যত পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার দাবির পর্যায়েই পড়ে।

বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠ অবদান স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশ হবে ‘সোনার বাংলা’, স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনে ‘সোনার বাংলা’ ছিল একটি রূপকল্প। এটি কোন মিথ নয়। ‘রূপকল্প- ২০২১’ ও ‘রূপকল্প-২০৪১’ এর মতোই এটি রূপকল্প। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন, স্বপ্ন দেখাতেন। বঙ্গবন্ধু একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসম্প্রাদায়িক ও বৈষম্যহীন সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ ১৯৭২ সালে প্রথম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বলেছিলেন, ‘শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চাই। সে বাংলায় আগামীদিনের মায়েরা হাসবে, শিশুরা খেলবে। আমরা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলব। আপনারা নিশ্চয়ই আমার সংগে সহযোগিতা করবেন। ক্ষেতখামার, কল-কারখানায় দেশ গড়ার আন্দোলন গড়ে তুলুন। কাজের মাধ্যমে দেশকে নতুন করে গড়া যায়। আসুন সকলে মিলে সমবেতভাবে আমরা চেষ্টা করি যাতে সোনার বাংলা আবার হাসে, সোনার বাংলাকে আমরা নতুন করে গড়ে তুলতে পারি।’ বলা যেতে পারে ৭০০ বা ৮০০ পৃষ্ঠার যে কোন রূপকল্পের চেয়ে ‘সোনার বাংলা’- এ শব্দ দুটি অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ, কাঙ্ক্ষিত, স্বপ্নীল ভবিষ্যতের প্রকাশ। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫) স্পষ্টত : বলা হয়েছে, The father of the nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman soon after assuming the power initiated massive programmes for rebuilding the war-torn economy in a planned manner. Under his visionary and prudent leadership, the First Five Year Plan (1973-78) was formulated to guide the transformation of the country into ‘Sonar Bangla’, free of poverty, hunger and corruption along with rapid income growth and shared prosperity.

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের আরেকটি মূল কথা হলো ‘দেশজ উন্নয়ন দর্শন (Home Grown Development Philosophy) অর্থাৎ দেশের সম্পদ, দেশের পুুঁজি, দেশের সামাজিক পুঁজি ব্যবহার করেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। এজন্য তিনি প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৭৩-৭৮) বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করার কথা বলেছেন। বৈদেশিক সাহায্য বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘দেশ গড়ার কাজে কেহ আমাদের সাহায্য করতে চাইলে তা আমরা গ্রহণ করব। কিন্তু সে সাহায্য অবশ্যই হতে হবে নিষ্কন্টক ও শর্তহীন। আমরা জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সব জাতির সমমর্যাদার নীতিতে আস্থাশীল। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কেহ হস্তক্ষেপ করবেন না, এটাই আমাদের কামনা’।

বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ এ, আর সংবিধান রচিত হলো ৪ নভেম্বর ১৯৭২ অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন হলো। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন প্রকাশ করে বাংলাদেশের সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ। যেমন- (১) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগন; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে (সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৭.১), (২) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবন ধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা (অনুচ্ছেদ ১৫. ক), (৩) কর্মের অধিকার; যুক্তিঙ্গত মজুরির বিনিময়ে কাজের নিশ্চয়তার অধিকার (অনুচ্ছেদ ১৫.খ), (৪) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার (অনুচ্ছেদ ১৫.খ), (৫) সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা;... মানুষে সানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ (অনুচ্ছেদ ১৯/১,২) (৬) মেহনতি মানুষকে- কৃষক ও শ্রমিককে- এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ থেকে মুক্তিদান (অনুচ্ছেদ ১৪) (৭) জীবনযাত্রার বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার লক্ষ্যে কৃষি বিপ্লবসহ গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধন (অনুচ্ছেদ ১৬)। অর্থাৎ এসবের মূলকথা হলো বৈষম্যহীন এক অর্থনীতি- সমাজ- রাষ্ট্র গঠন।

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের প্রকাশ রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) এর দলিলে। বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র আড়াই মাসের মধ্যেই (৩০ মার্চ ১৯৭২) দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত হয় বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন, যার চেয়্যারম্যান ছিলেন বঙ্গবন্ধু নিজে। কমিশন মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে রচনা করলেন বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮), যার বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে। এ পরিকল্পনার মূল দিক নির্দেশনার বিষয় ছিল ভবিষ্যতের বাংলাদেশ- বৈষম্যহীন, জনকল্যানকর, সমৃদ্ধ, উন্নত, প্রগতিবাদী এক আলোকিত বাংলাদেশ। এতে উন্নয়ন দর্শন ছিল (১) পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য হবে দারিদ্র হ্রাস (২) অর্থনীতির প্রতিটি খাতে বিশেষত কৃষি ও শিল্পের পুনঃগঠন ও উৎপাদন বৃদ্ধি (৩) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বার্ষিক হার ৩ শতাংশ হতে কমপক্ষে ৫.৫ শতাংশে বৃদ্ধি করা (৪) নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের (বিশেষ করে খাদ্য, বস্ত্র, ভোজ্য তেল, কেরোসিন, চিনি) উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এসবের বাজার মূল্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা (৫) পুনঃবণ্টনমূলক আর্থিকনীতি কৌশলসহ বন্টন নীতিমালা এমন করা যাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির হার দেশের সামগ্রিক গড় আয় বৃদ্ধির চেয়ে বেশী হয় (এবং উচ্চ আয়ের মানুষদের এক্ষেত্রে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে) (৬) বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করা (৭) গ্রাম- শহরে স্ব-কর্মসংস্থান সুযোগ বৃদ্ধি করা (৮) কৃষির প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নিশ্চিত করা; খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। (৯) শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীন গৃহায়ন, পানি সরবরাহ ইত্যাদি সামাজিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নখাতে উন্নয়ন বরাদ্দ হার বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের সাধারণ সক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দলিলে এটি স্পষ্ট যে, বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনে মানুষে মানুষে বৈষম্য হ্রাস নিমিত্ত শক্ত- ভিত্তির জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সংসদে, সভা- সমিতিতে দেয়া বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যগুলোরই প্রতিফলন এই প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দলিল।

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনে গ্রামীন উন্নয়ন ও কৃষির গুরুত্ব অনেক। সমাজতান্ত্রিক সমাজ- অর্থনীতি বির্নিমাণে গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লবের অনিবার্য প্রয়োজনীয়তার প্রতি বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছে সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে যেখানে বলা হয়েছে ‘নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনগণের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’ বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনে শিক্ষাকে কখনো ব্যয় হিসাবে গণ্য করেননি, গণ্য করেছেন উন্নয়নে সর্বোৎকৃষ্ট বিনিয়োগ হিসেবে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এক বেতার ভাষনে বলেন ‘সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাখাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর হতে পারে না। ... জাতীয় উৎপাদনের শতকরা কমপক্ষে ৪ ভাগ সম্পদ শিক্ষাখাতে ব্যয় হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। কলেজ ও স্কুল শিক্ষকদের, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। নিরক্ষরতা অবশ্যই দূর করতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৮ মার্চ জাতীয়করণ নীতি ঘোষণা করেন। ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলোর জাতীয়করন বিষয়ে স্বাধীনতার পূর্ব হতে (২৮ অক্টোবর ১৯৭০) বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য ছিল, ‘জাতীয়করণের মাধ্যমে ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলো ও অর্থনীতির অন্যান্য মূল চাবিকাঠিগুলোকে জনগনের মালিকানায় আনা অত্যাবশ্যক বলে আমরা বিশ্বাস করি। অর্থনীতির এসবক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সাধিত হতে হবে সরকারি অর্থাৎ জনগণের মালিকানায়। নতুন ব্যবস্থায় শ্রমিকগণ শিল্প ব্যবস্থাপনায় ও মূলধন পর্যায়ে অংশীদার হবেন’।

বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন গ্রামীণ সমাজে সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশের প্রতিটি গ্রামে গণমুখী সমবায় সমিতি গঠন করা হবে। তার মতে, ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণমুখী সমবায় আন্দোলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা সমবায়ের পথ- সমাজতন্ত্রের পথ, গণতন্ত্রের পথ। সমবায়ের মাধ্যমে গরীব কৃষকরা যৌথভাবে উৎপাদন-যন্ত্রের মালিকানা লাভ করবে। ... কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের বিনিময়ে পাবে ন্যায্যমূল্য, শ্রমিকরা পাবে শ্রমের ফল -ভোগের ন্যায্য অধিকার (১৯৭২ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় আয়োজিত সমবায় সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তৃতা)। সম্পদের সুষ্ঠু ও সমবন্টনের দিকে বঙ্গবন্ধুর নজর সবসময়ই ছিল।

এ প্রসংগে ২৬ মার্চ ১৯৭২ সালে প্রথম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে তিনি বলেন, সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থায় সমতা আনতে হবে এবং উচ্চতর আয় ও নিম্নতম উপার্জনের ক্ষেত্রে যে আকাশচুম্বী বৈষম্য এতদিন ধরে বিরাজ করছিল, সেটা দূর করার ব্যবস্থাদি উদ্ভাবনের জন্যে আমি একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার কথা বিবেচনা করছি। আজ আমরা বিশ্ব সভ্যতার এক ক্রান্তিলগ্নে উপস্থিত। একটি নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার স্বপ্নে আমরা বিভোর, একটি সামাজিক বিপ্লব সফল করার প্রতিশ্রতিতে আমরা অটল, আমাদের সমস্ত নীতি, আমাদের সকল কর্মপ্রচেষ্টা এ কাজে নিয়োজিত হবে। আমাদের দুর্গম পথ। এ পথ আমাদের অতিক্রম করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনে জনগণ সম্পৃক্ততা কথা বার বার উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আজ যদি পলিটিক্যাল অর্গানাইজেশন স্ট্রং না হয় ভিলেজ লেভেল থেকে আরম্ভ করে শেষ পর্যন্ত যাকে ওয়াচডগ বলা হয়, তা যদি না থাকে তাহলে দেশের মঙ্গল করা যায় না শুধু সরকারি কর্মচারীর ওপর নির্ভর করে। দেয়ার মাস্ট বি এ ব্যালেন্স। দেয়ার মাস্ট বি পিপলস মবিলইজেশন। আমাদের হোল কান্ট্রিকে মবিলাইজ করতে হবে ফর ডেফিনিট পারপাস।

বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন বক্তব্যে সামাজিক পুঁজির ব্যবহারের প্রসংগ এসেছে, শুধু সরকারি অর্থে জনগণের মঙ্গল হয় না, উন্নতির কাজ হয় না। জনগণকে একতাবদ্ধ করতে হবে। আপনাদেরকে জনগনকে মবিলাইজ করতে হবে। সেজন্য জনগনের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে হবে।এই অনুপ্রেরণা সৃষ্টির দায়িত্ব থাকবে পার্টির এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের, গভর্নরের, জয়েন্টলি।

বঙ্গবন্ধু মাটি- ঘনিষ্ঠ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন। এক বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, আমার মাটির সাথে, আমার মানুষের সাথে, আমার কালচারের সাথে, আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে আমার ইতিহাসের সাথে যুক্ত করেই আমার ইকোনমিক সিস্টেম গড়তে হবে। বঙ্গবন্ধু ‘স্বনির্ভর অর্থনীতির’ কথা বলতেন। জাতি হিসেবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে হয়ে পায়ের ওপর দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করে উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছেন, দ্বিগুন উৎপাদনের কথা বলেছেন।

বঙ্গবন্ধু ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে’ বিশ্বাস করতেন। এদেশের কৃষক- শ্রমিক- মজুর অর্থাৎ পশ্চাৎপদ মানুষের জন্য ছিল তাঁর অপরিসীম ভালোবাসা। তার প্রায় প্রতিটি বক্তব্যে গরীব- দুঃখী মানুষের কথা, কৃষক- শ্রমিকের কথা, নির্যাতিত মানুষের কথা উঠে এসেছে। এক বক্তব্যে তিনি বলেন,“আমাদের চাষীরা হলো সবচেয়ে দুঃখী ও নির্যাতিত শ্রেণি এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের উদ্যেগের বিরাট অংশ অবশ্যই তাদের পেছনে নিয়োজিত করতে হবে।

এ প্রসংগে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল জুলুম শোষনমুক্ত সমাজ, কৃষি এবং সমবায় ভিত্তিক উন্নয়ন। তিনি সমাজের অবহেলিত ও বঞ্চিত শ্রেণির কথা ভাবতেন। ড. আতিউর রহমানের ভাষায়, এদেশের কৃষক, শ্রমিক, নিম্নমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের জন্য বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্তঃপ্রাণ। তাই তারা ভাবেন, এদেশটি আরো কত আগেই না অর্ন্তভুক্তি উন্নয়নের স্বাদ পেত, যদি না বঙ্গবন্ধুকে হঠাৎ এমন করে চলে যেতে না হতো।

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনে পররাষ্ট্রনীতিতে উন্নয়ন অর্থনীতির কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। ১৯৭৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৯ তম অধিবেশনে এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ প্রথম হইতেই শান্তিপূর্ণ সহবস্থান ও সকলের প্রতি বন্ধুত্ব - এই নীতিমালার ওপর জোট নিরপেক্ষ নীতি গ্রহন করিয়াছে। কেবল শান্তিপূর্ণ পরিবেশই কষ্টলব্ধ জাতীয় স্বাধীনতার ফল ভোগ করিতে আমাদের সক্ষম করিয়া তুলিবে এবং সক্ষম করিয়া তুলিবে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, অশিক্ষা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করিবার জন্য আমাদের সকল শক্তি ও সম্পদ সমাবেশ ও কেন্দ্রীভূত করিতে। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত আলজিয়ার্সেও জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুভাগে বিভক্ত- শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।

বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের অর্থাৎ বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির ডাক দেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গ্রামকে প্রাধান্য দিয়ে সমবায় কৃষির মাধ্যমে গ্রাম ও কৃষককে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। দেশে ৬০টি জেলা তৈরি করে, প্রতি জেলায় একজন গভর্নর নিয়োগ করে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্য ছিল তার। দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন শোষণহীন সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার।

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন প্রয়োগ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মন্তব্য করেছিলেন- Bangladesh is a bottomless basket এবং অর্থনীতিবিদ ফাল্যান্ড ও জে আর পারকিনস তাদের বই Bangladesh : The Test Case of Developmen এ বাংলাদেশের টিকে থাকা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে নানা নেতিবাচক কথা বলেছেন। অনেক অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ গড়ে তোলা অসম্ভব, বাংলাদেশ সচল করতে কমপক্ষে দশ বছর সময় লাগবে বলে ভবিষ্যৎবাণী করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেই তার উন্নয়ন দর্শন বাস্তবায়ন শুরু করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বছরেই (১৯৭২ সালে) অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবার- পরিজনসহ জীবন বাঁচাতে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী ১ কোটি শরণার্থীসহ দেশের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু, লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত,শহরচ্যুত পরিবারের পুনর্বাসন, দেশের অভ্যন্তরে ৪৩ লক্ষ বিধ্বস্ত বাসগৃহ পুননির্মাণসহ এসব পরিবারে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী সরবাহের কাজটি ছিল বড় মাপের চ্যালেঞ্জ। বঙ্গবন্ধু প্রথমেই যে কাজটিতে হাত দিলেন তাহলো যুদ্ধবিদ্ধস্ত মানুষের পুর্নবাসন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত কৃষিখাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে বঙ্গবন্ধু যেসব বাস্তবভিত্তিক সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন তার মধ্যে অন্যতম হলো কৃষকদের জরুরী ভিত্তিতে কৃষি ঋন প্রদান ও বীজ সরবরাহ করা, গভীর ও অগভীর নলকুপ মেরামত ও পুনঃখনন করা। হালচাষের জন্য কয়েক লাখ গরু আমদানি করে কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করা, খাস জমি ভূমিহীন- প্রান্তিক কৃষকসহ বাস্তুহারাদের মধ্যে বণ্টন। কৃষিতে শ্রেণি-বৈষম্য হ্রাসে কৃষকদের মুক্তিসহ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ১০০ বিঘার বেশি জমির মালিকদের জমি খাস হিসাবে ঘোষণা।

পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী ও তাদের দালালেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সাধন করেছে অবকাঠামোগত ভৌত সম্পদের যার মধ্যে অন্যতম রাস্তা-ঘাট,ব্রিজ, কালভার্ট, বিদ্যুৎ (উৎপাদন- সঞ্চালন-বিতরন), টেলিযোগাযোগ। বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে ১২ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা গঠনের পর কোন বিলম্ব না করে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসেই ধ্বংসপ্রাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সংস্কার- নির্মাণ-পুনর্নিমাণে হাত দেন। মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যপক ক্ষয়-ক্ষতিসহ শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে ও মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত নাম মাত্র মূল্যে পাঠ্যপু¯তক সরবরাহ, ধ্বংসপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ, বাজেটে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ, ড. কুদরত- ই- খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন, ৩৬ হাজার ১৬৫ টি বেসরকারি স্কুল সরকারীকরণ- জাতীয়করণ এবং ১১ হাজার নতুন প্রাথমিক স্কুল স্থাপন, ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ এবং মুক্তিবুদ্ধি ও চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন (১৯৭৩) প্রদান করেন।

পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত ব্যাংক- বিমার ও ৫৮০টি শিল্প ইউনিটের জাতীয়করণ ও সেসব চালুর মাধ্যমে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান, সার কারখানা, আশুগঞ্জ কমপ্লেক্সেও প্রাথমিক কাজ ও অন্যান্য নতুন শিল্প স্থাপন, বন্ধ শিল্পকারখানা চালুসহ একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। তবে শুরুতে রাষ্ট্রীয়খাতকে প্রাধান্য দিয়ে শিল্পায়নের ভিত্তি সুদৃঢ় করলেও ধীরে ধীরে তিনি ব্যক্তিখাতের বিকাশের জন্য অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টির দিকে মনোযোগী হন। এসময়ে ১৩৩ টি পরিত্যক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিকদের ফিরিয়ে দেয়া হয়, ৮২টি ব্যক্তি মালিকানায় ও ৫১টি কর্মচারী সমবায়ের কাছে বিক্রি করা হয়। এভাবে শিল্পায়নকে ডিরেগুলেট করার প্রক্রিয়া শুরু হয়, ফলে পরবর্তীতে ব্যক্তিখাত শিল্পায়নের মূল চালিকাশক্তিতে আবির্ভূত হয়। ড. আবুল বারকাত এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, বঙ্গবন্ধু বেচেঁ থাকলে এবং একই সাথে বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতির প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডে বাংলাদেশ কল্পনাতীত মাত্রায় এগিয়ে যেত। ২০০০ সাল নাগাদ মালয়েশিয়াকে পেছনে ফেলে দিত বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সমাজে, সমাজ কাঠামোতে, শ্রেণি কাঠামোতে সম্ভাব্য কি ধরনের পরিবর্তন হতে পারতো। যা হয় নি। যাকে আমি বলছি কল্পনাতীত হারানো সম্ভাবনা’ বা Unimaginable Lost Possibilities.

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন ও আজকের বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ৪৬ বছর পরেও বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন আজও সমানভাবে প্রযোজ্য। তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ডকুমেন্টে এ প্রসংগে বলেছেন, This flagship document contains the philosophy of realizing the ‘Golden Bengal’as dreamed of by the Father of the Nation. বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ এ সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ -এ ২০৪১ সালে উন্নত দেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা অর্জনের কথা বলা হয়েছে।

রূপকল্প ২০৪১ এ বলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনের আলোকে স্বপ্নের উন্নয়ন পথে জাতিকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই সরকার রূপকল্প ২০৪১ গ্রহণ করেছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ এর ভিত্তিমূলে রয়েছে দুটি প্রধান অভীষ্ট : (ক) ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ, যেখানে বর্তমান মূল্যে মাথাপিছু আয় হবে ১২,৫০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি এবং যা হবে ডিজিটাল বিশ্বের সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ, (খ) বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা, যেখানে দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের ঘটনা। দারিদ্র্য নির্মূল করার পাশাপাশি পরিবেশের সুরক্ষা, উদ্ভাবনী জ্ঞান, অর্থনীতির বিকাশ ও উৎপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি করে এমন একটি দ্রুতগতির অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই রূপান্তর সাধন সম্ভব।

মাত্র সাড়ে তিন বছর, বিশাল কাজে খুবই কম সময় পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। জাতির পিতার দেখানো পথে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে আজ বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্য-প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু, যে অর্থনৈতিক মুক্তি চেয়েছিলেন মানুষের, তা বাস্তবায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করতে হয়েছে। হংকং সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন (এইচএসবিসি)- এর সর্বশেষ গ্লোবাল রিসার্চ- The World in 2030 : Our Long Term Projection for 75 Countries এ বলা হয়েছে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) নিরিখে বিশ্বের ২৬ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সমুদ্র হতে মহাকাশ সর্বত্র অর্জিত হয়েছে বিজয়। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)- বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে পূর্ণ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করেছে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে। সিডিপির তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। মাথাপিছু আয়ের টার্গেট ছিল ১২৩০ মার্কিন ডলার আর বাংলাদেশের অর্জন ২০২০ সলে ১৮২৭ মার্কিন ডলার (বর্তমানে ২০৬৪ মার্কিন ডলার), মানব সম্পদ সূচক টার্গেট ছিল ৬৬ পয়েন্ট আর বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫.৩ পয়েন্ট এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক ধরা হয়েছিল ৩২ পয়েন্ট এর নিচে আর এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ২৫.২ পয়েন্ট। স্বাধীনতার ৫০ বছরে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়ন ভাবনা স্বাধীনতার অন্যতম চালিকাশক্তি। গ্রামকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রীয় দর্শন হিসাবেই বিবেচনা করতেন। এসকল ভাবনাকে সামনে রেখে ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দেশের প্রতিটি গ্রামে নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে আমার গ্রাম- আমার শহর নির্বাচনী অঙ্গীকার যুক্ত করে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ দারিদ্র্যবিমোচনের কৌশল হিসাবে তৎকালীন ১৯ টি থানায় পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম শুরু করেন। এ কার্যক্রমের সফলতার কারণে বর্তমানে দেশের সকল জেলার প্রত্যক উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে এ কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশের অতি দরিদ্র মানুষের ৪০ শতাংশেরও অধিক বর্তমানে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে সরকার গৃহহীনদের আধাপাকা ঘর নির্মাণের একটি বড় কর্মসুচি সম্পন্ন করেছে। এতে সারো দেশের ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি ঘরহীন পরিবারকে নতুন ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ চলছে। সেসাথে যুক্ত হয়েছে বৃত্তি, উপবৃত্তি ও পোষাক ক্রয়ের অর্থ প্রদান।

বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন দেশজ উন্নয়ন দর্শন (Home Grown Development Philosophy) অর্থাৎ দেশের সম্পদ, দেশের পুুঁজি, দেশের সামাজিক পুঁজি ব্যবহার করেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু দেশজ উন্নয়ন দর্শনের এক বাস্তব রূপ। বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ২০১৯-২০ সালে জিডিপি ৩৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, রপ্তানি আয় ৪০.৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৪৪.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, রেমিটেন্স ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াট (৯৬ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে), গড় আয়ু ৭২.৬ বছর হয়েছে। দারিদ্র্যের হার কমে বর্তমানে ২০.৫ শতাংশ এবং হত- দারিদ্র্যের হার ১০.৫ শতাংশ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে লাখ লাখ মানুষের। বর্তমান সরকার নানা ধরণের অবকাঠামো নির্মাণ করেছে ও নানা সুবিধা দিয়েছে মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট, পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বন্দর, সাবমেরিন কেবল সংযোগ, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো চার লেন, ছয় লেনে উন্নীত করা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ করা, ফোর জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালু করা, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু ও সম্প্রসারণ করা এর মধ্যে অন্যতম। বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মহাকাশে পাঠিয়েছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। নিজস্ব স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি দিয়েই চলছে দেশের সম্প্রচার কার্যক্রম।

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের শুরুতে দেশ বিদেশের গণমাধ্যমসহ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ছিল, করোনায় বাংলাদেশে কয়েক কোটি মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। মৃত্যু হতে পারে কয়েক লাখ মানুষের। সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে অর্থনীতি। কিন্তু এক বছরের মাথায় এসে সেই শঙ্কা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়লেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়ার স্বীকৃতি মিলেছে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের। বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ, করোনার টিকাদান কর্মসূচি চালু, আর্থিক প্রণোদনা ও অর্থনীতিতে সাফল্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং কুটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (WEF) – এর Inclusive Development Index (IDI) -2018 অনুযায়ী র‌্যাংকিংয়ে দেখা যায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকে দক্ষিন এশিয়ার বড় দেশ ভারতের চেয়ে ২৮ ধাপ এবং পাকিস্তানের চেয়ে ১৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির তিনটি মানদন্ড - প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন, অর্ন্তভুক্তিকরণ এবং আন্তঃপ্রজন্ম সমতা, প্রাকৃতিক ও আর্থিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার ভিত্তি-এর সূচক হিসাবে ধরা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা উন্নয়ন দর্শনকে সামনে রেখেই ২০৩০ সালে- এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৪১ সালে- উন্নত দেশ সোনার বাংলা, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে- সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখরে এবং ২১০০ সালে -ডেল্টা প্ল্যান অর্জনের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা অর্জনে আমরা যেন নিরন্তর অঙ্গীকারবদ্ধ থাকি- এই হোক আজকের প্রত্যাশা।

ড. মো. মোরশেদ হোসেন: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তাপমাত্রা আরও বাড়ল চুয়াডাঙ্গায়

আকর্ষণীয় বেতনে ওয়াটারএইডে চাকরি, আবেদন করুন দ্রুত

১০২ পদে কর কমিশনারের কার্যালয়ে জনবল নিয়োগ

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার্থীদের সেবায় যবিপ্রবির ক্লাব-সংগঠন

পরীক্ষার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গুচ্ছের ফল প্রকাশ 

গরমে স্বপ্ন-তে পথচারীদের জন্য ফ্রি শরবত বিতরণ

৯ মে হজের প্রথম ফ্লাইট : ধর্মমন্ত্রী

বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ইসির শোকজ

সাতক্ষীরায় ভুয়া সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের কার্ড দিলেন রিটার্নিং অফিসার

রাতেই ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে

১০

জীবিত থেকেও মৃত রুস্তম আলী

১১

গাছ কাটার সিদ্ধান্তে অনড় বন বিভাগ

১২

জানা গেল এসএসসির ফল প্রকাশ কবে হতে পারে

১৩

তীব্র দাবদাহে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা ইসির

১৪

ঢাকার সিভিল সার্জন হলেন ডা. বিপ্লব কান্তি

১৫

সমাবেশের ঘোষণা দিল বিএনপি

১৬

ইন্টারনেট-ওটিটি প্লাটফর্মে স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবি

১৭

লোহাগড়ায় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্বোধন করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

১৮

চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট 

১৯

কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত

২০
*/ ?>
X