বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা আবারও নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জানোয়ারদেরও একটা ধর্ম আছে। ওদের সে ধর্মও নেই। ওদের মধ্যে কোনো মনুষত্ববোধ নেই। ওরা চুরি, লুণ্ঠন, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ছাড়া কিছুই জানে না। এই সন্ত্রাসী, জঙ্গি, এ অমানুষগুলো, এদের সঙ্গে কারা থাকে, আর তাদের সঙ্গে বসা? এই জানোয়ারদের সঙ্গে বসার কথা কারা বলে? গতকাল বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তাকে বিদেশে হত্যার চেষ্টা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বারবার আমার ওপর আঘাত হেনেছে। তার পরও আমি বেঁচে গেছি। এখনো বারবার আমার ওপর হামলা হচ্ছে। এমনকি দেশে না, বিদেশেও আমার ওপর হামলার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমি বিস্তারিত বলব না। শুধু এটুকুই জানিয়ে রাখলাম। আমি যখন বিদেশ যাই, সেখানেও কিলার ভাড়া করে আমাকে মারার চেষ্টা…, সে চেষ্টাও ওই খালেদা জিয়ার ছেলের, যেটা লন্ডনে বসে আছে। আমি কখনো এ ব্যাপারে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না। জন্মালে তো মরতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস আছে, এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।
এ সময় বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দুর্বৃত্তপনা রুখে দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে কেউ যেন খেলতে না পারে—এজন্য দেশবাসীর কাছে সহায়তা চাই। দেশবাসীকে বলব, অগ্নিসন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তদের ধরিয়ে দিন।
আপনার গাড়ি পোড়ালে এদের ধরে ওই আগুনে ফেলুন। যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়বে সেই হাত পুড়িয়ে দিন। তাহলে ওরা থামবে। মানুষকে বলব ভয়ের কিছু নেই। এরা মুষ্ঠিমেয়। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা যখন আমরা করে যাচ্ছি তখন কী দেখলাম? কথা নেই, বার্তা নেই, নির্বাচন হতে দেবে না। আর আমাকে নাকি ক্ষমতা থেকে হটাবে। ২৮ তারিখ দেশের মানুষ তাদের হিংস্র রূপ দেখেছে। এই দৃশ্যগুলো সহ্য করা যায় না। দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে তিনি আরও বলেন, এই দুর্বৃত্তরা সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ করছে। সাংবাদিক-পুলিশ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণকে পুড়িয়ে হত্যা করছে। যাদের সম্পদ নষ্ট করছে। আমরা অতীতে তাদের পাশে ছিলাম, এখনো করে যাব। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবর বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একটি ভিডিওচিত্র সংসদে প্রদর্শন করেন।
সংসদ নেতা বলেন, জিয়াউর রহমান তো আমার বাবা-মা, ভাইবোন সব হত্যার সঙ্গে জড়িত। আর খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া তো আমাকে হত্যার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছে। তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। ধ্বংস করাই এদের কাজ। দেশবাসীর কাছে আমি আহ্বান জানাই, তারা কোন বাংলাদেশ চায়। এই ধ্বংসস্তূপ? নাকি উন্নত বাংলাদেশ। তাদের জীবন মান যে উন্নতি হয়েছে, সেটা ধরে রাখতে চান? সেটা ধরে রাখতে হলে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেটা থাকবে। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে। নৌকা মার্কাই পারে উন্নত জীবন দিতে। এরা ধ্বংসই দিতে পারব। এরা স্বাধীনতাও চায় না, উন্নতিও চায় না।
সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। দেশে ১৬ কোটি মানুষ ১৮ কোটিরও বেশি মোবাইল সিম ব্যবহার করছে। একেকজন ২-৩টি সিমও ব্যবহার করছে। আমরা মূল্যস্ফীতি কমাতে চেষ্টা করছি। এটা করতে পারব। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক, সেটা আমরা চাই। অধিকার সুরক্ষিত থাকুক, সেটা আমরা চাই। তিনি বলেন, জনগণ হচ্ছে শক্তির উৎস। আমার একমাত্র শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। জনগণের শক্তি নিয়েই আমরা চলছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২০০৬ সালে ছিল মাত্র ১ হাজার ৪৬২ টাকা। আমরা তিন দফায় বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করেছি। তিনি বলেন, আমি জানি জিনিসপত্রের দাম নিয়ে অনেকে হা-হুতাশ করছেন। কিন্তু আমরা এই যে উৎপাদন বাড়ালাম। জনসংখ্যা কিন্তু এতগুণ বাড়েনি। তাহলে এগুলো গেল কোথায়? মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। খাদ্যগুণ বেড়েছে। সেটাই হলো বড় কথা।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোন বাংলাদেশ আমরা চাই? দিনরাত পরিশ্রম করে মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে যে বাংলাদেশ আমরা উন্নত করেছি। বলেছিলাম দিনবদলের সনদ। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আর তখন এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ। আমার আজ বক্তব্য দেওয়ার মানসিকতা নেই। তিনি বলেন, এ রকম দৃশ্য। যারা জজের বাড়িতে আক্রমণ করে। এটা তাদের অভ্যাস। এর আগে প্রধান বিচারপতির অফিসে লাথিও মেরেছে বিএনপি নেতারা। পুলিশের ওপর হামলা, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী যাচ্ছে, সেখানেও আক্রমণ। আর কী বীভৎস দৃশ্য। পুড়িয়ে মানুষ হত্যা না শুধু, মনে হচ্ছে এরা পুরো দেশটাকে ধ্বংস করবে। তিনি বলেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে কে কোন দল করে, সেটা আমি দেখিনি। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছি। তাদের জন্য কাজ করেছি। তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
সংসদ নেতা আরও বলেন, আমরা যখন দেশের মানুষের উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তখন বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার অগ্নিসন্ত্রাস, সংঘাত, মানুষ হত্যা, মামলা নানাভাবে মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। একদিকে আমরা দেশের জন্য কাজ করি, দেশের উন্নতি করি, অন্যদিকে তারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ধ্বংস করাটাও তাদের চরিত্র। ২৮ তারিখে যেভাবে পুলিশকে ফেলে দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। কোন মানুষ এ রকম করতে পারে? ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে তারা একইভাবে করেছে। মাঝখানে একটু থেমেছিল, তারপর আবার ভয়ংকর রূপ জাতি দেখছে।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিজার্ভ সময় সময়ে বাড়ে কমে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ আমরা খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্য কাজগুলো করে যাচ্ছি। আমরা সব সময় খুব সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছি। দেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ, আবার দেখা হবে।