আক্রান্ত হলে নীরব থাকবে না আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ আক্রমণ করবে না। কিন্তু আক্রান্ত হলে নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকবে না। অপশক্তির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঢাকা-৪, ৫ ও ১৮ নম্বর আসনের সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে মন্ত্রী দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বনানী সেতু ভবন এবং বিআরটিএর কার্যালয় পরিদর্শন করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা এখনো ধ্বংসের সুরে কথা বলেন। আর কত ধ্বংস? আর কী চান? বিএনপি এই দেশ চায় না, এদেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক তা-ও চায় না। গত কয়েকদিনে তার প্রমাণ হয়েছে। তিনি বলেন, যারা এ ধরনের ঘৃণিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ। এই দায়বদ্ধতা পূরণে অপশক্তিকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। দেশবিরোধী এই অপশক্তি বিভিন্ন ধরনের গুজব সৃষ্টি করছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিহাসের জঘন্যতম নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত ও শিবির। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ নিখাদ ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, এ ধরনের ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা এর দায়ভার নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শুধু নন, সমগ্র দেশবাসীর কাছে এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসন্ত্রাসের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী জড়িত। এই সন্ত্রাসী বাহিনী রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। অনেক নিরীহ মানুষ ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং নির্মমভাবে হত্যা করেছে। নজিরবিহীনভাবে সাংবাদিকদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করেছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির বিভিন্ন স্মারক যেমন—মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, সেতু ভবন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবন, বিআরটিএ, ডাটা সেন্টার, বিভিন্ন থানা ও পুলিশ বক্স, নরসিংদীতে কারাগার এবং বিভিন্ন স্থাপনা ও হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ও অগ্নিসংযোগ করেছে। জনগণের জীবনযাত্রায় স্বস্তি প্রদানকারী মেগা প্রকল্পগুলো লক্ষ্য করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির মূল উদ্দেশ্যই হলো বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়া। সাধারণ মানুষের ওপরে ন্যক্কারজনক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো একটি গণবিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তির পক্ষেই সম্ভব। এই অপশক্তি মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মূল চেতনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, যা আমরা কোনোভাবেই হতে দিতে পারি না।
মতবিনিময় সভার পর রাজধানীর শ্যামলী-আদাবর রিং রোডে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বলেন, ঢাকাবাসী কত চেয়েছিল মেট্রোরেল। আজ ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের যত অর্জন, সন্ত্রাসীদের আক্রমণে সেগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল এখনো মিথ্যাচার করছেন। তিনি এখনো ধ্বংসের সুরে কথা বলছেন, আগুনের কথা বলছেন। তারা এ দেশ চাননি, মুক্তিযুদ্ধ চাননি। পদ্মা সেতু চাননি, মেট্রোরেল চাননি। আজ মেট্রোরেল বন্ধ, ধ্বংসলীলায় পরিণত।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ।
২৫ জুলাই, ২০২৪