অবাধ সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম একটি নির্বাচন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ভোটারদের সমর্থন এবং তাদের সরাসরি ভোটে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বিশ্বাসী স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অতীতের ন্যায় বিপুল ভোটে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছে। এই নির্বাচন ছিল আগুনসন্ত্রাসীদের মুখে চপেটাঘাত করে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অতীতে আরও যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেক অবাধ সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই বিষয়ে দ্বিমত হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পর্যবেক্ষক দল কিন্তু এই নির্বাচনে করা তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে তা চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন পর্যবেক্ষক দলের করা এসব প্রতিবেদনের ফলে নির্বাচনের পূর্বে এই নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি বিরোধিতাকারীরাও নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে তার নতুন অভিযাত্রায় অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসিয়েছেন।
বাংলাদেশের এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটা অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে তা এই নির্বাচনে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষক দলের মন্তব্যে পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও রাশিয়া থেকে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, সফল ও বৈধ বলে অভিহিত করেছেন। তারা গত ৭ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিত হওয়া বাংলাদেশের ১২তম সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর এমন মন্তব্য করেন।
রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য জিম বেটস বলেন, ‘আমি নির্বাচনকে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু বলে মনে করছি।’ সংবাদ সম্মেলনে আরওও যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক বক্তব্য দেন তাদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সদস্য আন্দ্রে ওয়াই শুতোভ, ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের সিইও হিশাম কুহাইল, গাম্বিয়া হাইকমিশনের মোহামাদু মুসা এনজি, স্কটিশ এমপি মার্টিন ডে, ওআইসির নির্বাচনি ইউনিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাকির মাহমুদ বান্দার, আরব পার্লামেন্টের সদস্য আবদি হাকিম মোয়ালিয়াম, দক্ষিণ এশিয়া গণতান্ত্রিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা, ভিক্টর ওএইচ ও কানাডার চন্দ্রকান্ত আর্য। সংবাদ সম্মেলনে তারা রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে যে চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে তার কথা তুলে ধরেন। তাদের এই অভিজ্ঞতার তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশর এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিঃসন্দেহে একটি অবাধ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যা বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের নিকট একটি মডেল নির্বাচন হওয়ার দাবি রাখে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি (রোববার) সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্রমনা বাঙালি জনগণের সমর্থন ও ভোটে ২৯৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২২টিতে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এই নতুন অভিযাত্রায় উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন বিশ্বের বহুল পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন দেশসমূহ। নির্বাচনের পর থেকে আজ পর্যন্ত এই অল্প কয়েক দিনের ভিতরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত, রাশিয়া, চীন, ভুটান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান, ব্রাজিল এবং মরক্কো ইত্যাদি দেশসমূহ অভিনন্দন জানিয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনের পরদিনই ৮ জানুয়ারি সকালে দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
এদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই বেশ সরব দেখা যাচ্ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে। তবে নির্বাচনে জয়লাভ করার পর সেই দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ যখন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে, তখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও সম্ভাবনার আলো দেখতে শুরু করেছে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে আসছিল তারা। তদানুসারে গত ৭ জানুয়ারি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠনের এক সপ্তাহের ভেতর জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বেশিরভাগ দেশ নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছে। পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতে কীভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা যায়, সেদিকেও ইঙ্গিত দিয়েছে।
গত রোববার প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠিও তারই ইঙ্গিত বহন করছে। তবে এখানেই শেষ নয়, এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর পাশাপাশি সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন। চিঠিতে সুনাক বলেছেন, ‘আপনি ঐতিহাসিক পঞ্চম মেয়াদে যাত্রা শুরু করায় এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আকর্ষণীয় উন্নয়ন লাভের প্রতিফলন ঘটায়- আমি আমাদের দু’দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদারত্ব আরও জোরদার করতে এবং এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের প্রতি আমার সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভোটের পরদিন সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি; অভিনন্দন জানাতে টেলিফোনও করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবার ক্ষমতাগ্রহণে যখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন বাংলাদেশ ও ভারতের ঐতিহাসিক ও নিবিড় সম্পর্ক দুদেশের অবিচল অংশীদারত্বের সবক্ষেত্রে গভীর হতে থাকবে। এটি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আত্মবিশ্বাসী করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ভারত বাংলাদেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও প্রবৃদ্ধিতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা চিঠিতে বলেছেন মোদি।
বিদেশি রাষ্ট্রের পাশাপাশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো জয়লাভের গৌরব অর্জন করায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন জানিয়েছে দেশীয় সংগঠন বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)। গত ১০ জানুয়ারি (বুধবার) সংগঠনটির সভাপতি আরদাশীর কবির স্বাক্ষরিত এক অভিনন্দন বার্তায় উল্লেখ করা হয়, বিপুল এই বিজয় বাংলাদেশের জনগণের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষাকে নির্দেশ করে এবং দেশবাসী আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। বিইএফ এর পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো জয়লাভ করার সফল কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন অভিযাত্রায় উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরের ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ীক সংগঠনগুলো। অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যগণ, বিভিন্ন স্কুল, কলেজের প্রধানগণ এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের সর্বস্তরের গণতন্ত্রমনা জনগণ যাদের মূল্যবান ভোটে আওয়ামী লীগ সরকারের এই নতুন অভিযাত্রা শুরু হয়েছে।
আওয়ামী এই বিজয় এবং এই নতুন অভিযাত্রা ও দেশি-বিদেশি এতো এতো উষ্ণ অভ্যর্থনা পাওয়ার পথটা কিন্তু এতটা সহজ ছিল না। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তার পিছনে। নির্বাচন নিয়ে করা দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কৌশলে সব ধরনের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে উপেক্ষা করে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও ভোটে নির্বাচিত হয়ে টানা চতুর্থ বারের মতো সরকার গঠনের কৃতিত্ব অর্জন করার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি সব উষ্ণ অভ্যর্থনার জোয়ারে ভাসছেন।
সুতরাং, স্বাধীন ও সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে জনগণ যখন যাকে চেয়েছে সেই দল সরকারের ক্ষমতায় এসে দেশি-বিদেশি উষ্ণ অভ্যর্থনা পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছে। গণতন্ত্র ও জনগণের সমর্থনে বিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা চারবারের মতো বাংলাদেশে সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি সব উষ্ণ অভ্যর্থনা পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছে। আমাদের বিশ্বাস গণতন্ত্রমনা জনগণের সমর্থনের ওপর ভর করে আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন এই অভিযাত্রার শেষ হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা এবং বাঙালি জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে।
লেখক : উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য করুন