সেন্টমার্টিন বন্ধক দিয়ে ক্ষমতা চাই না
-আমাদের যারা ভোট চোর বলে, তারা হলো ভোট ডাকাত
-একজন নির্বাচিতের জায়গায় আরেক নির্বাচিতকেই আসতে হবে
-যথাসময়ে সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে
--অনেকেই প্রার্থী হতে পারে, শত ফুল ফুটতে দিন। যে ফুলটি সুন্দর সেটি বেছে নেব
-দেশে অপরাধ করে পালিয়ে বিদেশে গিয়ে অনেকে মানবাধিকার বক্তা হয়েছে
-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানে ওপর নির্ভরতা কমাতে ব্রিকসে যোগদান
সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ (বন্ধক) দিলে ক্ষমতায় থাকতে সমস্যা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ক্ষমতার জন্য তা করবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, এই দেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় (২০০১ সালে) থাকতে পারতাম। আর এখনো যদি আমি বলি, ওই সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে আমাদের ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটি হবে না। গতকাল বুধবার সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। তখন তো গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্টমার্টিন বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে আসতে চায়? তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না, আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, কাউকে আক্রমণ করবে—এ ধরনের কাজ আমরা হতে দেব না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি।
আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, কী এমন পরিস্থিতি যে নির্বাচন আগে দিয়ে মুক্তি দিতে হবে? নির্বাচন যখন সময় হবে তখন হবে। অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছি। আপনারা কি চান না, এই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকুক?
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের অভিযোগ করে বাংলাদেশে নির্বাচন বাধাগ্রস্তকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে লেখা ছয় কংগ্রেস সদস্যের লেখা চিঠির বিষয়টি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা দেশে অপরাধ করেছে, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তারা বিদেশে গিয়ে এখন মানবাধিকারের বিরাট প্রবক্তা হয়ে গেছে। কেউ কেউ দুর্নীতির ওপর বক্তাও হয়ে গেছে। এ সময় তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। ঠিক যেভাবে আমাদের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সম্প্রদায় প্রতিবাদ করেছে, বলেছে—না, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া তথ্য। সেভাবে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। মানুষকে তারা বিভ্রান্ত করছে। আমি দেশবাসীকে বলব এ সব অপপ্রচারে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। এরা বলতেই থাকবে, যত ইলেকশন সামনে আসবে, আরও বেশি বলবে। কিন্তু নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে হবে, আসলে ভালো আছেন কি না, দেশটা ভালো চলছে কি না, দেশটা এগোচ্ছে কি না, দেশটার আরও উন্নতি হবে কি না।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে গণতন্ত্রের প্রবক্তা সেজেছে স্বাভাবিকভাবে তারা কখনোই এদেশের কল্যাণ চাইবে না। তারা একটা ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইবে। সেখানে দেশি-বিদেশি নানা রকমের লোকই থাকবে। দেশের সচেতন নাগরিক এসবকে কেন গুরুত্ব দেবে? মানুষের যদি পছন্দ হয় আমাকে ভোট দেবে, না হয় না দেবে। না দিলে নেই। আমি থাকব না। আমি কি ভোট চুরি করতে যাব? দুর্ভাগ্য হলো আমরা ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করলাম আর আমাদের যারা ভোট চোর বলে, তারা হলো ভোট ডাকাত। যাদের উত্থানটাই হলো ডাকাতি করে, খুন করে হত্যা করে।
নির্বাচনীকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেন, এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না। জনগণ গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চায়, নাকি ২০০৭ সালের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই জরুরি অবস্থা, আবার সেই ধরপাকড় সেগুলো চায়, এটা দেশের মানুষকে বিবেচনা করতে হবে।
নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, প্রার্থী হওয়ার জন্য অনেকেরই আগ্রহ থাকবে এতে তো কোনও সন্দেহ নাই। কাকে প্রার্থী করা হবে কাকে হবে না এ ব্যাপারে আমাদের দলেরও একটা লক্ষ্য থাকে। একটা অবাধ নিরপেক্ষ স্বচ্ছ নির্বাচন হবে, এটা আমাদেরও দাবি। অনেকেই তো প্রার্থী হতে পারে। শত ফুল ফুটতে দিন, যে ফুলটি সবচেয়ে সুন্দর, সেটি আমি বেছে নেব।
ব্রিকসে যোগ দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাচ্ছি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো একটার ওপর যেন নির্ভরশীলতা না হয়। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যেন আমাদের অর্থ বিনিময়ের সুযোগ থাকে। আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যেন আমরা সহজে ক্রয় করতে পারি, আমার দেশের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারি। সেসব বিষয় বিবেচনায় করেই ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আন্তর্জাতিক কোনো মুদ্রা চালু করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুচকি হেসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদার ব্যাপারি জাহাজের খবর নিতে বলছেন। এখানে আমরা দেখব যে বিকল্প কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অর্থ ব্যবহারের ব্যবস্থা কেউ যদি নেয়, আমরা তার সঙ্গে আছি। এরই মধ্যে আমরা কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি, আমরা যেন আমাদের নিজস্ব অর্থের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারি, সেই পদক্ষেপ আমরা এরই মধ্যে নিয়েছি।
নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে অস্থিরতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ থাকার পরে যখন দাম বাড়ে—কিছু লোক তো মজুতদারি করে। যারা এভাবে মজুতদারি করে কালোবাজারি করার চেষ্টা করে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আপনারাও (গণমাধ্যম) খুঁজে বের করে দেন। কোথায় কে মজুত করল। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় ব্যবসায়ীদের জন্য সব ধরনের প্রণোদনা দিয়েছি। গ্রামের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেটা দেখেছি। এখন ঈদ উপলক্ষে এক কোটি মানুষকে বিনা পয়সায় খাবার দেব, এটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
২২ জুন, ২০২৩