স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনে মুসলিম বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে মুসলিম দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)। তিনি বলেন, আজ ফিলিস্তিনিদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার করা হচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, এর পরও তার পক্ষে সাফাই গাইছে আমেরিকা। আমাদের সরকারও ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছে। তাদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। গতকাল শুক্রবার জুমার পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। চরমোনাই পীর বলেন, আজকের গণমিছিল ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ। যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলন সবসময় সোচ্চার থাকে। তিনি ইসরায়েলসহ তাদের সহযোগীদের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান। সরকারের দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, অথচ তারাই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি লালন করে। সমাবেশে বক্তব্য দেন সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, সৈয়দ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই), আব্দুল হক আজাদ, ইউনুছ আহমাদ, গাজী আতাউর রহমান, শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, আরিফুল ইসলাম, নূরুল বশর আজিজী, ডা. শহিদুল ইসলাম, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, মুফতি ফরিদুল ইসলাম, আলামিন সোহাগ, হাফিজুল হক ফাইয়াজ। প্রচার সম্পাদক নেছার উদ্দিন, যুব আন্দোলন সভাপতি নেছার উদ্দিন ও দেলাওয়ার হোসাইন সাকীর পরিচালনায় গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশ হয়। পরে গণমিছিল প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে দৈনিক বাংলা গিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।
০১ জুন, ২০২৪

আপনার ঘুষ খাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি, প্রকৌশলীকে বীর মুক্তিযোদ্ধা
ঘূর্ণিঝড় রিমালে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও টানা চারদিন ধরে বিদ্যুৎবঞ্চিত এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। আর এতেই বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, ‘আপনার ঘুষ খাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে রিজেইন দিয়ে চলে যাবেন।’ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে ঝালকাঠি ওজোপাডিকো অফিসে এ ঘটনা ঘটে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ঝালকাঠি-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ১১টি স্থানে ৩৩ হাজার কেভি লাইনের ওপর গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  এতে বিপাকে পড়েন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ও পল্লী বিদ্যুতের প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক। জেলা শহরসহ চার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বুধবার (২৯ মে) সকালে রাজাপুর উপজেলা শহর এবং রাতে ঝালকাঠি শহর ও নলছিটি শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও ৯৬ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবঞ্চিত ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার এক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার শফিকুল আলমসহ (৭০) ওই এলাকার দুই শতাধিক পরিবার। এছাড়াও কাঁঠালিয়া উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১২০ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। শুধু মেইন লাইনে বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ দেওয়া হয়। তবে এখনো ৮০ ভাগ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন। এ কারণে ঝালকাঠি ওজোপাডিকো অফিসে বৃহস্পতিবার দুপুরে এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন খন্দকার শফিকুল আলম। তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতিকে দায়ী করে শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার দায়িত্বরত ওজোপাডিকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) মো. আব্দুস সালামকে বলেন, ‘আপনার ঘুষ খাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করিনি। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে রিজেইন দিয়ে চলে যাবেন।’ এভাবে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়েন এ মুক্তিযোদ্ধা।  বীর মুক্তিযোদ্ধার খন্দকার শফিকুল আলম প্রকৌশলীর কাছে জানতে চান, রিমালের চার দিন পার হলেও এখনও কেন তিনি বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি? প্রকৌশলীকে বলেন, ‘আপনার দায়িত্ব কী ঘুষ খাওয়া? ঘুষ খাওয়ার জন্য কী দেশ স্বাধীন করেছি?’ বলার পরে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে প্রকৌশলীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অফিস থেকে চলে যান মুক্তিযোদ্ধা। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার খন্দকার শফিকুল আলম বলেন, গত ২৬ মে থেকে একটানা চার দিন অতিবাহিত হলেও আমি বিদ্যুৎ পাইনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শহরের কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ পেয়েছে তাহলে আমি কেন পেলাম না। আমি বৃদ্ধ মানুষ এই গরমে কী বিদ্যুৎ ছাড়া থাকা যায়। তারপর আবার পানিরও সংকট কেননা বিদ্যুৎ লাইন না থাকলে পানি আসবে কেমনে। পানির জন্য তীব্র গরমে গোসল, খাবার পানি, বাথরুমের পরিচ্ছন্নতার কাজে অনেক কষ্ট করতে হয়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে থাকায় ৯৬ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবঞ্চিত এ মুক্তিযোদ্ধা। বিদ্যুৎ লাইন না পাওয়ায় তীব্র গরমে কষ্টে দিন কাটছে তার। এতে তিনিসহ বিদ্যুৎবঞ্চিত আশপাশের এলাকার বাসিন্দারাও পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। বিদ্যুতের অভাবে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। জেলা শহরের বাসিন্দারা রান্নাবান্না ও গৃহস্থালির কাজে পৌর কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা পানির ওপর নির্ভরশীল। তবে বিদ্যুৎ না থাকায় প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় রোগীদের অবস্থা দুর্বিষহ। এ বিষয়ে ঝালকাঠি ওজোপাডিকোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) মো. আব্দুস সালাম বলেন, ঝড়ে ঝালকাঠি শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে গেছে। যার জন্য বিদ্যুৎ অফিসের লোকসহ স্থানীয় শ্রমিক ভাড়ায় এনে কাজ করাচ্ছি তারপরও সব স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন যাদের বিদ্যুৎ লাইন সচল করে দিতে পারব তারা ভালো বলবে, ধন্যবাদ জানাবে। আর যাদের দিতে পারবো না তারা খারাপ বলবে। যেহেতু এ ডিপার্টমেন্টে চাকরি করি সেহেতু এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। দুই তিন দিনের মধ্যে শহরের সব স্থানেই বিদ্যুৎ সংযোগ চালু দেওয়া হবে। এ বিষয়ে জেলার ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিভিন্ন এলাকায় গাছ ও গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন ও খুঁটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর মেরামতের জন্য দিনরাত বিদ্যুৎ অফিসের লোকসহ ভাড়া করা লোক দিয়েও কাজ করানো হচ্ছে। এত পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে যা খুব দ্রুত সম্পূর্ণ করা সম্ভব না, সময় লাগবে। আমরা শাখা করছি খুব তাড়াতাড়ি জেলার সব স্থানে বিদ্যুৎ লাইন সচল করতে পারব।
৩১ মে, ২০২৪

সাংবাদিকরা কর্মস্থলে কি স্বাধীন প্রশ্ন কাদেরের
সরকারের কাছে স্বাধীনতা চাইলেও সাংবাদিকরা কর্মস্থলে স্বাধীন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা স্বাধীনতা চান সরকারের কাছে। কিন্তু নিজেরা যেখানে কাজ করেন, সেখানে কি আপনি যা চাইছেন, তা লিখতে পারেন? আপনি যা দেখেন, তা কি লিখতে পারেন? ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নামে কোনো সাংবাদিক যাতে হয়রানির শিকার না হন সে ব্যাপারে সরকার সতর্ক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকব। কোনো সাংবাদিক যাতে হেনস্তার শিকার না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। আর সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা ও ভুয়া লোক যাতে মহান এ পেশাকে অসম্মান করতে না পারে সেজন্য সাংবাদিকদেরও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতার নামে সাংবাদিকের লেখা নেই, পড়া নেই, সংবাদ বোঝে না, এর ধারেকাছেও নেই। এমন অনেককেই দেখি সরকারি অফিসে গিয়ে বসে থাকে। এরা সত্যিকারের সাংবাদিক নয়। এই ভুয়া সাংবাদিকের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার বিরোধী নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সমালোচনা শুদ্ধ করে। সমালোচনা আমরাও করি, তবে তা গঠনমূলক হওয়া প্রয়োজন। ডিআরইউর সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদের, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
২৭ মে, ২০২৪

বাংলাদেশে এখন আর স্বাধীন সাংবাদিকতা নেই
সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশে যখন ভোটাধিকার থাকে না, মানুষের কথা বলার অধিকার থাকে না—এমন সময়ে সাংবাদিকদের ভয়ের মধ্যে কাজ করতে হয়। আর বর্তমানে সেই অবস্থা বিরাজমান। সরকার এবং সংবাদপত্রের মালিকদের চাপে স্বাধীন সাংবাদিকতা এখন আর বাংলাদেশে নেই। গতকাল রোববার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির তিন দশক পূর্তি উপলক্ষে কেক কাটা ও শুভেচ্ছা বিনিময়কালে রিজভী এসব কথা বলেন। এদিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির তিন দশক পূর্তি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করেন সংগঠনের সদস্যরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুক্কুর আলী শুভ, সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন, বিএফইউজের একাংশের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ডিইউজের (একাংশ) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, রফিকুল ইসলাম আজাদ, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, রফিক মোহাম্মদ প্রমুখ।
২৭ মে, ২০২৪

এবার জার্মানিতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির দাবি উঠল
ফিলিস্তিনকে একে একে স্বীকৃতি দিচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এ ছাড়া গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। এবার দেশটিকে স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে জার্মানির বিরোধী দল। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মানির উগ্র বামপন্থি বিরোধী দল দ্য লেফট (ডাই লিঙ্কে) সরকারে কাছে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার দলটি এ দাবি জানায়।   পাবলিক ব্রডকাস্টার এমডিআরকে পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক মুখপাত্র গ্রেগর গিসি বলেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কেননা কেবল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই হামাস ও অন্যান্য উগ্রবাদী দলকে মোকাবিলা করতে পারে। এ সময় তিনি সংসদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপনের কথাও জানান।  গ্রেগর গিসি বলেন, ইসরায়েলের চেয়ে হামাস ও অন্যান্য সংগঠনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে। ইসরায়েল কেবল সামরিকভাবে এটি করতে পারে। কিন্তু ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দিয়ে এর মোকাবিলা করতে পারে।   এ আইনপ্রণেতা জোর দিয়ে বলেন, হলোকাস্টের কারণে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির পক্ষে কথা বলার ব্যাপারে জার্মানিতে বিশেষ বিধিনিষেধ আছে। তিনি বলেন, এমন অনেক দেশ আছে যারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ট্রেন মিস করা উচিত নয়। এ বিষয়ে আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা উচিত।  তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্যই এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আর তা কেবল ফিলিস্তিনিদের নয়, ইসরায়েলকেও নিরাপত্তা দেবে।   এর আগে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ নরওয়ে, স্পেন ও আয়ারল্যান্ড। গত বুধবার (২২ মে) একযোগে এ ঘোষণা দেন দেশ তিনটির প্রধানমন্ত্রীরা। তারা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রয়োজনে ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবেন তারা। একমাত্র  স্বীকৃতিই এই অঞ্চলে শান্তি  প্রতিষ্ঠা করবে।   বুধবার সংবাদ সম্মেলনে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গহর স্টোর বলেন, একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানই সর্বোত্তম পথ। ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি না থাকলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসতে পারে না। নরওয়ে আগামী ২৮ মে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলেও ঘোষণা দেন জোনাস গহর স্টোর। নরওয়ের ঘোষণার পরপরই, আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিসও এক সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিন স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আয়ারল্যান্ডও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে।
২৪ মে, ২০২৪

জাবিতে স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে গণসমাবেশ ও র‌্যালি
ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদ এবং স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে চার দফা দাবিতে গণসমাবেশ ও র‌্যালি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২১ মে) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের সামনে এ সমাবেশ করেন তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। সমাবেশে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে গান পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম এবং কবিতা আবৃত্তি করেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ইসরায়েলের পতাকা দাহ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখান থেকে একটি র‌্যালি বের করেন তারা। র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ফের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। দাবিগুলো হলো অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করা, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি ও ভূখণ্ড ফিরিয়ে দেওয়া, গণহত্যার দায়ে জড়িত থাকার অপরাধে জায়নবাদী ইসরায়েলের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা এবং নিরাপত্তা পরিষদে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত তৈরি করা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর নির্মম নির্যাতন ও হত্যায় দায়সারা বক্তব্য দেওয়া ছাড়া জাতিসংঘ কিছুই করছে না। যুগ যুগ ধরে চলা ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, গণহত্যা ও বর্বরতায় নির্লজ্জ সমর্থন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো প্রমাণ করেছে, তাদের মুখে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার কথা ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। ফিলিস্তিনি ভূমি থেকে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসানই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিবের সঞ্চালনায় পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘ফিলিস্তিনের সমস্যা ৭৭ বছর আগে গোড়াপত্তন হয়েছে। জোরপূর্বক ফিলিস্তিন দখল করে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। জাতিসংঘকে ইসরায়েলের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইসরায়েলকে নিপীড়ন বন্ধে বাধ্য করা ও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশীয় পর্যায়েও ইসরায়েলে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আছে।’  এ সময় সংহতি জানিয়ে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী, অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াহিয়া জিসান, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ মাহমুদ তন্ময়, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রমুখ।
২১ মে, ২০২৪

স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ
ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার প্রায় সব জেলা ও মহানগরে শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালিত হয়। তবে কয়েকটি জেলায় মিছিলে প্রশাসন বাধা দিয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করেছে দলটি। সেখানে বলা হয়, গতকাল পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, ঢাকা জেলা উত্তর ও দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর মহানগর ও জেলা, গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ মহানগর ও জেলা, রাজশাহী জেলা ও মহানগর, জয়পুরহাট, বগুড়া, পাবনা, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা জেলা ও মহানগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা জেলা ও মহানগর, ঝিনাইদহ, যশোর, নড়াইল, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, রংপুর জেলা ও মহানগর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, পিরোজপুর, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। মিছিল-পূর্ব সমাবেশে জেলা নেতারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীদের মদদ ছাড়া ইসরায়েল ফিলিস্তিনে হামলার সাহস পেত না।
১৮ মে, ২০২৪

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে সারা দেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনে অব্যাহত ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে সারা দেশে জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শুক্রবার (১৭ মে) প্রায় সব জেলা ও মহানগরে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তবে কোনো কোনো জেলায় বিক্ষোভ মিছিলে প্রশাসন বাধা দিয়েছে বলে দলটি এক বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করেছে। গত শুক্রবার ঢাকার বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশে দলের নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন। ইসলামী আন্দোলনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, ঢাকা জেলা উত্তর ও দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর মহানগর ও জেলা, গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ মহানগর ও জেলা, রাজশাহী জেলা ও মহানগর, জয়পুরহাট, বগুড়া, পাবনা, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা জেলা ও মহানগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা জেলা ও মহানগর, ঝিনাইদহ, যশোর, নড়াইল, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, রংপুর জেলা ও মহানগর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, পিরোজপুর, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশগুলো থেকে জেলা নেতারা বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতা বন্ধ করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীদের মদদ ছাড়া ফিলিস্তিনে ইসরায়েল হামলা করার সাহস পেত না। গাজা উপত্যকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মার্কিন মদদপুষ্ট জায়নবাদী ইসরায়েলি হামলা ও ওই এলাকা জনমানবশূন্য করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। ১ লাখেরও বেশি মানুষকে আহত ও পঙ্গু করা হয়েছে। পুরো গাজাকে বৃহত্তর জেলখানায় পরিণত করে সেখানে সবধরনের নাগরিক সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন বর্বরতা ও অসভ্যতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এখন উচিত মজলুম ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে বিশ্বের সকল মুসলমানদের দাঁড়ানো। মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিনের পাশে থাকার ঘোষণা দিলে জারজ ইসরায়েলিরা লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হবে।
১৭ মে, ২০২৪

শেখ হাসিনা: স্বাধীন বাঙালির অনিঃশেষ প্রেরণা
আজ আমাদের আনন্দের দিন। বাঙালি যে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে তার প্রমাণ যে মানুষটি রেখেছেন আজ তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন। বাঙালিকে স্বমর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন যিনি, যার উদ্যোগে ভিক্ষুকের হাত আজ কর্মীর হাতে পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাঙালি নয়, বরং নিজের অর্থে নিজেদের পদ্মা সেতু তৈরির সাহসী বাঙালি আমরা। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাঙালির শেষ ভরসাস্থল শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন আজ। শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার সবুজে ঘেরা, পাখি ডাকা, মায়াময় টুঙ্গিপাড়ার এক  সম্ভ্রান্ত বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকাল থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী ও সৃজনশীল মানুষ। তার পিতা বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, বাংলার গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষের পরম বন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের  পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ  মুজিবুর রহমান। মাতা বাঙালি জাতির সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণাদাত্রী, সুচিন্তাবিদ, শেখ  ফজিলাতুন নেছা। তিনি পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। তার সহোদর: বীর মুক্তিযোদ্ধা  ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, শেখ রাসেল, বোন শেখ রেহানা। বাংলাদেশের রাজনীতির গুণমান পরিবর্তনে শেখ হাসিনা অনন্য। গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র হিসেবে আজ বিশ্বে সমাদৃত। বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ  হাসিনার আজকের যে অবস্থা, তা একদিনে রচিত হয়নি। এর পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ সাধনা।   ১৯৫৪ সালে শেখ হাসিনার বয়স যখন ৭ বছর তখন তিনি গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন। ১৯৫৪ সাল থেকে  জননেত্রী শেখ হাসিনা সপরিবারে ঢাকায় মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে বসবাস করেন। পরবর্তীকালে  ঢাকার মিন্টো রোডে অবস্থিত সরকারি বাসভবনে স্থানান্তরিত হন। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ঢাকায় টিকাটুলির  নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে নান্দনিক  পরিবেশে সপরিবারে বসবাস শুরু হয় তার। ১৯৬২ সালে তিনি আজিমপুর গার্লস স্কুলের ছাত্রী। হাইস্কুলে পড়াকালীন তিনি রাজনীতি সচেতন হয়ে ওঠেন। ১৯৬২ সালে কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট  দিলে সারাদেশের ছাত্রসমাজের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে তিনিও প্রতিবাদে সোচ্চার হন। আজিমপুর গালর্স স্কুল থেকে যে প্রতিবাদী মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে যাত্রা করেছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা।  শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে ঢাকায় আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাস করেন। ম্যাট্রিক পাস করে তিনি একই বছরে গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গালর্স কলেজে (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হন। ১৯৬৬-১৯৬৭ মেয়াদে কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি (ভাইস  প্রেসিডেন্ট) নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি ছাত্রীদের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেন। ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্রীদের  সম্পৃক্ত করে অধিকার সচেতন করেন। এবং গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়ান।  ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।  ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বাংলা সাহিত্য ও  সংস্কৃতিকে রাজনীতির সঙ্গে অন্বিত করেছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তাইতো ২০১৪ সালে সার্ক সাহিত্য উৎসবের  উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেছেন,  : বাংলার উর্বর ভূমি অসংখ্য কবি-সাহিত্যিকের জন্ম দিয়েছে। সেই মধ্যযুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এ ধারা  অব্যাহত আছে। বাঙালি শিক্ষিত তরুণ কবিতার দুটো লাইন লেখেনি, এ রকম উদাহরণ খুব কমই আছে। বাংলার  কোমল মাটি ও মানুষ আর প্রকৃতিই হয়ত বাঙালিকে ভাবুক করে তুলেছে। বাংলার বাউল, কবিয়াল, সাধক,  বয়াতিরাও আমাদের সাহিত্য-সংগীতকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলার কামার-কুমার-ছুতোরগণও এক একজন সৃষ্টিশীল  শিল্পী।  সেকালের ফকির লালন শাহ্, সিরাজ সাঁই বা একালের আব্দুল করিম, রাধারমণ দত্ত প্রমুখ আমাদের মনোজগৎকে শাণিত করেছেন।  সাহিত্যের প্রসঙ্গ যেহেতু এলো সেহেতু দুয়েকটি কথা বলা দরকার। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এই দেশপ্রেমিক  রাষ্ট্রনায়কের জন্মদিনকে কেন বিশেষভাবে উপস্থাপন করছে? তিনি বাংলাদেশেকে, বাঙালিকে তার পিতার মতোই বিশ্বের সকলের কাছে উঁচু করেছেন। এর বাইরেও সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক হিসেবে লেখক শেখ হাসিনার জন্মদিন আমাদের একটি বিশেষ দিন বলে বিবেচনা করছি। রাষ্ট্রীয় সকল দায়িত্বের ভেতরেও লেখাকে সঙ্গী করেছেন তিনি। সাহিত্যের সঙ্গে তার যোগ কতটুকু সেটি উপলব্ধি করার জন্য তার বক্তৃতা থেকে কয়েকটি বাক্য পাঠ করছি।  : মহাকবি আলাওল, আব্দুল হাকিম, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল  ইসলাম, জসিম উদ্দিন, জীবনানন্দ দাশরা যুগে যুগে ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।  ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বের কাছে তুলে  ধরেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা দিয়ে আবারও এই ভাষাকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।    সাহিত্য শুধু মানুষের সুকুমারবৃত্তিগুলোকেই জাগ্রত করে না, সাহিত্য মানব ইতিহাসের মহাসড়ক। এই মহাসড়ক ধরেই পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষের সঙ্গে অন্য প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ ঘটে।  বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শেখ হাসিনা লড়াই করেছেন। তিনি বর্তমান বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রী ছিলেন। এখান থেকেই বঙ্গবন্ধুঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা আন্দোলনে অংশ  নেন। তিনি একই কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। তাকে অন্তত ১৯ বার  হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বাঙালির রক্ত আর প্রার্থনায় বেঁচে আছেন তিনি।  বাংলার প্রকৃতির হিসেবে আগস্ট মাস বর্ষার মাস। আকাশ ভেঙে শ্রাবণের জল নামে। বাঙালির শ্রাবণ জলের মাস  আগস্ট, জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছি আমরা সেদিন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকলের রক্তে ধানমন্ডির সবুজ মাটি লাল হয়েছিল। বেঁচে ছিলেন জাতির পিতার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ  রেহানা। তাদের বেঁচে থাকার কারণ সে সময়ে তারা জার্মানিতে ছিলেন। শেখ হাসিনার স্বামী ও বিশিষ্ট পরমাণু  বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া তখন জার্মানির শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কালর্সরুয়ে প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে  প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ৩০ জুলাই ১৯৭৫ পুত্র-কন্যা ও বোনসহ শেখ হাসিনা জার্মানিতে চলে যান। এর পেছনে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটা বড় ভূমিকা আছে। এ বিষয়ে এম এ ওয়াজেদ মিয়া রচিত  ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিতে চাই  বঙ্গবন্ধু আমাকে আরও জানান যে, রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে হাসিনা আমাদের ছেলেমেয়েদেরসহ জুলাই মাসের  শেষের দিকে জার্মানি চলে আসবে। আর কয়েক মাস পর আমি দেশে ফিরতে পারি বিধায় হাসিনার অত টাকা পয়সা খরচ করে তখন জার্মানি চলে আসা সমীচীন হবে না, আমি এ কথা বললে বঙ্গবন্ধু বলেন, “তোমার ছেলে জয়কে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না। ও সারাক্ষণ তোমার কথা বলে, তোমার খোঁজ করে এবং তোমার কাছে যেতে  চায়। অতএব, তুমি আর কোন আপত্তি ওঠাইও না।” এ কথাগুলো বলে বঙ্গবন্ধু আমাকে তখন হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। হাসিনাকেও আমি একই কথা বলি। হাসিনাও আমাকে বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো বলে। হাসিনা  আমাকে এও বলে যে, আমি যতই আপত্তি করি না কেন, সে জার্মানি চলে আসবেই। এই কথোপকথনে প্রায় বিশ মিনিট অতিক্রান্ত হয়।  তিনি আরও লিখেছেন, ১৯ জুলাই রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন একান্ত সচিব আমার  অফিসে ফোন করে আমাকে জানান যে, হাসিনারা ২৫ জুলাই তারিখে প্যানামের একটি ফ্লাইটে ফ্রাঙ্কফুর্ট  পৌঁছবে। তিনি আমাকে উক্ত ফ্লাইটের নম্বর ও সময়সূচিও জানান। ২০ জুলাই তারিখে তিনি আবার অফিসে ফোন করে আমাকে জানান যে, হাসিনারা উক্ত ফ্লাইটে যাচ্ছে না কারণ সেটি করাচি হয়ে  ফ্রাঙ্কফুর্ট যায়। তিনি আমাকে আরও জানান যে, পরিবর্তিত সফরসূচি অনুযায়ী হাসিনারা লুখফানসার একটি ফ্লাইটে  ৩০ জুলাই সকালে ফ্রাঙ্কফুর্ট পৌঁছাবে।  বঙ্গবন্ধু হত্যার পর শেখ হাসিনা বেলজিয়াম ও ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮১ সালে প্রবাসে থাকা অবস্থায় আওয়ামী  লীগের নেতৃত্ব লাভ করেন তিনি। যখন তিনি দেশে ফিরে আসেন তখন তার দুটো পরিচয়, একটি বাংলাদেশ আওয়ামী  লীগের সভাপতি আর অন্যটি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। যে নেতাকে এদেশেই সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে সেই নেতার মেয়ে শুধু মানুষের ভালোবাসায় স্বদেশে ফিরে এলো! একবার ভেবে দেখুন, পরিবারের কেউ নেই, দেশ শাসনে  খুনির সহযোগী, সেই সময়ে একা ফিরলেন স্বদেশের মাটিতে। তারপর শুরু হলো তার গণতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রাম। কাজটি  সহজ ছিল না। ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব হাতে নিলেন। তখন সামরিক সরকারের চাপে দলের নেতাকর্মীরা দিশেহারা। নানা বিভাজন নেতৃত্বের প্রসঙ্গে, দলের ঐক্যের  প্রতীক হলেন মুজিবকন্যা।   মহান স্বাধীনতা দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা  গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের শপথ পাঠ করান। তিনি জীবন দিয়ে হলেও জনগণের  গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দেশে ঘরোয়া রাজনীতি চালু  হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাম ও প্রগতিশীল শক্তির সমন্বয়ে ১৫ দলীয় জোট গঠিত হয়। ১৫  দলীয় জোটের মূল লক্ষ ঘোষিত হয় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। ১৯৮৩ সালের ১৪  নভেম্বর প্রকাশ্য রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার সাথে সাথে সর্বাগ্রে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ১৫  দলীয় ঐক্যজোট নেত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২৮ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের দাবিতে শেখ হাসিনার আহ্বানে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়। হাজার হাজার মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ  করেন। শেখ হাসিনা স্বয়ং এ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। এই কর্মসূচির পরপরই রাতে সকল রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করেন সামরিক শাসক এরশাদ। শেখ হাসিনাকে মহাখালীর বাসায় অন্তরিন করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৪  ডিসেম্বর গৃহবন্দিত্ব থেকে শেখ হাসিনা মুক্তি পান। ১৯৮৪ সালের ৭ জানুয়ারি সামরিক সরকার আবার ঘরোয়া  রাজনীতির অনুমতি প্রদান করে। স্থানীয় সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করে সামরিক শাসক। সেই সূত্রে এরশাদ উপজেলা নির্বাচনের ঘোষণা দিলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট  উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করে। ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা  নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ছাত্রলীগের একটি মিছিলে সামরিক জান্তার পেটোয়া বাহিনী ট্রাক উঠিয়ে দেয়। মৃত্যুবরণ  করেন সেলিম ও দেলোয়ার। শেখ হাসিনা এই ঘটনাকে ফ্যাসিস্ট ও বর্বরোচিত বলে বর্ণনা করে পরদিন হরতালের ডাক দেন। ১৯৮৪ সালের ৩ মার্চ ১৫ দলীয় জোট নেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচনে সকল প্রার্থীকে তাদের  প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। ৪ মার্চ জননেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে ৭ প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। ১৮ মার্চ আন্দোলনে শেখ হাসিনা বিজয় অর্জন করে। ১৯৮৪ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস  উপলক্ষে আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমাবাজির ঘটনা ঘটানো হয়।  শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। ভয় দেখিয়ে জনগণের আন্দোলন থেকে আমাকে  সরিয়ে রাখা যাবে না। নিজের জীবন দিয়ে হলেও এদেশের মানুষের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেব।’ ১৯৮৪ সালের ২০  ডিসেম্বর তীব্র আন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকার আবার রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করে। তার এই দৃঢ়চেতা  মানসিকতার জন্যই বাংলাদেশের জনগণ তাকে ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ বলে অভিহিত করে।   বাংলাদেশের জনগণের মঙ্গলের জন্য বারবার গ্রেনেড আর বুলেটের সামনে দাঁড়াতে হয়েছে তাকে। কিন্তু তিনি মনস্থির করে নিয়েছেন মানুষের কল্যাণে লড়াই করতে হবে। তাই তিনি বলতে পারেন, “২০৪১ সালে আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ উচ্চআয়ের দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।” তিনি সে পথে হাঁটছেন,  আমাদের কাজ তার সমর্থনে আত্মনিয়োগ করা। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন দুর্নীতিকে। এখানে বলতে দ্বিধা নেই, পাকিস্তান আমলে প্রায় দুই যুগের সামরিক শাসন এবং বাংলাদেশের প্রায় কুড়ি বছরে সামরিক ও বেসামরিক স্বৈরাচার মানুষকে দুর্নীতিপরায়ণ করে তুলেছে। এই ক্ষত থেকে জাতির মুক্তিলাভ সহজ হবে না। তিনি সে চেষ্টায় নীরবে কাজ করে চলছেন। তাইতো বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের উদ্দেশে এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “আমরা টেকসই উন্নয়ন চাই। আমরা এমন কাজ চাই যাতে সাধারণ মানুষের করের একটি পয়সাও অপচয় না হয়।”  বাঙালির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ই তার অভিপ্রায়। তিনি ব্যবহারিকভাবে  প্রমাণ করেছেন সামরিক শাসকদের অধীনে স্বচ্ছ নির্বাচন হয় না। ১৯৮৬ সালে এরশাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ ১৫ দল ও ৭ দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু রাতে বিএনপি তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে এরশাদকে একক নির্বাচনের সুযোগ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত ৭ মের নির্বাচনে ১৫ দলের ৮টি দল অংশ নিতে রাজি হয়। ৭ মে ব্যাপক সহিসংতার মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাতে নির্বাচনী ফলাফলে  আওয়ামী লীগ যখন এগিয়ে তখন আকস্মিকভাবে ফলাফল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৬ সালের ৮ মে আওয়ামী  লীগ সভানেত্রী এক বিবৃতিতে ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণ স্বৈরাচারকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে অভিহিত করেন। তিনি নির্বাচনের সঠিক ফলাফল ঘোষণার দাবি জানান। ১৯ মে দীর্ঘ ১২ দিন পর মিডিয়া ক্যু-এর মাধ্যমে  নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে জাতীয় পার্টি ১৫৮ আসন পেয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই ফলাফলকে একটি প্রহসন বলে চিহ্নিত করে বলেন, ‘সংসদে এবং রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত  থাকবে।’ ১৯৮৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তারিখে এরশাদ ১৫ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। শেখ হাসিনা এ নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগের তিনদিনব্যাপী দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন হয়। অধিবেশনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে আমাদের জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীর  মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।’ তিনি সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করার দাবি জানান। কাউন্সিলের পর গণতান্ত্রিক আন্দোলন আরও বেগবান করা হয়। নব্বইয়ের নাগরিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পতন হয় কিন্তু দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার তখনও অনেক বাকি। জাতির ত্রাতা হয়ে এলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করলেন। তার  নেতৃত্বে জনগণের আন্দোলনের ফলে দেশ সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করল।   শেখ হাসিনা আজ শুধু বাংলাদেশের মানুষের কাছে নয় সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। গণতন্ত্র  প্রতিষ্ঠায় তার নিষ্ঠা, একাগ্রতা তাকে বিশ্বজুড়ে গণমানুষের নেত্রী হিসেবে পরিচিত করিয়েছে। তিনি সারা পৃথিবীর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রেরণা। যেখানে মানবতার বিপর্যয় সেখানেই শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের তিনি মাতৃস্নেহে আশ্রয় দিয়েছেন। জলবায়ু, শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারী অধিকার, শান্তি প্রতিষ্ঠা আঞ্চলিক সহায়তা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি জনতার কণ্ঠস্বর হয়েছেন। এ কারণে আমরা বলতে পারি বঙ্গবন্ধু,  বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা এক সূত্রে গাঁথা। আমি তার বিভিন্ন মেয়াদের অর্জন নিয়ে দু-একটি কথা জানাতে চাই।  প্রথম মেয়াদ (১৯৯৬-২০০১)   শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশ বিমসটেক (বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ড)  এবং ডি-৮ (বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক)-এ  অর্থনৈতিক জোটে যোগ দেওয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতায় সুযোগ আরও সম্প্রসারিত হয়। ১৯৯৯ সালের মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে ‘ঢাকা ঘোষণা’ গৃহীত হয়। ১৯৯৯ সালের নভেম্বর  মাসে রাজধানী ঢাকায় বিনিযোগ ও বাণিজ্য সহযোগিতা বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৯ সালে  আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক ভারত মহাসাগরীয় রিম অ্যাসোসিয়েশনে বাংলাদেশকে সদস্য হিসেবে বরণ করা  হয়। শেখ হাসিনার উদ্যোগেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) আইনে স্বাক্ষর করে।   ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মেয়াদে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে : ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত ৩০ বছরমেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, ১৯৯৭  সালের ডিসেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, খাদ্যশস্য উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন করা।   ভূমি আইন চুক্তি অনুস্বাক্ষরেও বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম রাষ্ট্র। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে শান্তি ও  সহযোগিতায় এশীয় সাংসদদের প্রথম সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ  হাসিনাকে সংগঠনটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের  অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা অর্জন,  জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ লাভ, অ্যাসোসিয়েশন ফর এশিয়ান পার্লামেন্টারিয়ান ফর পিস (এএপিপি) গঠন।  ১৯৯৯ সালে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য শেখ হাসিনা সরকার একটি নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করে। উদ্দেশ্য  ছিল ব্যক্তিখাত শক্তিশালীকরণ ও অধিক বৈদেশিক বিনিয়োগে আকৃষ্টকরণ।    আওয়ামী লীগ সরকার, ১৯৯৯ সালে জাতীয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমে কুখ্যাত ইনডেমনিটিট অধ্যাদেশটি  বাতিল করে- যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হত্যাকারীদেরর রক্ষার জন্য ১৯৭৫  সালে জারি করা হয়েছিল। যার ফলে খুনিদের বিচারের লক্ষ্যে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হয়। শেখ হাসিনা একটি সুবিস্তৃত  সামজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী নির্মাণে সচেষ্ট ছিলেন। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে তিনি বয়স্ক ভাতা প্রবর্তন করেন, যার  মাধ্যমে ৪ লাখ বয়স্ক ব্যক্তিকে মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়। প্রথম মেয়াদে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ  করে। অর্থনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে দেশ অনেকটা উন্নতি লাভ করে।  দ্বিতীয় মেয়াদ (২০০৯-২০১৩)   বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৫ সালে ‘১৪ দলীয় জোট’ এবং ২০০৬ সালে ‘মহাজোট’ নামে রাজনৈতিক দলগুলোর মোর্চা গঠন করে। ২০০৭-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা রুজু করা হয় এবং  তাকে এক বছর কারান্তরীণ রাখা হয়। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ভোটবিপ্লবের  মাধ্যমে ২৬২ আসনে (আওয়ামী লীগ ২৩০) বিজয়ী হয়।   এ মেয়াদে জাতীয় সংসদে ফৌজদারি কার্জবিধি (সংশোধন) বিল-২০০৯ পাস করার মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার  বিভাগ পৃথকীকরণ সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করা; সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো চালু করা; গৃহহীন  দুস্থ ও অতি দরিদ্রদের জন্য আশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আশ্রয়ণ  প্রকল্প গ্রহণ; অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ‘দারিদ্র্য নিরসন  কৌশলপত্র’ জাতীয় সংসদের অনুমোদন; খাদ্য নিরাপত্তা মজবুত, নারীর সক্ষমতা বিকাশ এবং জীবন মান উন্নয়নে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি পুনরায় চালু করা; ২০০৯ সালে জাতীয় গ্রিডে নতুনভাবে বিদ্যুতের সরবরাহ বৃদ্ধি; প্রায় ৫০০ ফোরামে অংশগ্রহণের  মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিদেশে বাঙালিদের শ্রমবাজার উন্নয়নে ইতিবাচক ফলাফল আনয়নে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান অনন্য।  দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ অনুমোদন করেছে। এই শিক্ষানীতিতে  শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্মমুখী ও প্রযুক্তি নির্ভর করার সুপারিশ পাশাপাশি রাষ্ট্রের মৌলিক মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের  চেতনাকে সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে।  দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য রাষ্ট্রের মধ্যকার বৈদেশিক সম্পর্ককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করেছেন এবং একটি উদার ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।  চীন, ভুটান, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও সুইডেন প্রভৃতি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটানোর মধ্য দিয়ে দেশের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে। শেখ  হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে আছে-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা, নতুন স্থলবন্দর স্থাপন  এবং বিদ্যমান স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়ন সাধন, পরীক্ষামূলকভাবে সীমান্ত বাজার চালু করা, বাংলাদেশের আশুগঞ্জ ও ত্রিপুরার শিলাঘাটকে পোর্ট-অব-কল ঘোষণা, আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। ভারত, নেপাল ও চীনকে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিতে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, ২০৫ মেগাওয়াট  বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর, বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার যৌথ উদ্যোগে  কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি এবং বাংলাদেশের যোগাযোগ অবকাঠামো ও নদীপথের উন্নয়নে ভারতের কাছ থেকে সহজ শর্তে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণপ্রাপ্তি।  আশা করা হচ্ছে ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ব্যাপকভাবে লাভবান হবে।  অর্থনৈতিক সহযোগিতা ছাড়াও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে নিরাপত্তাবিষয়ক সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারেও আগ্রহ দেখিয়েছে।  ২০১২ সালে সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের রায়ের ফলে সমুদ্রে ১ লাখ ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে। তৃতীয় মেয়াদ (২০১৪-২০১৮)  সপ্তম, অষ্টম এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ক্ষমতা ধরে রাখা এবং রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমনের নামে মামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক এ ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষিত হওয়া প্রভৃতি কারণে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের উদ্যোগ নেয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। ২০১৩ সালের  ১৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠিত হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ১৭টি দল অংশগ্রহণ করে। ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়লাভ করে। ৫ জানুয়ারি রোববার বাকি আসনগুলোতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ  সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর জননেত্রী শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনা করেন। দেশের নিজস্ব অর্থায়নে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করার নির্দেশ  দেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১৭৫১ মার্কিন ডলার।  ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয় এবং দেশ-বিদেশের ২০ জন নাগরিক নিহত হয়। ৭ জুলাই একই গোষ্ঠী কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে জঙ্গি হামলা চালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তবে তাদের আত্মঘাতী হামলায় সেদিন ৩ জন নিহত হয়। এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশ বিদেশের অনেক বিশ্লেষক আশঙ্কা করেছিলেন যে, বাংলাদেশ আফগানিস্তান অথবা পাকিস্তানের পরিণতি বরণ  করতে যাচ্ছে। সকলের আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণিত করে সরকার কঠোরভাবে জঙ্গিবাদ দমন করেছে। আইনশৃঙ্খলা  বাহিনীকে শক্তিশালী করা ছাড়াও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।  তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনা দেশকে আরও গতিশীল ও উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করেন। আর্থসামাজিক ও  রাজনৈতিক জীবনে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়।  চতুর্থ মেয়াদ (২০১৯-চলমান)  শেখ হাসিনার চতুর্থ মেয়াদ শুরু হয় ২০১৯ সাল থেকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী  লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বেশিরভাগ সংসদীয় আসনে জয়লাভ করলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো  নির্বাচনে জয়ী হয়। বিরোধীদলীয় প্রধান নেতা ছিলেন ড. কামাল হোসেন। ড. কামাল হোসেন ব্যাপক ব্যবধানে পরাজিত হন। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষে শেখ হাসিনা সরকার ও তার দল কাজ করে চলেছে। শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হাতে নিয়েছেন। বিভিন্ন জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ  অব্যাহত আছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণসহ বেশকিছু  মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে কিংবা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।  আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশ এক সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের প্রতীক। উন্নয়ন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। ক্রমবর্ধমান ধারায় দ্রুতগতিতে তা অগ্রসরমান। অদম্য অগ্রগতির এই ধারাকে অব্যাহত রাখার প্রয়াসে সকলকে তিনি দেশের জন্য কাজ করার নিরন্তর  প্রেরণা জুগিয়ে চলেছেন। তাই গর্বের সঙ্গে বলতে পারি আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন আর তিনিই বাঙালির শেষ ভরসা। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, অসীম সাহস, মানুষের প্রতি অগাধ বিশ্বাস-ভালোবাসা, সততা, নিষ্ঠা আর নিরলস পরিশ্রম তাকে উন্নয়ন ও জাতীয় ঐক্যের সমার্থক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।   প্রফেসর ড. মো. শাহ্ আজম: উপাচার্য, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ  [লেখাটি ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার জন্মোৎসবে রবীন্দ্র বিশবিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহ্ আজম কর্তৃক প্রদত্ত প্রধান অতিথির ভাষণ থেকে সংকলিত]
১৭ মে, ২০২৪

স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনের পক্ষে জাতিসংঘে ১৪৩ দেশ
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে জাতিসংঘে ভোটাভুটি হয়েছে। এতে দেশটির পক্ষে বাংলাদেশসহ ১৪৩ দেশ ভোট দিয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শুক্রবার (১০ মে) এ বিষয়ে ভোটাভুটি হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।  প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনের পক্ষে আবারও নিরাপত্তা পরিষদে ভোট নেওয়া হোক। এতে আপনাদের সমর্থন আছে কিনা।  সাধারণ পরিষদের এ প্রস্তাবে ১৪৩ দেশ পক্ষে ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলসহ ৯টি দেশ বিপেক্ষে ভোট দিয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল ২৫ দেশ।  সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এ প্রস্তাব ফিলিস্তিনিকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেয় না, তবে কেবল তাদের যোগদানের যোগ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১১ সালে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ পেতে আবেদন করেছিল ফিলিস্তিন। সেই আবেদন এখনো পড়ে আছে। গত মাসে নিরাপত্তা পরিষদে ভোটের আয়োজন করা হয়। সেখানে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘে পূণ সদস্যপদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের ১২টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ায় তা আর পাস হয়নি। তবে পূর্ণ সদস্যপদের আবেদন আবারও সচল করার চেষ্টা করছে ফিলিস্তিন। সাধারণ পরিষদে আজ এই প্রস্তাব পাস হলে কার্যকরভাবে তা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কোনো দেশকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ পেতে হলে অবশ্যই নিরাপত্তা পরিষদের ছাড়পত্র লাগবে। নিরাপত্তা পরিষদ ছাড়পত্র দিলে বিষয়টি উঠবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে। ১৯৩ সদস্য বিশিষ্ট এই পরিষদের কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দিলেই তবে ওই দেশটি জাতিসংঘে প্রবেশ করতে পারবে। ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দিতে না পারলেও শুক্রবারের প্রস্তাব পাস হলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে কিছু বাড়তি সুবিধা পাবে দেশটি। যেমন সাধারণ পরিষদে অন্যান্য সদস্য দেশের মতো ফিলিস্তিনের জন্য সিট বরাদ্দ থাকবে। তবে তারা কোনো প্রস্তাবে ভোট দিতে পারবে না। সাত মাসের বেশি সময় ধরে গাজা যুদ্ধ চলছে। ইসারয়েলি হামলায় সেখানে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিরসনে এই যুদ্ধের মধ্যে আবারও দ্বিরাষ্ট্রীয় সমধানের বিষয়টি আলোচনায় আসছে। দ্বিরাষ্ট্রীয় সমধানের মূল কথা হলো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাশাপাশি অবস্থান করবে।
১০ মে, ২০২৪
X