বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ৬ দফা দাবি
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি প্রতিরোধে ৬ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেলে বুয়েট শহীদ মিনারের পাদদেশে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে সমাদৃত এবং শীর্ষস্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর এ আবরার ফাহাদ ভাইয়ের নৃশংস মৃত্যুর মাধ্যমে বুয়েট বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাসে রূপ নেয়। বুয়েটে সর্বশেষ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে যে নিরাপদ এবং সুন্দর একটি ক্যাম্পাস আমরা উপহার হিসেবে পেয়েছি, তা দেশব্যাপী সকলের কাছে প্রশংসিত এবং অনুকরণীয়। তবে যে কলুষিত হাতগুলোর কারণেই ঝরে গিয়েছিল আমাদেরই নিষ্পাপ মেধাবী প্রাণ, সে কলুষিত হাতগুলো পরবর্তীতে বারে বারে ভিন্ন ভিন্নভাবে পুনরায় সে অপরাজনীতির অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা চালিয়েছে, ক্যাম্পাসের এই সুন্দরতম ভিত্তিকে পুনরায় ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে। তবে ২০১৯ এর সেই সময়টির পর থেকে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে উদ্যম, সৎ সাহস আর প্রেরণা পেয়েছিল সেটিই প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ছাত্ররাজনীতি অনুপ্রবেশ এর সকল অপচেষ্টাকে রুখে দিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ঐক্য গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছিল। তবে এখনো বারে বারে পড়াশোনা কিংবা একাডেমিকসের চূড়ান্ত চাপ থাকার পরেও আমাদের এই নিরাপদ ক্যাম্পাসটিকে রক্ষা করতে আমাদের সর্বদা সজাগ থাকতে হয়, করতে হয় নিরন্তর নিয়মিত সংগ্রাম। শিক্ষার্থীদের যেন সেই কলুষিত হাতদের বিরুদ্ধে ন্যায়ের লড়াই, সত্যের লড়াই চালিয়ে যাওয়া যেন শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নিত্য অংশ হয়ে গিয়েছে। তারা বলেন, এমনই একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা আমাদেরই এ প্রাণের বুয়েট ক্যাম্পাসে ঘটে গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে। রাত ১টার দিকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে পারি, বুয়েটে একটি বিশেষ রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের বেশ কজন শীর্ষস্থানীয় নেতারা এসেছেন এবং তারা ক্যাম্পাসের মেইন গেট দিয়েই প্রবেশ করে ভেতরে ঢুকেছেন। রাত সাড়ে ১০টার পরে যেখানে নিরাপত্তার কারণে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি নেই সেখানে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বহিরাগত ব্যক্তিদের মধ্যরাতেই আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ ঘটে। ঘটনার তীব্রতা বাড়তে থাকে রাত বাড়ার সাথে সাথে, একের পর এক বহিরাগত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ক্যাম্পাসের মেইন গেটের সামনে আসতে থাকে। বিপুলসংখ্যক বহিরাগত ক্যাম্পাসে অনায়াসে প্রবেশ করতে থাকে, এবং একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখতে পায়, মিছিলের মতো করে বিশাল একটি জনবহর হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসে রাত ২টার পর প্রবেশ করতে থাকে। দুঃখজনকভাবে এই বিশাল জনবহরের সকলেই বহিরাগত ছিল এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করে মধ্যরাতের সেই সময়টায় বিশেষ ঐ ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের চিনতে পারে যা সুস্পষ্ট জানান দেয় এত বিপুল জনসমাগম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ এমন একটি ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া এত বড় একটি রাজনৈতিক সমাগম এবং বহিরাগতদের আগমন ক্যাম্পাসের মর্যাদার প্রতি তীব্র অপমানজনক। একই সাথে এটি একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশের নিরাপত্তার ব্যাপারকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর কোনোরূপেই ওই ন্যক্কারজনক ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়ার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, মধ্যরাতে বহিরাগত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের এমন দাপটসহ প্রবেশ কর্তৃপক্ষ এবং ডিএসডব্লিউর দৃষ্টির অগোচরে হওয়া অসম্ভব। ঘটনা ঘটে যাওয়ার দেড় দিন পার হয়ে গেলেও ডি.এসডব্লিউ থেকে ওই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত কোনো প্রকার সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা এখন পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আসেনি। ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে তারা প্রবেশের অনুমতি কীভাবে কর্তৃপক্ষ থেকে পেয়েছিল এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটি এখনো ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং সন্দেহের সঞ্চার করে যে, কীভাবে এবং কোন মদদে তারা প্রবেশ করতে পারল। এর সবই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো: ১. ২৮ মার্চ মধ্যরাতের ক্যাম্পাসে এমন অনুপ্রবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধের নীতিমালার গুরুতর লঙ্ঘন এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক চর্চা। এমন নীতিমালাবহির্ভূত রাজনৈতিক চর্চায় সে মধ্যরাতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বী। যে ওই বিশেষ রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে পূর্বে ক্যাম্পাসের অরাজনৈতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে তার পদ থেকে অব্যাহতি নিবে বলে জানায়, কিন্তু পরবর্তীতে এবং বর্তমানে সে অত্যন্ত প্রকাশ্যে তার রাজনৈতিক চর্চা চলমান রেখেছে এবং ২৮ মার্চ মধ্যরাতে বহিরাগতদের সাথে নিরঙ্কুশ যোগাযোগ, তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানো, গার্ডদের সাথে কথা বলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সের সাথে সাক্ষাৎ, তাদের গাড়ি বের করানো কিংবা প্রবেশ করানো এই সকল সক্রিয় ভূমিকায় তাকে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে আমরা বুয়েটের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২৮ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বির বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিল এর দাবি জানাচ্ছি। ২. ওই ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সাথে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার চাই। ৩. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, তারা কেন, কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা বুয়েট প্রশাসন কর্তৃক আসতে হবে। ৪. উপরোক্ত ১নং এবং ২নং দাবি আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে আমরা সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ডিএসডব্লিউর পদত্যাগ চাই। ৫.  ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। এর প্রতিবাদ হিসেবে আগামী ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি। ৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনারকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওেয়া যাবে না- এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। নিরাপদ ক্যাম্পাসের নিশ্চয়তা, রাজনীতিবিহীন পরিবেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা বজায় রাখা সম্পূর্ণরূপে বিঘ্নিত হয়েছে ২৮ মার্চ মধ্যরাতের প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার মাধ্যমে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার সর্বদা বিরোধী।
২৯ মার্চ, ২০২৪

ছাত্র রাজনীতি হতে হবে শিক্ষার্থীবান্ধব : ছাত্রলীগ সভাপতি
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিতে ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীবান্ধব হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মিসভায় এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দেশে অনেককিছুর প্রথমের সাক্ষী শাবিপ্রবি। তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু, আন্তর্জাতিক জার্নালে সবচাইতে বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশনা, সেমিস্টার পদ্ধতি চালু ইত্যাদি। এ ছাড়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নানামুখী  প্রশংসা করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এ নেতা। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সাদ্দাম বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তারা আরও নানা ধরনের নতুন নতুন আইডিয়া, উদ্ভাবন, শিক্ষা-গবেষণাসহ নানা কর্মকাণ্ডে  অবদান রাখার আশা ব্যক্ত করেন তিনি। এ ছাড়াও দীর্ঘ এক দশক যাবৎ কমিটি গঠন থেকে বঞ্চিত শাবিপ্রবি ছাত্রলীগে কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে গঠনের বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটকে আরও গতিশীল করতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হবে। সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে শেখ ওয়াসিফ আলী ইনান বলেন, ছাত্রলীগের কর্মীদের নেতিবাচক উপাদানগুলোকে বাদ দিতে হবে। ইতিবাচক গুণাবলি অর্জনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এমন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে যাতে সেটি হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্ভরতার ঠিকানা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দক্ষতা, সাংস্কৃতিক, সমন্বয়গত উন্নয়নের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ভূমিকা রাখবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের  উপ তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক নাজমুস সাকিবের সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য দেন সহসভাপতি রিপন মিয়া, আল আমিন রহমান, জয়নাল আবেদীন ও আবু সাঈদ কনক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুর খান কলিন্স ও কাজল দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক আকিব মোহাম্মদ ফুয়াদ, উপ দপ্তর সম্পাদক বারেক হোসাইন আপন, উপ-অটিজমবিষয়ক সম্পাদক মো. ফাহিম চৌধুরী ও সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বি প্রমুখ।
১৯ মার্চ, ২০২৪
X