যুগপৎ আন্দোলন সফল পরিণতির দিকে যাচ্ছে : আমীর খসরু
সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলন সফল পরিণতির দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে দেড় ঘণ্টা গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমমনা দল গণফোরাম ও পিপপল পার্টিও সাথে বৈঠক শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন। বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত ছিলেন। সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতেই এই বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকের পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের সাথে যারা জড়িত সবাই একেবারে সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচি পালন করছে। এই আন্দোলনের আমরা সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত করতে পেরেছি। ফলে আন্দোলন একটি সফল সমাপ্তির দিকে যাচ্ছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই প্রেক্ষাপটে আমরা বসেছি, মতবিনিময় করেছি, আন্দোলনের বিভিন্ন দিকগুলো বিশ্লেষণ করেছি। তার মাধ্যমে আগামীদিনে আন্দোলনের কর্মসূচি কি হবে সবাই মতামত দিয়েছেন এবং সেইভাবে আমরা সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাবো। গণফোরামের (মন্টু) সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু বলেন, বাংলাদেশের জনগণের একটি মাত্র দাবি একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। এর কোনো বিকল্প নাই। আমরা অতীতে ’১৪ ও ’১৮ নির্বাচন দেখেছি। বর্তমানে যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি আমাদের ১৮ সালে পরিষ্কার বলেছিলেন আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা কথা দিচ্ছি যে, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হবে আপনারা নির্বাচনে আসেন। সেই নির্বাচনে আমরা আশা নিয়ে গিয়েছিলাম সেই নির্বাচনের পরিণতি কী হয়েছে আপনারা জানেন। তিনি আরও বলেন, সেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে আজকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নটা এসেছে যে, এই প্রশাসনের অধীনে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। ওদের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে বৈধ্যতা দিয়ে দেওয়া। বার বার এভাবে অবৈধতা মেনে দেওয়া যায় না। আজকে দেশকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছে এখন এখানে একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য আমরা এই লক্ষ্যে আন্দোলন করছি। আগামী জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট ধরে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির মধ্যে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া বিএনপি ও সমমান দলগুলো দুর্গা পূজা শেষে ‘কঠোর কর্মসূচি’ দেওয়ার কথা বলেছে। তাদের দাবি, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। এরপর নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। বৈঠকে গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জগলুল হায়দার আফ্রিক ও মহিউদ্দিন আবদুল কাদের এবং পিপলস পার্টির বাবুল সরদার চাখারি, মোহাম্মদ আবদুল কাদের ও পারভিন নাসের খান ভাসানী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ছিলেন। গত কয়েকদিনে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশ এবং এনডিএম এর সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করে বিএনপি।
১৭ অক্টোবর, ২০২৩

জুলাই থেকে লাগাতার যুগপৎ আন্দোলন
ঈদুল আজহার পর অভিন্ন একদফার ভিত্তিতে ফের যুগপৎ আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি ও এর মিত্ররা। মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ করে এরই মধ্যে বৃহত্তর গণআন্দোলনের অভিন্ন এই দফা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। ঢাকায় বড় সমাবেশ বা জমায়েত করে তা ঘোষণা করবে বর্তমানে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপি। কর্মসূচি ‘একদফা’র হলেও এর মধ্যে ছয়-সাতটি দাবি রয়েছে। আর ‘একদফা’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১০ দফার বিলুপ্তি ঘটবে। জানা গেছে, একদফার যৌথ ঘোষণার পর থেকে লাগাতার আন্দোলনে যাবে বিএনপি ও যুগপতের মিত্ররা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। তবে কর্মসূচি এখনো হয়নি। এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে। যুগপতের শরিক সব দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে একদফা ঘোষণার আগেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। যুগপৎ আন্দোলন ফের শুরু হলেও বিভিন্ন ইস্যুতে দলীয় কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে। এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে রাষ্ট্র মেরামতের ‘যৌথ রূপরেখা’ও চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এটিও ঘোষণা করা হবে; কিন্তু দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আন্দোলনের অভিন্ন একদফা ঘোষণার আগেই এটি ঘোষিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে ২১ জুন ঢাকায় একটি সেমিনার করবে বিএনপি। সেখানে ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকদের পাশাপাশি সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন পেশাজীবী নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। সেমিনারে নির্বাচনকালী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কেন প্রয়োজন, কোন প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করা হয়, কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হবে। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। একদফার আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনে চলছে। দল যখন উপযুক্ত মনে করবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে, তখনই একদফার আন্দোলনের ঘোষণা আসবে। তিনি আরও বলেন, চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে। জনসম্পৃক্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করা হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফার ভিত্তিতে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া বিএনপি। ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত যুগপৎভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। ওই সময় পর্যন্ত গণমিছিল, গণঅবস্থান, মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে ঈদের পর থেকে বিএনপি এককভাবে কর্মসূচি করছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরে পদযাত্রার কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। বিএনপির কর্মসূচির মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের ছয়টি বড় শহরে ১১ দফার ভিত্তিতে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করছে দলটির প্রধান তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বুধবার চট্টগ্রামে কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারুণ্যের এই সমাবেশ শুরু হয়েছে। ২২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। ঢাকায় তারুণ্যের ওই সমাবেশ ঘিরে সরকারকে বড় ধাক্বা দেওয়ার পরিকল্পনা বিএনপির। ঈদের পর থেকে বিএনপির পাশাপাশি যুগপতের শরিকরাও কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে। যুগপতের ধারায় দলীয় ব্যানারে কর্মসূচি পালন করছে তারা। গণতন্ত্র মঞ্চ গত ৪ জুন থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ করেছে। ওই রোডমার্চে বাধা ও হামলার প্রতিবাদে ১২ জুন ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ছয় দলীয় এই জোট। এ ছাড়া অসহনীয় লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট সমাধানের দাবিতে তারা আগামীকাল সোমবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ করবে। ঈদের পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চের কর্মসূচি দিতে পারে গণতন্ত্র মঞ্চ। জানা গেছে, চূড়ান্ত হওয়া গণআন্দোলনের অভিন্ন একদফায় ছয়-সাতটি দাবি রয়েছে। সেগুলো হলো সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি; মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার; ফরমায়েসি সাজা বাতিল; নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, জুলাই থেকে একদফার ভিত্তিতে লাগাতার যুগপৎ আন্দোলন শুরুর পর প্রথম ধাপে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিই থাকবে। হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কোনো কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি ও মিত্ররা। তৃণমূল ও কেন্দ্রে ঘুরেফিরে আবারও গণসমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, পদযাত্রা, গণঅবস্থান, মানববন্ধন, গণমিছিলের মতো কর্মসূচি পালিত হবে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন হবে ঢাকামুখী। সেক্ষেত্রে ‘চলো চলো ঢাকা চলো’, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকায় জমায়েত এর মতো কর্মসূচি আসবে। দলটির সেই আন্দোলনের ব্যাপ্তি ‘স্বল্প সময়ের’ হবে বলে নেতারা জানান। জানা গেছে, গণআন্দোলনের অভিন্ন একদফা চূড়ান্ত হওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের ‘যৌথ রূপরেখাও’ চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এ নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির মধ্যে এখন তেমন কোনো সমস্যা বা মতানৈক্য নেই। এমনটি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ রূপরেখা চূড়ান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে এখন শুধু শব্দগত কিছু হেরফের হবে। আশা করি, দ্রুতই তা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের একদফা ঘোষণার আগেই ‘রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ রূপরেখা’ ঘোষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
১৮ জুন, ২০২৩
X