খামখেয়ালিতে হাতছাড়া রোমানিয়ার শ্রমবাজার
মাত্র সাড়ে তিন বছরে ৩৫ হাজারের বেশি শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছিলেন পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায়। সহজে ভিসা প্রাপ্তি এবং কাজের সুযোগ থাকায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছিল দেশটি। বাংলাদেশে স্থাপিত হয়েছিল রোমানিয়ার অস্থায়ী ভিসা সেন্টারও। তবে কিছুদিনের মধ্যেই হোঁচট খায় সেই উদ্যোগ। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হঠকারী আচরণ, বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির খামখেয়ালি এবং অতি লোভের পাশাপাশি শ্রমিকদের মধ্যেও তৈরি হয় পশ্চিম ইউরোপে পাড়ি জমানোর প্রবণতা। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ভিসা সেন্টার। সর্বশেষ গত ছয় মাসে বেশ কিছু শ্রমিক ভিসা পেলেও বিএমইটির কিছু কর্মকর্তার খামখেয়ালিপনার কারণে যথাসময়ে পাড়ি জমাতে পারছেন না তারা। এসব কারণে ক্ষয়িষ্ণু শ্রমবাজারের আশার আলো হয়ে আসা রোমানিয়ার শ্রমবাজারও এখন পড়তির দিকে। আর এই সুযোগে রোমানিয়ার শ্রমবাজার দখলে নিচ্ছে নেপালসহ দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অন্য দেশগুলো। জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সংখ্যায় কম হলেও দীর্ঘ বছর ধরেই বাংলাদেশি শ্রমিকরা রোমানিয়ায় যান। তবে মাঝখানে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে বন্ধ থাকে শ্রমিক রপ্তানি। ২০২০ সালের দিকে পুরোদমে শ্রমিকদের গন্তব্য হয়ে ওঠে রোমানিয়া। এর পরের সাড়ে তিন বছরে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি শ্রমিক যান দেশটিতে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আসে রোমানিয়ার ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল। তখন বলা হয়েছিল, দেশে অস্থায়ী ভিসা কনস্যুলেট অফিস স্থাপন করা হবে। প্রাথমিক অবস্থায় কাকরাইলের বিএমইটি কার্যালয়ের ৬ তলায় অস্থায়ী অফিস থেকে কর্মীদের সরাসরি সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেন। ৬ মাসে ১৫ হাজার কর্মীর নামে ভিসা দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছিল। তবে কিছু দিন যেতে না যেতেই সেই অফিস গুটিয়ে দিল্লির রোমানিয়ান অফিসে ফিরে যান কর্মকর্তারা। ওই সময় অভিযোগ উঠেছিল, বিএমইটির কয়েকজন কর্মকর্তা এবং দুটি রিক্রুটিং লাইসেন্সের মালিক অনৈতিক সুবিধা চেয়েছিলেন। একই সঙ্গে রোমানিয়ান কর্মকর্তাদের ভয়ভীতিও দেখানো হয়েছিল। এরপর পেরিয়ে গেছে বছরেরও বেশি সময়। বিএমইটি কিংবা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সেই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শ্রমিক রপ্তানির এমন সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পরেও দায়ীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে রোমানিয়াগামী শ্রমিকদের। কারণ রোমানিয়ার দূতাবাস রয়েছে দিল্লিতে। বাংলাদেশিদের যে কোনো বিষয় দিল্লির দূতাবাসেই সমাধান করতে হয়। ভিসার ক্ষেত্রেও আবেদন করা কর্মীদের স্কাইপির মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নিয়ে ভিসা দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করছে দূতাবাস। জানা যায়, গত কয়েক মাসে ছয় শতাধিক শ্রমিককে রোমানিয়া থেকে ভিসা দেওয়া হয়। তবে এর মধ্যে সেখানে যেতে পারছেন অল্প কয়েকজনই। বাকিরা বিএমইটির নানা শর্তের বেড়াজালে আটকে আছেন। ভিসা পাওয়া একজন শ্রমিক কালবেলাকে বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে ভিসা পেয়েছি। এর আগে এই ভিসার জন্য অপেক্ষা করেছি প্রায় তিন বছর। কিন্তু এখনো যেতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যেই কোম্পানির ভিসা পেয়েছি সেখানে বাংলাদেশি তিনজন, ভারতীয় দুজন এবং নেপাল থেকে ৮ জন ভিসা পেয়েছে। বাকি দেশের সবাই রোমানিয়া চলে গেলেও বিএমইটি থেকে বলা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে ভিসা অ্যাটেস্টেশন (সত্যায়ন) করে ম্যানপাওয়ার কার্ড করতে হবে। যদিও একই প্রক্রিয়ায় ভারত এবং নেপালের শ্রমিকরা চলে গেছে। রোমানিয়ান কোম্পানি এতসব ঝামেলা নিয়ে আমাদের দেশের শ্রমিকদের কেন নেবে।’ আরও কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ভিসা পাওয়ার পরে এখন বিএমইটি থেকে বলা হচ্ছে, ওই কোম্পানির অ্যাটেস্টেশন লাগবে। এর জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কিন্তু অন্য দেশের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া লাগছে না। ফলে রোমানিয়ান কোম্পানি বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিষয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে। অন্যদিকে রোমানিয়ায় যাওয়ার পরেও শ্রমিকদের ক্ষেত্রে উল্টোচিত্র দেখা যায়। রোমানিয়ান দূতাবাস সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশি শ্রমিকদের রোমানিয়ায় পৌঁছানোর পরে বেশিরভাগেরই লক্ষ্য থাকে পশ্চিম ইউরোপের দেশে প্রবেশ করা। বিশেষ করে ইতালিতে অনুপ্রবেশ। বাংলাদেশি অনেক রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি রয়েছেন রোমানিয়ায়। যারা মূলত দালাল হিসেবে কাজ করেন। এসব দালাল শ্রমিকদের ইতালিতে পাঠিয়ে দেওয়ার চুক্তি করেন। অনেক ক্ষেত্রে দেশ থেকেই চুক্তি করে নেন। ২০২২ সাল থেকে রোমানিয়ায় রয়েছেন শাহ কামাল নামে একজন শ্রমিক। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘একজন দালালের মধ্যেমে রোমানিয়ায় যাওয়ার চুক্তি করি ৯ লাখ টাকায়। তখন বলা হয়েছিল, রোমানিয়ায় পৌঁছানোর পরে ইতালি প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। যদিও এর আগে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক রোমানিয়া থেকে ইতালি পাড়ি জমিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘রোমানিয়ায়ও কাজ রয়েছে। কিন্তু এর পরেও সবার লক্ষ্য থাকে ইতালি। ইদানীং রোমানিয়া সরকার শ্রমিকদের পালানোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ফলে চাইলেও ইতালি প্রবেশ করা যায় না।’ দূতাবাস সূত্র জানায়, রোমানিয়ায় বেশিরভাগ বাংলাদেশি শ্রমিক ইতালি বা আশপাশের দেশগুলোতে পালিয়েছেন। আর এই পালানোকে কেন্দ্র করে ব্যবসার ফাঁদ পেতেছে এক শ্রেণির দালাল। তারা ছোট ছোট কোম্পানির মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগের আবেদন জানায়। এরপর শ্রমিকরা রোমানিয়ায় গেলে চুক্তি করা হয় ইতালি বা অন্য দেশে পাঠানোর। এ কারণেই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। রোমানিয়ায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করা বেশ কয়েকজন প্রবাসী কালবেলাকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ শ্রমবাজার নিয়ে অরাজকতা চলছে। অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি শ্রমিকদের লোভ দেখিয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে। অনেক দালালও রয়েছে তাদের, যারা রোমানিয়ায় থাকে। এসব দালালের মাধ্যমে অনেকেই আশপাশের দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এসব কারণে রোমানিয়ান কোম্পানির কাছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দাম কমে গেছে। যার সুফল পাচ্ছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। ওইসব দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। তারা বলেন, যদি এই শ্রমবাজারটিকে ধরে রাখতে হয়, সে ক্ষেত্রে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। শ্রমিকদের পালানো বন্ধ করার পাশাপাশি দেশের অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া বিএমইটির এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা এসব অবৈধ কাজে উৎসাহ দেন। মন্ত্রণালয়কে বিষয়গুলো নিবিড়ভাবে নজরদারি করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারলে শ্রমবাজারটি বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছে ইতিবাচক হবে। রোমানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী কালবেলাকে বলেন, ‘রোমানিয়ার হিসাবে বাংলাদেশ থেকে গত সাড়ে তিন বছরে ৩৫ হাজার শ্রমিক এসেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই আশপাশের দেশগুলোতে চলে গেছেন। তবে কতজন গেছে, সেটা বলা সম্ভব নয়।’ তারা কেন চলে গেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক কারণ রয়েছে। কিছু লোকের ধারণা আছে পশ্চিম ইউরোপে গেলেই সব শান্তি। তবে তারা ওখানে গিয়ে যে বেটার অপরচুনিটি পেয়েছেন, বিষয়টা তেমন নয়। তবে বৈধভাবে গেলে বেটার সুযোগসুবিধা পেতেন। কিন্তু অবৈধভাবে যাওয়ার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রোমানিয়া থেকে অবৈধভাবে বর্ডার পার হয়ে চলে যাচ্ছেন।’ রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী আরও বলেন, ‘আমাদের দেশেও অনেক এজেন্সি আছে, যারা টাকা আয়ের জন্য বাংলাদেশ থেকে এখানে লোক পাঠায়। তাদের কাজ আছে না আছে, সেটি তারা দেখে না। যে কারণে অনেকে এসে কাজ না পেয়েও চলে যান।’ সার্বিক বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘শ্রমবাজার তৈরিতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। রোমানিয়ার ক্ষেত্রে বিমানবন্দর বা বিএমইটির মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে কিছু লোক বিদেশে চলে যায় কি না, সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। যাতে অবৈধ সুবিধা নিয়ে কেউ বিদেশে যেতে না পারে সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সতর্ক রয়েছে। অবৈধভাবে যারা রোমানিয়া যায়, তারা যাতে বিভিন্ন এজেন্সি বা বিমানবন্দর থেকে আর কোনো সুবিধা না নিতে পারে, তার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেব।’
২৩ মার্চ, ২০২৪

শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ‘রাবেডে’র আত্মপ্রকাশ
ইউরোপ ও উন্নত বিশ্বে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে রিক্রুটিং এজেন্সিস অব বাংলাদেশ ফর ইউরোপ অ্যান্ড ডেভেলপড কান্ট্রিজ (রাবেড)। গতকাল রোববার রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হীরক বর্ণালী ওভারসিজের আব্দুল আজিজ, মানহালি ওভারসিজের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাবিবুল করিম, অপরাজিতা ওভারসিজের আরিফুর রহমান ও আল আকসা ইন্টারন্যাশনালের কলি বিশ্বাস। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু জাপান, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপেই ৪ কোটি দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট সুযোগ। সে লক্ষ্যকে কাজে লাগাতে নির্দিষ্ট বয়সের জনশক্তিকে মোটিভেশনের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন এবং জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগ প্রয়োজন। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে রাবেডের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
২৪ জুলাই, ২০২৩

ইউরোপ ও উন্নত বিশ্বে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ‘রাবিডে’র আত্মপ্রকাশ
ইউরোপ ও উন্নত বিশ্বে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘রিক্রুটিং এজেন্সিস অব বাংলাদেশ ফর ইউরোপ অ্যান্ড ডেভেলপ কান্ট্রিস (রাবিড বা আরএএবিইডি)।  রোববার (২৩ জুলাই) রাজধানীতে রাওয়া কনভেনশনে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ হয়।  এ সময় অনান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হীরক বর্ণালী ওভারসিজের আব্দুল আজিজ, মানহালি ওভারসিজের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) হাবিবুল করিম, অপরাজিতা ওভারসিজের আরিফুর রহমান, আল আকসা ইন্টারন্যাশনালের কলি বিশ্বাস।   সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু জাপান, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪ কোটি দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট সুযোগ। সে লক্ষ্যকে কাজে লাগাতে নির্দিষ্ট বয়সের জনশক্তিকে মোটিভেশনের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ জন্য সরকারি, বেসরকারি সংগঠন এবং জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহের উদ্যোগ প্রয়োজন। সে লক্ষ্যকে সামানে রেখে রাবিডের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
২৩ জুলাই, ২০২৩
X