ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা পৌর মেয়র ওসিকে ‘গলায় গামছা বেঁধে বিতাড়িত করার’ যে হুমকি দিয়েছেন, তা নিয়ে পুলিশে তোলপাড় চলছে। একজন জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যে ওসিকে এ ধরনের হুমকি দিতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই হুমকির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর পুলিশের পরিদর্শক মর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা বলছেন, পৌর মেয়রের ছেলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। একজন পুলিশ কর্মকর্তার বাবা হয়েও প্রকাশ্য জনসভায় পুলিশের ওসিকে নিয়ে এমন আপত্তিকর মন্তব্য বেমানান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় শৈলকুপা শহরে ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ার্দারের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম। তিনি ওই পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতা এই পৌর মেয়র শৈলকুপা ওসি শফিকুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। তিনি এমপির উপস্থিতিতেই ওসিকে গলায় গামছা বেঁধে বিতাড়িত করার হুমকি দেন।
পৌর মেয়রের বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাতে বক্তব্যের একপর্যায়ে মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘এই দুর্নীতিবাজ ওসি সন্ত্রাস করছে। আমরা চাই অতিসত্বর দুর্নীতিবাজ প্রশাসন বিশেষ করে এই ওসি এখান থেকে চলে যাক। তা না হলে গলায় গামছা বেঁধে তাকে আমরা বিতাড়িত করব।’
মেয়রের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঝিনাইদহ-১ আসনের এমপি নায়েব আলী জোয়ার্দার বলেন, ‘পৌর মেয়রের বক্তব্য তার ব্যক্তিগত। মেয়র সাহেবের এ ধরনের বক্তব্যকে আমি সমর্থন করতে পারছি না। হাজার হাজার নেতাকর্মীর সামনে সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া সমীচীন হয়নি।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র প্রকাশ্যে দুর্নীতির অভিযোগ আনলেও শৈলকুপার ওসি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মেয়র ও সারুটিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা জুলফিকার কায়সার টিপুর কর্মী-সমর্থকরা শৈলকুপা বাজার ও বিভিন্ন ইউনিয়নে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারছেন না। এজন্য আমার ওপর নাখোশ হয়ে মেয়র সাহেব এমন বক্তব্য দিতে পারেন।’ ওসি জানান, মেয়রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ওসি পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেছেন, শৈলকুপা পৌর মেয়রের বিতর্কিত বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা দেখেছেন। এমন বক্তব্যে পুলিশ সদস্যরা বিব্রত এবং অনেকটা হতাশ। কারণ আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে গিয়ে পুলিশকে প্রভাবশালীদের বিরাগভাজন হতে হয়। কিন্তু বিতর্কিত বক্তব্যদাতা শুধু ক্ষমতাসীন দলের নেতাই নন, তিনি জনপ্রতিনিধি। ঘটনাস্থলে একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। এমন অবস্থায় ওসি সম্পর্কে একজন জনপ্রতিনিধির এমন ‘কুরুচিপূর্ণ’ ও ‘বাজে’ বক্তব্য বেমানান। এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান তারা।
ওই কর্মকর্তারা বলছেন, পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম একজন পুলিশ কর্মকর্তার বাবা। তার ছেলে শেরপুর ও নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলাসহ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই ওসিদের সঙ্গে নিয়েই মেয়রের ছেলেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। এখন পুলিশ কর্মকর্তার বাবা হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে জনসভায় মিথ্যা ও বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়া আরও বেশি দুঃখজনক। কারণ তিনিও তো পুলিশ পরিবারেরই সদস্য।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান বলেন, ‘শৈলকুপার মেয়র কেন বা কোন কারণে এ ধরনের মন্তব্য করলেন, সেটা আমার জানা নেই। তবে উনার বক্তব্যের পেছনে কী কারণ আছে, সেটি তদন্ত করে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আর্কাইভ 
| ২১ জুন ২০২৫ 