অনিরাপদ শিশুখাদ্যে বাজার সয়লাব
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনিরাপদ শিশুখাদ্যে সয়লাভ বাজার। শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী বেশ কয়েকটি কোম্পানি এসব খাবার প্রত্যন্ত অঞ্চল লক্ষ্য করে গ্রামের বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব শিশুখাদ্য নিয়মিত খাচ্ছে শিশুরা। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। গ্রামের বাজারে ভোক্তা অধিকারের নজর কম থাকায় এসব খাবার সহজেই উৎপাদনকারীরা বিক্রি করতে পারছে। তা ছাড়া এসব খাবারের স্বাদ বাড়াতে অতিরিক্ত চিনি, বিট লবণ ও শুকনা মরিছের গুড়া ব্যবহার করা হচ্ছে।  সরেজমিনে কুলাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখা যায়, বিভিন্ন গ্রামের দোকানে এসব অনিরাপদ শিশুখাদ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা এসব খাবার হরহামেশা কিনে খাচ্ছে। খাবারের স্বাদ বাড়াতে অতিরিক্ত মাত্রায় বিট লবণ ব্যবহার করায় এসব খাবার শিশুদের নিকট বেশ জনপ্রিয়। এসব শিশু খাদ্যে বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন নেই। উৎপাদনকারীরা দোকানদারদের বেশি লাভ দিয়ে এসব খাবার বিক্রি করে। গুড়া মরিচের প্রলেপ উপরে দিয়ে চিপস বিক্রি করে কালাম ফুড প্রেডাক্টস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্যাকেটের গায়ে এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা হবিগঞ্জের লাখাই দেওয়া হয়েছে। কোয়ালিটি ডুরিমন নামে একটি কোম্পানি ‘মিজলী’ নাম দিয়ে ভুট্টা বিক্রি করে। অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করে এ খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিশুদের আকর্ষণ বাড়াতে ছোট প্লাস্টিকের বলের ভেতরে বরইয়ের বিচি গুড়া করে বিক্রি করা হয়। খাবারে স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয় শুকনো মরিচের গুড়া। অনিরাপদ খাবার বিক্রির আরেক কৌশল লটারি। শিশুদের আকর্ষণ বাড়াতে খাবারের সাথে লটারি রাখা হয়। তৃষা আচার নামে এক উৎপাদনকারী আকর্ষণীয় প্লাস্টিকের কাপে মানহীন আচার বিক্রি করে। এসব আচার লটারির লোভে শিশুরা ক্রয় করে থাকে। লটারি হিসেবে বেলুন, প্লেট, নগদ অর্থ, বাটিসহ আকর্ষণীয় সামগ্রী রাখা হয়। এ ছাড়াও গ্রামে ফেরি করে  বিক্রি হয় হাত দিয়ে তৈরি চিপস। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এসব চিপসে সয়লাভ গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘর। এসব খাদ্য বাজারজাতকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন নেই। হায়দরগঞ্জ মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফি বলেন, প্লাস্টিকের বলের আচার আমি প্রতিদিন খাই। আমার কাছে খুবই স্বাদ লাগে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, কোম্পানির লোকেরা এগুলো আমাদের দিয়ে থাকে। এসব খাবারে শিশুদের চাহিদা বেশি থাকে।  খাবার উৎপাদনকারী এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তারা ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করার কথা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃষা আচারের ম্যানেজার জানান, আমাদের শুধু ট্রেড লাইসেন্স আছে। তা দিয়ে আমারা ব্যবসা পরিচালনা করছি। এসব খাবার বাজারজাতে বিএসটিআইয়ের অনুমোধন প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তার জানান, অনিরাপদ শিশু খাদ্যের প্রভাব খুবই মারাত্মক হতে পারে। সাময়িক এসব খাবারের স্বাদ পাওয়া গেলেও ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়তে পারে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, অনুমোদনহীন যে কোনো ভেজাল খাদ্য নিষিদ্ধ। অনিরাপদ শিশু খাদ্য বিক্রির বিরুদ্ধে আভিযান পরিচালনা করা হবে।
২৩ মার্চ, ২০২৪
X