কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৯ এএম
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে অংশীজন অন্তর্ভুক্তিতে সরকারের অনাগ্রহ নিয়ে উদ্বেগ

ছবি : কালবেলা
ছবি : কালবেলা

তামাকশিল্পের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে সরকারের প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে যথাযথ সংসদীয় প্রক্রিয়া এবং অংশীজন-অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনা ছাড়াই অনুমোদনের চেষ্টা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তামাকশিল্পের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের মতে, প্রস্তাবিত সংশোধনী দেশের অর্থনীতি, বিনিয়োগ পরিবেশ, পণ্যের মান এবং সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জীবিকায় দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

রোববার যৌথ বিবৃতিতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটি বাংলাদেশ), ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ এবং জেটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নেতারা বলেন, আমরা সরকারের জনস্বাস্থ্য রক্ষার প্রতিশ্রুতিকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। তবে খসড়া অধ্যাদেশে প্রস্তাবিত কিছু ধারা বাস্তব প্রমাণভিত্তিক নয় এবং এগুলো প্রান্তিক জনগণের জীবিকা ঝুঁকির মুখে ফেলবে, ইতিমধ্যেই ব্যাপকতর রূপ লাভ করা অবৈধ সিগারেটের বাজারকে আরও ত্বরান্বিত করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকির ঝুঁকি বাড়াবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে-যা বর্তমান সংকটাপন্ন তামাক শিল্পকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

প্রস্তাবিত নেতিবাচক ধারাসমূহের মধ্যে একটি হলো সিগারেট তৈরির উপাদানের উপর নিষেধাজ্ঞা, যা দেশের বর্তমান সিগারেট উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করবে। নিষিদ্ধের প্রস্তাবে থাকা উপাদানগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ, উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য অপরিহার্য এবং পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তারা মনে করেন, পাশাপাশি, ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ধারা, যেমন সিগারেট বিক্রির ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতাদের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা, যা বর্তমানে বিদ্যমান প্রায় ১৫ লাখ খুচরা বিক্রেতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের জন্য লাইসেন্স প্রাপ্যতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তামাকজাত পণ্যের বৈধ বিক্রয় কার্যক্রম ও খাত-সম্পর্কিত প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার তামাক চাষির জীবিকাও বিঘ্নিত হবে। এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ন্যায্য ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া এবং যথাযথ অংশীজন পরামর্শ অপরিহার্য।

এছাড়াও, প্রস্তাবিত ধোঁয়াবিহীন নিকোটিন ও তামাকজাত পণ্যের নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তবয়স্ক ভোক্তাদের জন্য সিগারেটের তুলনায় সম্ভাব্য কম ঝুঁকিপূর্ণ বিকল্পের সুযোগ কেড়ে নেবে, যা তাদের ধূমপান থেকে সরে আসার পথকে আরও কঠিন করে তুলবে। এই পণ্যশ্রেণীর নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান অবৈধ বাজারকে আরও প্রসারিত করবে যেমনটি ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অন্যান্য দেশে দেখা গেছে। এই সকল অবৈধ পণ্য কোনো নিয়ন্ত্রণের আওতায় না থাকায় গুণগতমান মানসম্মত হবে না, যা ভোক্তাদের জন্য আরও ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে।

সামগ্রিকভাবে অংশীজন-অন্তর্ভুক্ত পরামর্শ ছাড়া এ প্রস্তাবিত সংশোধনী পাস করা হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য উভয়ের জন্যই উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই উৎপাদক, কৃষক, প্রান্তিক খুচরা বিক্রেতা, হকার, প্রিন্টিং প্রেস এবং সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত বিবেচনায় নেওয়ার, যেন প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো থেকে উদ্ভূত নেতিবাচক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি এড়ানো যায়। একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে আমরা সরকার ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রথম খসড়া প্রণয়নের সময় সরকার উৎপাদকসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে অংশীজন-অন্তর্ভুক্ত সংলাপ পরিচালনা করেছিল। এর ফলস্বরূপ একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকর আইন প্রণীত হয়, যার ফলে ধূমপানের হার কমেছিল এবং অবৈধ বাজার নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ছিল।

বর্তমান চ্যালেঞ্জপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে অংশীজনদের মতামত বিবেচনা ব্যতীত যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া পুরো তামাক শিল্প এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব আয়কে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। কোভিড-১৯ প্রভাবিত বছর বাদ দিয়ে, তামাক খাত প্রতি বছর ১২–১৫% রাজস্ব প্রবৃদ্ধি প্রদান করেছিল, কিন্তু ২০২৪–২৫ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে মাত্র ৪–৫%-এ।

তামাক শিল্প স্থানীয় সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এ শিল্প প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪৪ লক্ষ মানুষের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করে, যাদের মধ্যে দেড় লক্ষ কৃষক এবং ১৫ লক্ষ খুচরা বিক্রেতা রয়েছেন। পাশাপাশি খাতটি ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম জেটি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে একটি স্থানীয় তামাক কোম্পানির অধিগ্রহণ, যা গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক বিনিয়োগ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিবি হেফাজতেই আনিস আলমগীর, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে

সাময়িক বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল

নৌপরিবহন উপদেষ্টা / জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত

বন্ডি বিচে সন্ত্রাসী হামলা / ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বললেন মাইকেল ভন

এক কলেজ থেকে মেডিকেলে সুযোগ পেলেন ৪৫ শিক্ষার্থী

দিল্লিতে ঘন কুয়াশা, ফ্লাইট চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন

দেশে মৌলবাদী চক্রের সব ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে : সেলিমুজ্জামান

মৃত্যুদণ্ড চেয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আপিল আজ

মালদ্বীপে কাভা কাপে অংশ নিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ নারী ভলিবল দল

আনিস আলমগীর-শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের

১০

নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ওঠা কি নেককার হওয়ার লক্ষণ?

১১

দুপুরেই সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে ওসমান হাদিকে

১২

হাদির ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা : সিইসি

১৩

ঢাকায় পৌঁছেছে হাদিকে নিতে আসা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

১৪

হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থি কর্মী জিমি লাই দোষী সাব্যস্ত

১৫

দিল্লিতে মেসির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে গুনতে হবে কোটি টাকার বেশি

১৬

বলিউডের পথে রুক্মিণী

১৭

ওসমান হাদির পরিবারের সবাই আলেম

১৮

কৃষ্ণসাগরের নিরাপত্তায় নতুন প্রস্তাব তুরস্কের

১৯

ভিনিসিয়ুসের এক অ্যাসিস্টেই বাঁচল রিয়াল, আলোনসোর সঙ্গে আলিঙ্গনে বার্তা

২০
X