চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বাঘা শরীফ
তারা সতীর্থ। বলীর কসরত শিখেছেন একই ওস্তাদের কাছে। দারুণ সেই সব কসরত দেখিয়ে এবার মাতিয়ে তুলেছেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার ১১৫তম আসর। তাদের একজন এবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বাঘা শরীফ, অন্যজন রানার্স আপ মো. রাশেদ বলী। দুজনই কুস্তির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জব্বারের বলীখেলার গতবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শাহজালাল বলীর কাছে। অন্যদিকে এবারও তৃতীয় হয়েছেন খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা।  এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠের অস্থায়ী মঞ্চে শুরু হয় বলীদের লড়াই। সকাল থেকে শতাধিক বলী রেজিস্ট্রেশন করলে যাচাইবাছাই শেষে মূল মঞ্চে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৮০ বলী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বেলুন উড়িয়ে ঐহিত্যবাহী এ মেলার উদ্ধোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন।  প্রতিযোগিতা শুরুর আগ থেকেই কানাই কানাই পূর্ণ হয়ে উঠে লালদিঘির ময়দান। আশপাশের বিভিন্ন ছাদ এবং ভবনের উঁচু স্থানে অনেকে ভিড় জমান। বেলুন উড়িয়ে প্রতিযোগিতা শুরুর পর শিষ-আর করতালির শব্দ ভেসে আসতে শুরু করে চারদিক থেকে। বলীরাও বিভিন্ন ভঙ্গিতে শারীরিক কসরত দেখিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিতে শুরু করে। ৮০ বলীর অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে  শেষ পর্যন্ত শুরু হয় বহুল প্রতিক্ষিত এ প্রতিযোগিতা। কখনো মুষ্ঠিবদ্ধ হাত, কিংবা কপাল-কাঁধ ঠেকিতে লড়তে শুরু করে বলীরা। শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালে মুখোমুখি হন মো. রাশেদ ও রাঙ্গামাটির সৃজন চাকমা বলী। অপর সেমিফাইনালে মুখোমুখি হন বাঘা শরীফ ও মো. রাসেল বলী। সেমিফাইনালে দুই ম্যাচ চলে প্রায় ৩০ মিনিট। সেমিফাইনালে বিজয়ী হয়ে ফাইনালে ওঠেন মো. রাশেদ ও বাঘা শরীফ বলী। অন্যদিকে তৃতীয় স্থান নির্ধারণীতে রাসেলকে হারিয়ে এবারও তৃতীয় হন সৃজন চাকমা। গত তিনবার জব্বারের বলীখেলায় অংশ নিয়ে তিনবারই তৃতীয় হয়েছেন সৃজন। খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি জেলায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন তিনি। ফাইনালে ১১ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস লড়াই বিশালকার শরীর আর চাহনিতে লড়াকু ভাব। দুজনের বাড়িই একই গুরুর শীর্ষ হওয়ায় একে অন্যজনকে চেনে খুব ভালোভাবেই। আবার দুজনের বাড়িও একই জায়গায়। তবে লড়াই শুরুর পর কেউ যেন কাউরে ছাড়ে না। ফাইনালে ওঠে বাঘা শরীফ ও মো. রাশেদ বলী দু’জনই মরিয়া হয়ে উঠে জেতার জন্য। চলতে থাকে একের পর এক ঘাত প্রতিঘাত। এভাবে কখনো ঘায়েল হচ্ছিল বাঘা শরীফ, ঘুরে দাঁড়িয়ে তারপর বাহু কিংবা কপাল ঠেকিয়ে বিড়বিড় করে কথা বলে দু’জনই। তারপর আবারও চলে লড়াই। এভাবে একে একে প্রায় ১১ মিনিট জমজমাট লড়াই চলে বাঘা শরীফ ও রাশেদ বলীর মধ্যে। শুরু থেকে জিততে মরিয়া হলেও শেষ দিকে এসে হাল ছেড়ে দেয় রাশেদ বলী। হঠাৎ সতীর্থ বাঘা  শরীফের হাত তুলে ধরে জানান দেয় হার মানার।  এভাবেই ফাইনালে প্রায় ১১ মিনিট লাড়াইয়ের পর বাঘা শরীফের হাত উচিয়ে ধরেন রাশেদ। এ সময় চ্যাম্পিয়ন শরীফ অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীখেলায় অংশ না নিয়ে আমাকে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।  অন্যদিকে রানার্স আপ মো. রাশেদ বলেন, আমি আগে বলীখেলায় অংশ নেইনি। আমাকে জব্বারের বলী খেলায় নিয়ে এসেছেন শরীফ ভাই। তিনি আমার সিনিয়র। তাই তাকে জয়ী করে দিয়েছি। চ্যাম্পিয়ন শরীফ ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন। আমার জন্যেও দোয়া করবেন। অন্যদিকে নিজের দুই শিষ্যকে সুযোগ করে দিতে এবার খেলায় অংশ নেননি কুমিল্লার শাহজালাল বলী। এবারও অংশ নিয়ে গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীর সামনে আবারও জয়ের মুকুট অর্জনের সুযোগ থাকলেও শিষ্যদের জন্য সেটি ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। এভাবে বলী খেলায় কুমিল্লার ওস্তাদ-সতীর্থদের এমন ভালোভাসাকে অভিনন্দন জানাতে ভুলে নি চট্টগ্রামের দর্শকরা। ফাইনাল শেষে হাততালি ও বাঁশি বাজিয়ে ভালোবাসার উষ্ঞ ভালোবাসার জানান দিয়েছে তারাও।  পতেঙ্গা থেকে আসা তরুণ মো. ইমতিয়াজ কালবেলাকে বলেন, ‘বলী প্রতিযোগিতায় ওস্তাদ-সতীর্থদের এমন ভালোবাসা দেখে খুবই ভালো লেগেছে।’
২৫ এপ্রিল, ২০২৪
X