২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নেইমারকে ধরে রাখতে আত্মবিশ্বাসী সান্তোস
২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নেইমারের সঙ্গে চুক্তি নবায়নে আশাবাদী ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোস। ক্লাবটির সভাপতি মার্সেলো তেইশেইরা নিশ্চিত করেছেন, নেইমারের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো এখন সান্তোসের অন্যতম শীর্ষ অগ্রাধিকার এবং এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে।
সম্প্রতি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছিলেন নেইমার। তবে সান্তোস বোর্ড মনে করে, ক্লাবের সঙ্গে তার পথচলা আরও দীর্ঘ হতে পারে। শৈশবের ক্লাবে ফিরে এসে এই মৌসুমের শুরুতে সান্তোসকে ব্রাজিলের সেরি ‘এ’ থেকে অবনমন সংকট থেকে রক্ষা করতে বড় ভূমিকা রাখেন ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা ফরোয়ার্ড।
সৌদি আরবের আল-হিলালে সময় কাটানোর পর সান্তোসে ফিরে ইনজুরির সমস্যায় ভুগতে হয়েছে নেইমারকে। তবুও মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাঁটুর নতুন মেনিসকাস চোট নিয়েই মাঠে নামেন তিনি এবং ক্রুজেইরোর বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ে দলের নেতা হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। সেই জয়েই মূলত সান্তোসের প্রথম বিভাগে থাকার পথ নিশ্চিত হয়।
তবে ম্যাচ শেষে নিজের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে নেইমার বলেন, আপাতত তিনি নিশ্চিত নন সামনে কী হবে। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে, মানসিকভাবে দূরে গিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে চান তিনি। তবে একই সঙ্গে এটিও স্পষ্ট করেন, তার অগ্রাধিকার বরাবরই সান্তোস।
২০২৫ মৌসুমে লিগে ২০ ম্যাচ খেলে ৮ গোল ও ১টি অ্যাসিস্ট করেন নেইমার। দীর্ঘ সময় পর ধারাবাহিকভাবে খেলতে পারার কারণে এই পরিসংখ্যানকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে ক্লাব।
ক্লাব সভাপতি মার্সেলো তেইশেইরা জানিয়েছেন, নেইমারের সঙ্গে চুক্তি বাড়ানোর বিষয়ে দুই পক্ষই উৎসাহী। তবে বিষয়টি আর্থিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগোতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, “নেইমারের চুক্তি নবায়ন এই মুহূর্তে আমাদের অগ্রাধিকারের শীর্ষে। আমাদের একটি নির্দিষ্ট বাজেট কাঠামো আছে, সেটার মধ্যেই আমরা সমাধান খুঁজছি। লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৬ পর্যন্ত তার বর্তমান চুক্তিকে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সম্প্রসারণ করা।”
সভাপতি আরও যোগ করেন, নেইমারের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা, খেলোয়াড় নিজে এবং সান্তোস—সব পক্ষের মধ্যেই সদিচ্ছা রয়েছে, যা আলোচনার জন্য ইতিবাচক ভিত্তি তৈরি করেছে। তিনি বলেন, “২০২৬ বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করেই নেইমারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি বড় অংশ সাজানো। সেই লক্ষ্য পূরণে আমরা আত্মবিশ্বাসী।”
নেইমার এর আগে ব্রাজিলের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ২০১৪ সালে চোটে ছিটকে পড়ার আগে ছিলেন দলের প্রধান ভরসা। ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালেই থামে ব্রাজিলের যাত্রা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখন পর্যন্ত তার একমাত্র শিরোপা ২০১৩ কনফেডারেশনস কাপ।
২০২৩ সালের পর জাতীয় দলের হয়ে আর খেলা হয়নি নেইমারের। বর্তমান ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, শুধুমাত্র পুরোপুরি ফিট খেলোয়াড়দেরই বিশ্বকাপে বিবেচনা করবেন। তবে নেইমারকে নিয়ে তিনি বলেন, যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারলে তার জন্য দরজা খোলা রয়েছে।
এদিকে হাঁটুর সমস্যার কারণে নেইমারকে অল্প পরিসরের একটি অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। এরপর দ্রুত মাঠে ফেরার লক্ষ্যে একজন বিশেষ ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করবেন তিনি।
সব মিলিয়ে, চোট ও বয়সের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ২০২৬ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নেইমার–সান্তোস সম্পর্ক আরও দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনাই দেখছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।