শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
নাম বদলের দাবিতে আজও অনশনে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা
গাজীপুরের ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের দাবিতে টানা ২৫ ঘণ্টা ধরে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।  বৃহস্পতিবার (২২ মে) উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রস্তাব উঠতে পারে, এমন আশায় তারা আন্দোলনের ইতিবাচক ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন। সভা থেকে অনুকূল সিদ্ধান্ত এলেই তারা আন্দোলন স্থগিত করবেন বলে জানিয়েছেন। এর আগে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই অনশন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা নাম পরিবর্তনের দাবিতে অনড় রয়েছেন। অনশন চলাকালে এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি আবার আন্দোলনস্থলে ফিরে আসেন। বর্তমানে ১১ জন শিক্ষার্থী অনশনে রয়েছেন। আন্দোলনকারীরা আশা করছেন, আজকের কেবিনেট সভায় সরকার তাদের দাবির প্রতি সদয় হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যথায় তারা অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি বিকল্প নাম প্রস্তাব করেছেন: বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডভান্সড টেকনোলজি এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি। তাদের দাবি, এই নামগুলোর যেকোনো একটি নির্ধারণ করা হোক। এর আগে, গত সোমবার সকালে ‘লংমার্চ টু ইউজিসি’ কর্মসূচির আওতায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে রওনা হয়ে শিক্ষার্থীরা ইউজিসির সামনে অবস্থান নেন। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ গত মঙ্গলবার তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ইউজিসির ভাষ্য অনুযায়ী, নাম পরিবর্তনের এখতিয়ার তাদের হাতে নেই, কারণ এর জন্য আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন, যা কেবলমাত্র সরকার করতে পারে। ইউজিসি এ বিষয়ে কেবল সুপারিশ করতে পারে, যা তারা ইতিমধ্যেই করেছে। শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ, মানসিক চাপ ও সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দয়া করে দ্রুত, সুস্পষ্ট ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।’
১২ ঘণ্টা আগে

হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক ভিডিও প্রকাশের পর ভুল স্বীকার ইসরায়েলের
সম্প্রতি গাজায় ১৫ জরুরি সহায়তাকর্মীকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা। হত্যার পর লাশগুলো একসঙ্গে মাটি চাপা দেয় তারা। প্রথমে এই হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করে ইসরায়েল। তবে গতকাল (৫ এপ্রিল) এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশেষে ভুল স্বীকার করেছে তেলআবিব।   বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সহায়তাকর্মীদের হত্যার ওই ঘটনায় ভুল স্বীকার করেছে ইসরায়েল। গত ২৩ মার্চ দক্ষিণ গাজায় এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় ইসরায়েলি সেনারা। হত্যার লোমহর্ষক ভিডিওটি প্রকাশ পেয়েছে শনিবার।  ঘটনার দিন রাফার কাছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) একটি অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের একটি গাড়ি এবং গাজার সিভিল ডিফেন্সের একটি অগ্নিনির্বাপক ট্রাকের বহরের ওপর ইসরাইলের সৈন্যরা গুলি চালায়। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, সহায়তাকর্মীদের গাড়িবহরে অতর্কিতভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে একাধিক সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনা।  ইসরায়েলি বাহিনী শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, নিহতদের লাশ একসঙ্গে মাটি চাপা দেয় তারা। এক সপ্তাহ পর সন্ধান পাওয়া যায় সেই গণকবরের। ওই সময় সহায়তাকর্মী রেফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়, যেখানে ঘটনার ফুটেজ ছিল। ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার আগে তিনি ওই ভিডিও ধারণ করেন।  ভিডিও প্রকাশের পর ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে দাবি করে, গাড়ি বহরটি হেডলাইট বা ফ্ল্যাশিং লাইট ছাড়াই অন্ধকারের মধ্যে এসেছিল, যা তাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছিল। এ ছাড়া যানবাহন চলাচলে আগে থেকেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি। তবে নিহত সহায়তাকর্মীর ধারণ করা মোবাইল ফোনের ফুটেজে দেখা গেছে, আহতদের সাহায্য করার জন্য ডাকাডাকির সময় যানবাহনগুলোতে আলো জ্বালানো ছিল। এমনকি প্যারামেডিক কর্মীরা রিফ্লেকটিভ হাই-ভিউজ ইউনিফর্ম পরে ছিল, অর্থাৎ অনেক দূর থেকে প্রতিফলিত হয় এমন পোশাক পরে ছিল।  নিউইয়র্ক টাইমসের শেয়ার করা ভিডিওটিতে দেখা যায়, গাড়িগুলো রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ছিল, তারপর ভোর হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কোনো সতর্কতা ছাড়াই গুলি ছোড়া শুরু হয়। ফুটেজটি পাঁচ মিনিটের বেশি চলতে থাকে এবং আহত কর্মী রাদওয়ান নামে একজন প্যারামেডিককে তার শেষ প্রার্থনা করতে শোনা গেছে। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জোর দিয়ে বলেছে, অন্তত ছয় চিকিৎসক হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। তবে আইডিএফ স্বীকার করেছে যে, তাদের সৈন্যরা যখন গুলি চালায় তখন সহায়তাকর্মীরা নিরস্ত্র ছিল। ইসরায়েল দাবি করছে, যখন অ্যাম্বুলেন্সগুলো মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে এলাকার কাছে পৌঁছায়, তখন বিমান নজরদারি মনিটর থেকে স্থলে থাকা সৈন্যদের সতর্ক করা হয় যে, একটি গাড়ি বহর ‘সন্দেহজনকভাবে এগিয়ে আসছে’। অ্যাম্বুলেন্সগুলো হামাসের গাড়ির পাশে থামায়। সৈন্যরা মনে করেছিল যে, তারা হুমকির সম্মুখীন এবং এজন্য তারা গুলি চালিয়েছিল।  নতুন দাবির পাশাপাশি ইসরায়েল এখন তাদের আগের দাবি ভুল বলে স্বীকার করেছে। রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনায় একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে আইডিএফ বলছে, তারা এ ঘটনার ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত’ করবে।
০৬ এপ্রিল, ২০২৫

নাম পরিবর্তন হচ্ছে না মঙ্গল শোভাযাত্রার
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি নানা আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত থাকছে। পাশাপাশি এবারের নববর্ষ উদযাপন হবে দুদিনব্যাপী। গতকাল সকালে আসন্ন পহেলা বৈশাখের আয়োজন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট হলে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নববর্ষ উদযাপন ও মঙ্গল শোভাযাত্রার বিষয়ে বিভিন্ন অংশীজন আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের বর্ষবরণের স্লোগান—‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এবারের বৈশাখের মূল আয়োজনের সঙ্গে থাকছে চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবও। গত কয়েক মাস মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের আলোচনা চলছিল। ২০২৩ সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী এই শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশ পাঠান। তার যুক্তি ছিল, ‘মঙ্গল’ শব্দটি ধর্মীয় সংশ্লিষ্ট এবং শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত বৃহৎ আকৃতির পাখি, মাছ ও অন্যান্য প্রতিকৃতি মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। একই বছর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নববর্ষ উদযাপনের জন্য মঙ্গল শোভাযাত্রার নির্দেশনা দিলেও, পরে তা বাতিল করে শুধু নববর্ষ উদযাপনের অনুমতি দেয়। রমজান মাসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষার যুক্তিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে জানায় মাউশি। তবে এসব বিতর্ক ও আলোচনার মধ্যেও মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আয়োজকরা জানান, এই শোভাযাত্রা ইউনেস্কো কর্তৃক ২০১৬ সালে বিশ্বঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে এবং বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এটি যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে। ফলে নাম পরিবর্তন করলে এর ঐতিহ্য ও গুরুত্বের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। দুদিনব্যাপী বৈশাখী আয়োজনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা, লোকজ উৎসব ও বিভিন্ন সৃজনশীল কার্যক্রম। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রতিফলন ঘটানো হবে, যা জাতির সামগ্রিক অগ্রযাত্রাকে উদযাপন করবে। নববর্ষ উদযাপনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখবে, যাতে সবাই নির্ভয়ে এই উৎসবে অংশ নিতে পারেন। মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন না করে বৈশাখী আয়োজন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন সংস্কৃতিপ্রেমীরা। তাদের মতে, এই শোভাযাত্রা শুধু একটি উৎসব নয়; বরং এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক। আয়োজকরা আশা করছেন, সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবারের নববর্ষ উৎসব আরও প্রাণবন্ত ও সার্থক হয়ে উঠবে। নতুন বছরের আলোয় উজ্জ্বল হোক বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির বন্ধন—এই প্রত্যাশাই সবার।
২৫ মার্চ, ২০২৫

মেডিকেল প্রশ্নফাঁস / মূল হোতার স্ত্রীর ৩৪ বিঘা জমি জব্দ 
মেডিকেল ও ডেন্টালের প্রশ্নফাঁসের মূল হোতা জসিম উদ্দিন ভূইয়া মুন্নুর স্ত্রী শারমীন আরা জেসমিনের ৩৪ দশমিক ৩৯ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে রয়েছে, ৮১০শতাংশ বাগানবাড়ি, দুটি বাড়ি, ১২ হাজার বর্গফুটের টিনশেড ও ৮ তলার বাণিজ্যিক ভবন। এ ছাড়া তার ৬টি ব্যাংক হিসাবের ৫ লাখ ৮২ হাজার ২২৯ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।  সোমবার (১০ মার্চ) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।  আদালত সূত্রে জানা গেছে, দুদকের পক্ষে উপপরিচালক কে এম আসাদুজ্জামান অবরুদ্ধ ও জব্দ চেয়ে আবেদন করেন। পরে বিচারক সেটি মঞ্জুর করেন।  আবেদনে বলা হয়েছে, শারমীন আরা জেসমিনের স্বামী জসিম উদ্দিন ভুইয়া মুন্নুর নামে ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারা ও ২৭ (১) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।  অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, আসামি তার অবৈধভাবে অর্জিত স্থাবর সম্পদসমূহ বিক্রি বা হস্তান্তর করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যা অনুসন্ধানটি সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও প্রমাণের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বিধায়, অভিযুক্তের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নিম্ন বর্ণিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসমূহ আদালতের মাধ্যমে ক্রোক ও ব্যাংক হিসাবসমূহ অবরুদ্ধ করা একান্ত আবশ্যক। ২০২০ সালের ২৩ জুলাই মেডিকেল ও ডেন্টালের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে চক্রের প্রধান জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া ওরফে মুন্নুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
১০ মার্চ, ২০২৫

নাম পরিবর্তন ডিএসসিসির ১০ প্রতিষ্ঠান-স্থাপনার
বঙ্গবন্ধু পরিবার ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্তদের নামে করা ১০ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গতকাল বুধবার ডিএসসিসির বুড়িগঙ্গা হলে ডিএসসিসির চতুর্থ পরিচালনা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ-সংক্রান্ত পরিচালনা কমিটির ২৫ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, ‘নাগরিকদের চলাচল নির্বিঘ্ন ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে পবিত্র রমজান মাসের পূর্বেই বিভিন্ন রাস্তায় সৃষ্ট পিটহোলগুলো মেরামতের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পতিত সরকারে সঙ্গে জড়িতদের নামে নামকরণকৃত ১০টি প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম বহাল এবং কয়েকটি স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট স্থানের নামে নামকরণের সুপারিশ করা হয়।’ রায়ের বাজার স্লুইস গেট থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের নাম ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি সরণি’ থেকে পরিবর্তন করে আগের নাম ‘ইনার রিং সড়ক’, কামরাঙ্গীরচরের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সরণি’ এর নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম ‘ঝাউচর প্রধান সড়ক’, কামরাঙ্গীরচরের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম সরণি’র নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম ‘কামরাঙ্গীরচর লোহারপুল-বুড়িগঙ্গা সড়ক’, কলাবাগানের ‘শহীদ শেখ রাসেল শিশু পার্ক’র নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম ‘কলাবাগান শিশু পার্ক’, যাত্রাবাড়ীর ‘শহীদ শেখ রাসেল শিশু পার্ক’র নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম ‘যাত্রাবাড়ী শিশু পার্ক’ করার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া কামরাঙ্গীরচরের লোহারপুলের ‘মেয়র শেখ তাপস সেতু’র নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম ‘কামরাঙ্গীরচর ব্রিজ’, শাহবাগের ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু পার্ক’র নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম ‘শহীদ জিয়া শিশু পার্ক’, ধূপখোলার ‘মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র’, এর নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম ‘গেন্ডারিয়া সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র’, গেন্ডারিয়ার ‘মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পার্ক’র নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম ‘সরাফতগঞ্জ পার্ক’, কামরাঙ্গীরচরের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র’র নাম পরিবর্তন করে পূর্বের নাম ‘কামরাঙ্গীরচর সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র’ করার সুপারিশ করা হয়। ডিএসসিসির প্রশাসক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন জনপ্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। সীমিত সম্পদ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে ব্যবহারের মাধ্যমে এই জনপ্রত্যাশা পূরণে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।’ সভায় ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান, সচিব মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঞাসহ বিভাগীয় প্রধান এবং আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
০১ জানুয়ারি, ১৯৭০

হত্যাকাণ্ডের জেরে মহিষ লুট বিএনপি নেতার!
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে গুলি করে যুবক হত্যার ঘটনায় প্রতিপক্ষের মহিষের বাথান বাড়ি থেকে ৪৬টি মহিষ লুট করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার মরিচা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে তার লোকজন মহিষগুলো লুট করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। লুট হওয়া মহিষ বাথানের মালিক সাইদ মন্ডল ও তার স্ত্রীর অভিযোগ, মঙ্গলবার ভোররাতে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মন্ডলপাড়া পদ্মার চরে সাইদ মন্ডলের মহিষের বাথান বাড়ি থেকে রাখালদের মারপিট ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪৬টি মহিষ লুট করে নিয়ে যায় সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান ও তার লোকজন। এ সময় তারা মহিষের রাখাল মাজদার আলী (৫০), কামাল হোসেন (৩৫) ও সৈকতকে (৩৫) বেধড়ক মারপিট করে ও অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী রহিমপুর মাঠে নিয়ে আটকে রাখে। বাথানের মহিষসহ মহিষের রাখালদের অপহরণ করা হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১দিকে দৌলতপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মহিষের রাখালদের উদ্ধার করে। তবে লুট হওয়া ৪৬টি মহিষ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। মহিষগুলো লুট করার পর পরই তারা ট্রাক ভর্তি করে অন্যত্র পাচার ও বিক্রয় করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।  গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মন্ডলপাড়া ঘাটের নিচে পদ্মার চরে রাজু (১৮) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত রাজু একই ইউনিয়নের বৈরাগীরচর ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম প্রামানিকের ছেলে। এ ঘটনার পর চরে সাইদ মন্ডলের বাথান বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৪৬টি মহিষ লুট করা হয়। লুট হওয়া ৪৬টি মহিষের মূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা উল্লেখ করে কুষ্টিয়া সেনা ক্যাম্প, পুলিশ সুপার ও র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দিয়েছে মহিষের বাথান মালিক সাইদ মন্ডলের স্ত্রী তমা খাতুন। অভিযোগে মরিচা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানকে (৬০) প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে মহিষ লুটের অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি মঙ্গলবার লাশের ময়নাতদন্তসহ মরদেহ নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। এলাকার খারাপ লোক এমন কাজ করেছে কিনা আমার জানা নেই।’ মহিষ লুটের অভিযোগের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মো. নাজমুল হুদা বলেন, এমন খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম গিয়েছিল। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।  
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

নাম না থাকলে বসা যাবে না, কোকোকে বললেন খালেদা জিয়া
২৩ ডিসেম্বর ২০০২। শুভ্র তুষারে ঢাকা বেইজিং। তীব্র শীত আর হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডার ভেতর চীনের ১৬১ বছরের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী পিকিং ডাক রেস্টুরেন্টে হাজির হলেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কিছুক্ষণ আগে বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন তিনি। ডায়োতাই স্টেট গেস্ট হাউসে উঠেছেন। বেইজিংয়ের সন্ধ্যার যানজট পেরিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের একটু আগেই নৈশভোজের দাওয়াতে পৌঁছে যান তিনি । আয়োজক চীনা কংগ্রেসের (পার্লামেন্টের) লেডি ভাইস চেয়ারম্যান তখনো এসে পৌঁছাননি। ডিনার রুমে ঢুকে হেড টেবিলে বসলেন বেগম খালেদা জিয়া। তার পেছনেই এলেন আদরের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। তিনি রুমে ঢুকেই সোজা বসতে গেলেন হেড টেবিলে ঠিক মায়ের সামনে। অমনি মা বলে উঠলেন, ‘দেখ্ দেখ্ তোর নাম আছে কি না? নাম না থাকলে কিন্তু এখানে বসা যাবে না।’ বলেই মুচকি হাসলেন। আর অমনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে টেবিলে প্রতিটি চেয়ারের সামনে লেখা নামগুলো পড়তে লাগলেন কোকো, খুঁজতে লাগলেন নিজের নাম। প্রায় ফাঁকা ডিনার রুমে আমি দাঁড়িয়ে পরমানন্দে উপভোগ করছিলাম মা-ছেলের রসিকতা। মুগ্ধতা কাটল ম্যাডাম যখন বললেন, দেখছো, আমরা আগে চলে আসছি। এখানে কোনো লোক নেই। বাংলাদেশে হলে এতক্ষণে কত লোক হয়ে যেত। ঢাকায় খবর পাঠানোর তাড়া নিয়ে আমি সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম। পথে ভাবছিলাম মা-ছেলের নিবিড় ঘনিষ্ঠতা নিয়ে, সেন্স অব হিউমার নিয়ে। আরাফাত রহমান কোকোর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় তাদের ঢাকা সেনানিবাসের বাড়িতে। সেদিন দৈনিক ইনকিলাবের রিপোর্টার হিসেবে আমি গিয়েছিলাম তখনকার বিরোধীদলীয় নেতার সাক্ষাৎকার নিতে। ঠিক সাক্ষাৎকার নয়, আসলে একটি ঘটনায় বেগম জিয়ার প্রতিক্রিয়া জানতে। স্মৃতি যদি প্রবঞ্চনা না করে এটা ১৯৯৭ সালের কথা। বিরোধী দলের ডাকে টানা হরতাল চলছিল। সম্ভবত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির প্রতিবাদে। ওই হরতালে সন্ধ্যায় বাইরে থেকে বাড়ি ফিরছিলেন বড় ছেলে তারেক রহমান। সেনানিবাসের মূল রাস্তা থেকে শহীদ মইনুল রোডে ঢুকে সামান্য এগোলেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি। মেইন রোড থেকে বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে তারেক রহমান দেখলেন শহীদ মইনুল রোডের প্রবেশমুখে বসানো হচ্ছে বাঁশকল। এটা যান ও মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য দেওয়া এক ধরনের ব্যারিকেড। বলা নেই, কওয়া নেই, বাড়ির সামনে বসানো হচ্ছে বাঁশকল। দেখে হতবাক তারেক রহমান! বাঁশকল লাগানোর কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছে এর কারণ জানতে চান তিনি। সংশ্লিষ্টরা কোনো সদুত্তর না দিয়ে জড়িয়ে পড়েন বিতর্কে। খবর শুনে বাড়ির ভেতর থেকে ছুটে আসেন খালেদা জিয়া। তার বাড়ির প্রবেশ পথে তার অনুমতি বা ইচ্ছা ছাড়া বাঁশকল বসাতে বারণ করেন তিনি । শেষ পর্যন্ত পিছু হটে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা। একে তো হরতাল, তার উপরে আবার ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের ঘটনা বলে পুরো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই খবরের সন্ধানে ‘সংবাদপত্র’ লেখা স্কুটারে চড়ে ছুটে গেলাম। বনানী সৈনিক ক্লাবের গেট থেকে একটু দূরে নেমে গেলাম। সৈনিক ক্লাবের গেট পেরিয়ে হেঁটে চললাম ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে। হেঁটেই পৌঁছতে হলো ১০ নম্বর শহীদ মইনুল রোডের বাড়ির গেটে। নিরাপত্তা কর্মীরা আমাকে থামিয়ে দিলেন। বললাম তারেক রহমানের কাছে এসেছি। তারা বললেন, তিনি না এলে তারা আমাকে ভেতরে যেতে দেবেন না। রিসেপশন থেকে ভেতরে ফোন করে খবর দেওয়া হলো। একটু পরই এলেন তারেক রহমান। তার সঙ্গে ভেতরে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, কী ঘটনা ঘটেছে? বললেন, আম্মা কথা বলবেন। এ কথা বলে সামনের ছোট্ট বসার ঘরে নিয়ে আমাকে বসালেন। আর বললেন, আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে। ততক্ষণে চা খেয়ে নিন। এই বলে ভেতরে গেলেন তিনি। একটু পর ফিরলেন ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়ে। আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ছোট ভাইকে বললেন, আমাকে একটু সময় দিতে। ততক্ষণে চা-নাস্তা এলো। অল্প-স্বল্প দু-চারটা কথা হলো কোকোর সঙ্গে। তার সঙ্গে সেদিনই প্রথম পরিচয়। এখনও পরিষ্কার মনে পড়ে, ওই রাতে তারেক রহমানের চোখে-মুখে আমি উদ্বেগের ছাপ দেখেছি। কিন্তু আরাফাত রহমান কোকোর কথাবার্তায় তার মধ্যে সামান্য উদ্বেগও দেখিনি। মনে হলো রাষ্ট্রচিন্তা-রাজনীতি ভাবনা থেকে তার অবস্থান অনেক দূরে। একেবারে সাদামাটা একজন উচ্ছল তরুণ। বাড়ির গেটে কী ঘটেছে তা নিয়ে এতটুকু চিন্তিত নন তিনি। বছর কয়েক পরে আরেকবার তার সঙ্গে বসেছিলাম হাইকুর এক পাঁচতারা হোটেলের লবিতে, যা চীনের হাইনান প্রদেশের রাজধানী শহরে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের একদল আড্ডা জমিয়েছিল সেখানে। লবির পাশে হোটেলের ফ্যাক্স রুম। ওখান থেকে ফ্যাক্সে ঢাকায় যুগান্তর অফিসে খবর পাঠিয়ে লবিতে আসতেই কেউ একজন ডেকে বসালেন তাদের আড্ডায়। পরিচয় করিয়ে দিলেন আরাফাত রহমান কোকোর সঙ্গে। অত্যন্ত সজ্জন, বন্ধুবৎসল কোকোকে আবার কাছ থেকে দেখলাম। সামান্য বাক্যালাপেই তার আন্তরিকতার ছোঁয়া পেলাম। বছর তিনেক পরে আরেকবার ক্ষণিকের জন্য দেখা হলো আরাফাত রহমানের সঙ্গে। সাভারের অদূরে আশুলিয়ায় তার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘খালেদা জিয়া ওল্ড হোম’-এর উদ্বোধনীতে। আবারও কোকোর সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন তারেক রহমান। সামান্য হেসে কুশলাদি জানতে চাইলেন। তারপর অনেকবার দেখা হয়েছে কোকোর সঙ্গে। তবে কোনো রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নয়। কখনো দেখেছি তার বন্ধুদের সঙ্গে প্রাণ খুলে আড্ডা দিতে। কখনো সিথি ভাবিকে নিয়ে মুভেনপিক বা ক্লাব জিলাটোতে। দেখা হলে সালাম দিলেই আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলতেন, ভালো-মন্দ খোঁজখবর নিতেন। তখন বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছিল। তাই প্রধানমন্ত্রী পুত্রকে রাতের বেলায় কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়া গুলশান-বনানীতে দেখে নিরাপত্তা কর্মীরা উদ্বিগ্ন হয়ে যেতেন। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে আরাফাত রহমান কোকোর কোনো ভাবনাই ছিল না। তার জন্য বাড়তি নিরাপত্তা কিংবা নিরাপত্তা দিয়ে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়ার কথা বললে বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করতেন। বলতেন, ওগুলো লাগবে না। আমি নিজেই গাড়ি চালিয়ে চলে যাব। সম্ভবত কোকোর সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল আজাদ মসজিদে ঈদের জামাতে। তারপর নিজ বাড়িতে বন্দিদশা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, কারাবরণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে গেলেন ব্যাংককে চিকিৎসা নিতে। রাষ্ট্রক্ষমতা-রাজনীতির সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক না থাকলেও রিমান্ডের নামে নির্মম নির্যাতনের শিকার হলেন তিনি। ক্রিকেটপাগল সদা প্রাণোচ্ছল তরুণ কোকোকে ঠেলে দেওয়া হলো গুরুতর অসুস্থতার দিকে। অ্যাম্বুলেন্সে করে অক্সিজেন মাস্ক পরা কোকোকে আদালতে নিতে দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ। ক্রীড়ামোদী সুস্থ-সবল কোকোকে গ্রেপ্তার-পরবর্তী নির্যাতনে হুইলচেয়ারে বসিয়ে আদালতে হাজির করতেও দেখেছি। আদালতের সিঁড়িতে একহাত বুকে রেখে আরেক হাতে নিরাপত্তা রক্ষীদের ওপর ভর দিয়ে হেঁটে চলা প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কোঁকড়ানো কোকোর মুখ টেলিভিশন-সংবাদপত্রে দেখেছেন সবাই। দুঃখ পেলেও নির্যাতনকারীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা ছাড়া তীব্র প্রতিবাদের সুযোগ ছিল না সে সময়। বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে দেওয়া হলো সাজা। বাতিল করা হলো প্যারোল। ততদিনে ফুরিয়ে যায় কোকোর পাসপোর্টের মেয়াদ। আশির দশকের শেষভাগে মেলবোর্নের মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে অ্যাকাউন্টিংয়ে গ্র্যাজুয়েশনের সুবাদে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে থাকার নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ ছিল কোকোর। কিন্তু দেশের টানে মায়ের কাছে বাংলাদেশে ফিরে আসা আরাফাত রহমান কোকো গুরুতর অসুস্থতার সময়ে ব্যাংককের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হলেন। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তার পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করতে রাজি হয়নি থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস। উল্টো বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয় । বাধ্য হয়ে গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে ব্যাংকক ছেড়ে যান তিনি। এরপর একেবারে নীরবে-নিভৃতে নির্বাসিত জীবন কাটান কুয়ালালামপুরে। স্ত্রী আর দুই কন্যাকে নিয়ে কুয়ালালামপুরের জীবনে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্য ছিল না বলে শুনেছি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা মালয়েশিয়ায় যথাযথ চিকিৎসা তিনি পেয়েছিলেন কি না তা নিয়েও কারও কারও মনে সংশয় রয়েছে। এসবের মাঝেই ২৪ জানুয়ারি ২০১৫-এ তার এই মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। আমি মনে করি শেখ হাসিনার জিঘাংসার বলি আরাফাত রহমান কোকো। বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবারের আদরের কনিষ্ঠপুত্র হয়েও কোকোর জীবন ছিল আটপৌরে। ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ, রাজনীতিমুক্ত নিভৃতচারী একজন অমায়িক মানুষ ছিলেন। এরকম নিপাট ভালো একজন মানুষকেও রেহাই দেয়নি অন্ধ প্রতিহিংসুক হাসিনা। পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী বনানীর সেনা কবরস্থানে দাফনেরও সুযোগ দেওয়া হয়নি কোকোকে। এত জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অবিচারের কারণে কি না জানি না, তবে কোকোর জানাজায় সর্বস্তরের শোক কাতর লাখ লাখ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে তার প্রতি ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রকাশ । লেখক :  ব্যারিস্টার গিয়াস উদ্দিন রিমন সাবেক প্রিন্সিপাল লেকচারার ইন পুলিশ এডুকেশন, অ‍্যাংলিয়া রাসকিন ইউনিভার্সিটি, ইউকে।
২৫ জানুয়ারি, ২০২৫

নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ১৩ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ১৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে নাম পরিবর্তন করে এখনো কোনো আদেশ জারি করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন নাম হবে এলাকা এবং বাংলাদেশের নাম অনুসারে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়েছে। স্ট্যাটাসে লেখা হয়, শেখ পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন। পরিবর্তিত নামের একটি গ্রাফও শেয়ার করেন আসিফ। নতুন সিদ্ধান্তে নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ থেকে পরিবর্তন করে কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুরের মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়; গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শরীয়তপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রাখা হবে। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ করা হবে।
১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

নাম গোপন রেখে চাকরি নেওয়ার কারণ জানালেন ইরফান
চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ শেষে নাম গোপন রেখে জাহাজে চাকরি নেওয়ার কারণ জানালেন ইরফান (২৬)। এর মধ্যে তদন্তে উঠে এসেছে তার জীবনে করা নিজ এলাকার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন চাঁদপুর নৌপুলিশ সুপার কার্যালয়ের উপপরিদর্শক শেখ আব্দুস সবুর। তিনি বলেন, রিমান্ডে ইরফান জানিয়েছে- সে ভৈরবে নৌযানে কাজ করাকালে ওখানে কলেমা পড়ে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। মূলত তার পেছনের জীবনের ছোটখাটো অপরাধমূলক কাজকে আড়ালে রেখে ভালো ছেলে হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতেই ইরফান নামে জাহাজে খালাসি পদে চাকরি নেয়। তবে তার আইডি কার্ডে এখনো আকাশ মন্ডল নামটিই রয়েছে। কুমিল্লার র‍্যাব-১১ এর উপপরিদর্শক মো. তারেক জানান, ইরফানকে আমরা বাগেরহাটের চিলমারি থেকে গ্রেপ্তার করি। সেখানেই সে আত্মগোপনে ছিল। সে জানিয়েছিল বেতনভাতা ও রাগ ক্ষোভের থেকেই একাই সে এই ৭টি খুন করে ফেলেছে। সবাইকে রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ায়। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জাহাজের মাস্টারকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার নৃশংস পরিকল্পনা। পরে ধরা পড়ার ভয়ে একে একে আরও ছয়জনকে সে হত্যা করে ফেলে। যদিও কার্গো জাহাজ এমভি আল বাখেরার মালিক মাহবুব মোর্শেদ ডাবলু বলেন, ইরফান নাম দিয়ে আমার জাহাজে সে খালাসির পদে চাকরি নিয়েছিল। তাকে বেতনভাতাসহ অন্য সুবিধা দেওয়া হতো না এমন অভিযোগ বানোয়াট। আমি সাত খুনের ঘটনায় ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে ইতোমধ্যেই হাইমচর থানায় মামলা করেছি। থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে জানা যায়, ইরফান তার নিজ এলাকা বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামেও আকাশ মন্ডল নামেই পরিচিত। তার পিতা জগদীশ মণ্ডল মারা যাওয়ার পরই তারসহ পুরো পরিবারের অধঃপতন শুরু হয়। তার মা অভাব অনটন সহ্য করতে না পেরে তাদের দুই ভাইকে ফেলে মুসলিম যুবকের সঙ্গে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করে চলে যান। পরে নানা-নানির কাছে সে থাকা শুরু করার একপর্যায়ে কিছু দিনের ব্যবধানে তারাও মারা যান। এরপর তার একমাত্র আপন বড় ভাই বিধান মন্ডলও মুসলিম মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে ইসলাম ধর্মে গ্রহণ করে আবির হোসেন নাম নিয়ে সেও আলাদা থাকতে শুরু করে। ইরফানদের প্রতিবেশী জিহাদুল ইসলাম ও মো. জুয়েল বলেন, আকাশ নামে ছেলেটি ২০১৮ সালের দিকে একটি মুসলিম মেয়ের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে এলাকা ছাড়া হয়। এরপর ২০২২ সালের দিকে পুনরায় এলাকায় এসে তার ভাইয়ের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হওয়ায় আবার নিরুদ্দেশ হয়। এখন ফেসবুকে দেখে জানলাম সে জাহাজে সাতজনকে খুন করেছে। তবে আকাশ অভাবের তাড়নায় এলাকায় মানুষের ক্ষেত ও পুকুরে শাক ও মাছ চুরির অপরাধে জড়িয়েছিল। তবে কাউকে মারধর করা কিংবা আঘাত করার মতো দুঃসাহস কখনো দেখায়নি। আকাশের বড় ভাই আবির হোসেন বলেন, আমার নানা-নানি থাকতো সরকারি জায়গায় ঝুপড়ি ঘরে। তাদের মৃত্যুর পর আমিও সেখানেই থাকি। আমাদের পৈতৃক নিবাস মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া গ্রামে হলেও ছোটবেলায় বাবার মৃত্যুর পর মা ধর্মান্তরিত হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় আমরা দু ভাই নানা-নানির কাছেই বেড়ে উঠি। আমি ফলতিতা বাজারে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির একটা ছোট দোকান দিয়েছিলাম। সেখানে কাজের সময় আকাশ একটি নারীর সঙ্গে প্রেমঘটিত ঘটনায় এলাকা ছাড়ে। এরপর আর ওই দোকান সেখানে বেশি দিন টেকেনি। গেল শীতে এক দিনের জন্য সে বাড়িতে আসলে তাকে বকাঝকা করে তাড়িয়ে দেই। এরপর থেকেই সে জাহাজে জাহাজে কাজ করে এবং আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই। তবে এলাকায় থাকাকালীন সে বিয়ে করেনি এবং মাছ ধরা ও দিনজমুরি কাজ করত। এদিকে চিকিৎসাধীন জুয়েল নৌপুলিশকে জানিয়েছে, এই ছেলেই ছিল সেই ঘাতক এবং সেই ছিল জাহাজের নিখোঁজ নবম ব্যক্তি। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসকের ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্য চাঁদপুর নৌপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, গলায় অসুস্থতায় কথা বলতে না পারলেও কাগজে ৯ জনের নাম লিখেছিল। সেখানে হতাহতের আটজন বাদে অন্য নামটি ছিল ‘নিঃস্বার্থ’। তবে জুয়েল এখন জানিয়েছে মানসিক স্মৃতি ও শক্তি দুর্বল থাকায় ওই সময় ইরফানের স্থলে ওই নামটি অস্পষ্টভাবে লিখে ফেলেছিল। মূলত ইরফানই ছিল ওই ব্যক্তি যে তাকে গলায় জখম চালিয়েছে আর তার নামটিই লিখতে গিয়েই ‘নিঃস্বার্থ’ চলে আসে। তাই নাম নিয়ে যে চাঞ্চল্যটি ছিল সেটির অবসান হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইরফান নেশাগ্রস্ত ছিল কিনা সে বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। এ ছাড়া তার মানসিক অন্য কোনো সমস্যা ছিল কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে জানান, জাহাজটিতে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না। সবাই ঘুমন্ত ছিল এবং ওইদিন সবাই কক্ষের দরজা খোলা রেখেছিল অর্থাৎ দরজা টানা ছিল, তবে ছিটকানি আটকানো ছিল না। দরজা ভাঙ্গা না থাকায় বিষয়টি সহজভাবে বোঝা গেছে এবং জুয়েলের থেকে তথ্যেও এটি নিশ্চিত হয়েছি। তবে জুয়েল ভেতর থেকে দরজা লক করায় মূলত প্রাণে বেঁচেছিলে। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কাজ এগিয়ে নিচ্ছি আমরা। চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. আসিবুল ইসলাম বলেন, জাহাজে ৭ খুনের প্রত্যেকটা মরদেহের ময়না তদন্ত আমি করেছি। প্রত্যেককেই কানের একটু উপরে মাথায় কোপ দিয়ে মারা হয়েছে। যে একজনকে ধরা হয়েছে সে নেশাগ্রস্ত ছিল কিনা সন্দেহ। তার উগ্র আচরণের বহিঃপ্রকাশেই এমন কাণ্ড হতে পারে। উল্লেখ্য, গত ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ২৩ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার যে কোনো সময়ে চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালাস্থ মনিপুর টেক খাল পাড় সংলগ্নে জাহাজে সাতজন খুনের ঘটনাটি ঘটেছে বলে মামলা হয়। এমভি আল বাখেরা কার্গো জাহাজটি ২২ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম কাফকো জেটি থেকে ইউরিয়া সারবোঝাই করে ৯ জন কর্মচারীদেরকে নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার বাঘাবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে। ২৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় খুনের ওই ঘটনা সামনে আসে। এতে এমভি আল বাখেরা জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী খুন হন। এ ছাড়া গুরুতর আহত ব্যক্তি হন জাহাজটির সুকানি জুয়েল।
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

নাম বদলালেও চরিত্র বদলায়নি দুদকের
দুর্নীতি দমন ব্যুরো প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান ছিল। সে সময় সংস্থাটিকে পরিচালনা করা হতো সরকারের ইচ্ছায়। যে কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সরকার-ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ হাতে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি দুর্নীতি দমন ব্যুরো। বরং সরকারের অপছন্দের ব্যক্তিদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমন প্রেক্ষাপটে সুশীল সমাজ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থার চাপে ২০০৪ সালে আইন করে দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নামে একটি স্বাধীন সংস্থা গঠন করা হয়। তবে দুর্নীতি দমনে সংস্থাটির নাম বদলালেও চরিত্র বদলায়নি। প্রতিষ্ঠার ২০ বছরেও দুদকের অবস্থা ‘যেই লাউ সেই কদু’। যেই ক্ষত নিরসনে ২০০৪ সালে দুদক আইন করা হয়েছে, তা খাতা-কলমেই রয়ে গেছে। নাম পরিবর্তন ছাড়া সংস্থাটিকে শক্তিশালীকরণে আদতে তেমন কাজই হয়নি। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল দুদককে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। আবার সরকার-ঘনিষ্ঠদের বেলায় ছিল ‘ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা’। সর্বাঙ্গে ক্ষত দুদককে শক্তিশালী করতে এখন সংস্থাটির সর্বাঙ্গে অস্ত্রোপচার করে ওষুধ দিতে হবে বলে মনে করছেন দুদকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। দুদকের সংস্কারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে একটি কমিশন করে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ৭ জানুয়ারি কমিশন তাদের প্রতিবেদন দিতে পারে বলে জানা গেছে। দুদকের সংস্কার নিয়ে কালবেলার পক্ষ থেকে সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাদের বক্তব্যমতে, সংস্থাটি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। দলীয় রাজনীতি এবং আমলাদের হাতে একপ্রকার জিম্মি হয়ে আছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে রেখেছেন অন্তত ৪৮ জন প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে রয়েছেন মহাপরিচালক পাঁচজন, পরিচালক ১৬ জন এবং ১৬ জন উপপরিচালকসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তা। প্রেষণে আসা কর্মকর্তাদের অধিকাংশই প্রশাসন ক্যাডারের। ফলে বিগত সময়ে প্রশাসন ক্যাডারদের বিরুদ্ধে আসা বেশিরভাগ অভিযোগই হিমাগারে। কিছু অভিযোগ অনুসন্ধান না করে দুদক আইন ভঙ্গ করে বরং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠানো হয় যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক) থেকে। ২০১৮ সালে দুদকের জন্য অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হলেও সেই অনুপাতে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরেই জনবল সংকটে ভুগছে সংস্থাটি। দুদক আইনে নিজস্ব প্রসিকিউশন নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও গত ২০ বছরে সেটা হয়নি। ফলে যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারে আজ্ঞাবহ আইনজীবীদের কমিশনে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারের আজ্ঞাবহ আইনজীবীরা সরকারের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করেন না। ফলে মামলার রায় অনেক ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণ থাকলেও দুদকের বিপক্ষে যায়। সংশ্লিষ্টারা আরও বলছেন, দুদকের ফ্রি হটলাইন নম্বরে অভিযোগ এলে আগে তাৎক্ষণিক রেসপন্স করা হতো। এখন সেটা হয় না। দুদকের দুজন কমিশনারের মধ্যে একজন অনুসন্ধান ও অন্যজন তদন্তের দায়িত্বে। ফলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় জোর দিতে পারছে না সংস্থাটি। আবার তিনজনের দুজন কোনো বিষয়ে একমত হলে অন্যজনের মতামত কোনো ভূমিকা রাখে না। ফলে একই সার্ভিস থেকে দুজন হলে তৃতীয়জন কোণঠাসা হয়ে পড়েন। আবার শীর্ষ তিনটি পদেই নিয়োগ দেওয়া হয় সংস্থাটির বাইরে থেকে। ফলে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ কমিশনারের দুদকের কার্যক্রমের বিষয়ে জানতেই বছর লেগে যায়। তারা নিজেদের গুছিয়ে তৎপর হতেই বিদায় ঘণ্টা বেজে যায়। এমন অবস্থায় দুদকের ভেতর থেকে সৎ, যোগ্য ও সাবেক কর্মকর্তা থেকে কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার দাবি উঠছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে দুদকের গতি বহগুণে বাড়বে। এ ছাড়া দুর্নীতি হওয়ার পর অভিযুক্তদের শাস্তির পরিবর্তে প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ নিয়ে দুর্নীতি হওয়ার পথ রুদ্ধ করতে পারলে তা অধিক কার্যকর হবে। গণশুনানি দুর্নীতি বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে সেদিকে গুরুত্ব কম কমিশনের। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ১৩টি, ২০২২ সালে তিনটি ও ২০২১ সালে একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুদকের আর্থিক বরাদ্দ সরকার থেকে নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার যা দেয়, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। বিটিআরসি, বিআরটিএ, এনআইডি সার্ভার, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, ইন্স্যুরেন্স ডাটাবেজে কমিশন কর্তৃক প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল নিয়োগ দিয়ে বা পদায়ন করে পৃথক সেল গঠন করা হলে দুদকের গতি আরও বাড়বে বলে মত সংস্থাটির কর্মকর্তাদের। এ ছাড়া এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বিকেন্দ্রীকরণ; এনফোর্সমেন্ট টিমকে প্রয়োজনীয় লোকবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া; আবার দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও কখনো কখনো দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে; তাই নিজেদের দুর্নীতি আটকাতে একটি কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গঠনে মত কর্মকর্তাদের। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারে (এনটিএমসি) দুদকের ডেস্ক ও কর্মকর্তা নিয়োগ করা জরুরি বলেও মনে করছেন দুদকের কর্মকর্তারা। যাচাই-বাছাই কমিটি শক্তিশালীকরণ: দুদকে অনুসন্ধানের প্রাথমিক স্তর হলো যাচাই-বাছাই কমিটি বা যাবাক। দুদকে আসা প্রতিদিনের অভিযোগ বাছাই করে অনুসন্ধানের জন্য সুপারিশ করে এই কমিটি। সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে মোট অভিযোগ জমা পড়েছে ১৫ হাজার ৪৩৭টি। এর মধ্যে মাত্র ৮৪৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয় ৯১৩টি অভিযোগ। প্রায় একই হার বিগত ৫ বছরের পরিসংখ্যানেও দেখা যায়। জানা যায়, তিন সদস্যবিশিষ্ট যাবাকের সভাপতি মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং), সদস্য সচিব দৈনিক ও সাম্প্রতিক সেলের পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল। আরও একজন উপপরিচালক কমিটির সদস্য। ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর থেকে প্রেষণে আসা প্রশাসন ক্যাডারের উত্তম কুমার মণ্ডল যাবাকের সদস্য সচিব পদে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দুদকের অভ্যন্তরেও এক ধরনের ক্ষোভ রয়েছে। যাবাকে বসে প্রশাসনের দুর্নীতির অভিযোগ আটকে রাখার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। জানতে চাইলে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘দুদকে অনেক অভিযোগ এলেও দক্ষ ও যোগ্য লোকের অভাবে যাচাই-বাছাই ঠিকঠাক হয় না। যাবাক থেকে গুরুতর অপরাধ যেমন ব্যাংক জালিয়াতি, বড় বড় ক্রয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় না। একেবারে নিচু সারির কর্মচারী যেমন—পিয়ন, কেরানিদের অভিযোগ গ্রহণ করে অনুসন্ধান ও তদন্তকারীদের ব্যস্ত রাখা হয়। অভিযোগ বাছাইকালে সংক্ষিপ্ত পরিদর্শন বা ওপেন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় না।’ দুদকের এই কর্মকর্তা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় দুর্নীতির কারণে দেশের স্বাস্থ্য খাত বেশ আলোচনায় ছিল। মাস্ক কেলেঙ্কারি, কভিড টেস্ট নিয়ে জালিয়াতি, জনবল নিয়োগে কোটি টাকা ঘুষ প্রস্তাব, যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় শত শত কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনায় উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গ্রেপ্তার হয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আবদুল মালেক ও কর্মচারী আবজাল হোসেন।’ দুর্নীতির উৎস বন্ধ না করে ডালপালা ছাঁটে দুদক: দেশে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় উৎস বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প। এ ছাড়া বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস, পুলিশ স্টেশন, ভূমি অফিসসহ সরকারি অতিগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দপ্তর। তবে বিগত দিনে সরকারের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে দুদককে অনুসন্ধান করতে দেখা যায়নি। অতিগুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরগুলোয় অভিযানের সংখ্যাও ছিল সীমিত বা লোক দেখানো। ফাঁদ মামলা হয় না বললেই চলে। অন্যদিকে ব্যক্তির সম্পদ খুঁজতে তৎপর ছিল দুদক। জানতে চাইলে দুদকের একজন পরিচালক কালবেলাকে বলেন, ‘দুর্নীতির উৎসে হানা না দিয়ে ব্যক্তির সম্পদের পেছনে ছুটছে দুদক। কারণ অফিসে বসে বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিলেই সব হাতে চলে আসে। দুদক যখন তখন যে কারও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিচ্ছে, সম্পদ বাজেয়াপ্ত করছে। একজন ব্যবসায়ীর সব টাকাই কিন্তু জ্ঞাত আয়বহির্ভূত নয়। অনেকে উচ্চ ট্যাক্সের কারণে সম্পদ অপ্রদর্শিত রাখেন। এখন আমরা এভাবে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলে তিনি নিজেকে অনিরাপদ বোধ (ইনসিকিউর ফিল) করবেন, সম্পদ ডলারে কনভার্ট করে বাইরে পাচার করে দেবেন। দেশের অর্থনীতিতেও বিনিয়োগ করবে না।’ দুদকের নোটিশ পাত্তা দেয় না সরকারি দপ্তর: ২০২৩ সালে যাবাক থেকে বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতির ব্যবস্থা নেওয়া কিংবা তদন্ত-পূর্বক প্রতিবেদন দিতে ৯১৩টি পত্র দেয় দুদক। একইভাবে ২০২২ সালে ৩ হাজার ১৫২টি, ২০২১ সালে ২ হাজার ৮৮৯টি, ২০২০ সালে ২ হাজার ৪৬৯টি এবং ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৬২৭টি চিঠি দেওয়া হয়েছে দুদক থেকে। দুদকের আইন অনুযায়ী, সংস্থাটির তপশিলভুক্ত অপরাধ অন্য কোনো সংস্থা তদন্ত করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে এই চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া আইনসংগত কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া দুদক সূত্র জানিয়েছে, এসব চিঠির ১০ শতাংশ কোনো কাজে আসে না। সরকারি কোনো দপ্তরই এসবের কোনো জবাব দেয় না। এ বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব চিঠি কোনো কাজে তো আসেই না, বরং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ঊর্ধ্বতনদের চাঁদাবাজির একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়।’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ধরেন একটি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলো। এখন এটিকে যদি ডিসির কাছে পাঠানো হয়, তখন ডিসি ঠিকাদার ও ইউএনওকে ডেকে বিষয়টি মীমাংসার জন্য তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে।’ স্থায়ী প্রসিকিউশন গঠন হয়নি ২০ বছরেও: দুদক আইনের ৩৩ নম্বর ধারায় নিজস্ব স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন কমিশন কর্তৃক তদন্তকৃত এবং স্পেশাল জজ কর্তৃক বিচারযোগ্য মামলাগুলো পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে কমিশনের অধীন উহার নিজস্ব একটি স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট থাকবে।’ ২০০৪ সালে এই আইন হলেও গত ২০ বছরে স্থায়ী প্রসিকিউশন গঠন করতে পারেনি দুদক। আর যেই সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তখন সেই সরকারের আজ্ঞাবহ আইনজীবীদের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকে। পদ থাকলেও জনবলের সংকট, নিয়োগে অনীহা: ২০১৮ সালে দুদকের একটি অর্গানোগ্রাম প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ১ হাজার ২৭৪টি বিদ্যমান পদ থাকা অবস্থায় নতুন করে আরও ১ হাজার ৬৮টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার ১৯৬টি পদ বিলুপ্ত করা হয়। বিলুপ্ত পদ বাদ দিয়ে দুদকে বর্তমানে পদের সংখ্যা ২ হাজার ১৪৬টি। তবে দুদকের ২০২৩ সালে বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সংস্থাটিতে মাত্র ১ হাজার ২২৩ জন কর্মরত রয়েছেন। বাকি পদগুলো শূন্য। এর মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে ৫৭৭ জন কর্মরত আর ৬১৭টি পদ শূন্য। বিভাগীয় কার্যালয়ে ৮৩টি পদে লোকবল থাকলেও শূন্য রয়েছে ৩৭টি। জেলা কার্যালয়ে ৫৬৩ জন লোকবল থাকলেও শূন্য ২২১টি পদ। এ ছাড়া সংস্থাটির কর্মকর্তাদের জন্য কোনো সাপোর্টিং স্টাফ নেই। ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া পদগুলোর সবই ছিল দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির। ফলে একটা ফটোকপি করার প্রয়োজন হলেও সেটি করতে হয় প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের। জানতে চাইলে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘দুদকে দক্ষ, যোগ্য ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কমিশন নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া দুদকের মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে। রায় হতে হতে অনেক সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচারের বাইরে চলে যান। তাই দুই বছরের মধ্যে মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মামলা নিয়ে যেতে হবে। তাহলেই দুদকে গতি ফিরবে।’ এ বিষয়ে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা দুদকের সংস্কার নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রস্তাবনার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দেব।’
২৪ নভেম্বর, ২০২৪
X