গাজার আল শিফা হাসপাতাল যেন এক ধ্বংসস্তূপ
দুই সপ্তাহ ধরে আল শিফা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অভিযান চালানোর পর সেটি ছেড়ে গেছে ইসরায়েলি বাহিনী। কিন্তু চলে যাওয়ার আগে গাজার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটিকে তারা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে রেখে গেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তারা ‘অনেক সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে’ এবং ‘অসংখ্য অস্ত্র ও গোয়েন্দা নথিপত্র’ পেয়েছে। খবর বিবিসির। গতকাল সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী আল শিফা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যায়। এরপর আইডিএফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সৈন্যদল আল শিফা হাসপাতাল এলাকায় সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিচালনা করেছে এবং অভিযান শেষ করে ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে গেছে। গোয়েন্দা তথ্যে আমরা জানতে পেরেছিলাম, আল শিফা হাসপাতালকে হামাস তাদের একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সেখান থেকে হামলা পরিচালনা করছে। যে কারণে আমরা সেখানে অভিযান চালিয়েছি। সৈন্যরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে মুখোমুখি লড়াইয়ে সন্ত্রাসীদের হত্যা করেছে, অসংখ্য অস্ত্র এবং গোয়েন্দা তথ্যের নথিপত্র খুঁজে পেয়েছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস আল শিফা প্রাঙ্গণকে তাদের একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রত্যক্ষদর্শী ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনেক মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, গত দুই সপ্তাহে আল-শিফা হাসপাতালে অন্তত ২১ জন রোগী মারা গেছেন। গাজা যুদ্ধের শুরুর দিকেও একবার আল শিফা হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছিল আইডিএফ। সে সময় তারা বলেছিল, তাদের কাছে খবর রয়েছে যে, ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া জিম্মিদের হাসপাতালটির ভেতরে আটকে রাখা হয়েছে। যে অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস।
০২ এপ্রিল, ২০২৪

রক্তগঙ্গায় পরিণত আল শিফা হাসপাতাল
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার আল শিফা হাসপাতাল রক্তগঙ্গায় পরিণত হয়েছে। আল শিফা হাসপাতালের বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ ছাড়া অবরুদ্ধ গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও শতাধিক মানুষ। এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় ‘টেকসই যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ও জার্মানি। শনিবার দেশ দুটির পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আল শিফা হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাসামগ্রী প্রয়োজন। গত শনিবার হাসপাতালটিতে সামান্য কিছু চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে তারা। কিন্তু সেখানে খাবার ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, গাজার অনেক লোকজনই এখন আল শিফা হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে সেখানকার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই সেখানে প্রচুর রোগী চিকিৎসার জন্য ভিড় করছে। আহত লোকজন মেঝেতে বসে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু তাদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সেখানে নেই। আহত মানুষের রক্তে প্রায় ভেসে যাচ্ছে হাসপাতালের মেঝে। উল্লেখ্য, গাজার সবচেয়ে বড় মেডিকেল কমপ্লেক্স আল শিফা হাসপাতাল। ইসরায়েল-গাজা সংঘাতের শুরু থেকেই এ হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করে। কিন্তু সেখানে হামাসের একটি নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে এমন অভিযোগে হাসপাতালে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ওই হাসপাতালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এদিকে গাজার কামাল আদওয়ান নামে আরেকটি হাসপাতাল বুলডোজার দিয়ে প্রায় সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। এ সময় হাসপাতাল চত্বরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের তাঁবুও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় তারা। জাবালিয়া শিবিরে ২০ ফিলিস্তিনি নিহত : গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও প্রায় ১০০ জন। এর আগেও ওই শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আশপাশের বেশ কিছু বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, জাবালিয়ার একটি মেডিকেল ভবনে হামলার ঘটনায় নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকেই মেঝেতে পড়েছিল। তাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১১টিতে এখন কোনোরকমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ‘টেকসই’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান যুক্তরাজ্য-জার্মানির : ফিলিস্তিনের গাজায় ‘টেকসই যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ও জার্মানি। শনিবার দেশ দুটির পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবক বলেছেন, গাজায় একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি জরুরি প্রয়োজন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের সানডে টাইমস পত্রিকায় একটি যৌথ নিবন্ধে বলেছেন, এ সংঘাতে অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। একটি টেকসই যুদ্ধবিরতির পথ প্রশস্ত করার জন্য যথাসাধ্য কাজ করতে হবে, যা একটি টেকসই শান্তি নিয়ে আসবে। যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই ভালো। প্রয়োজনটা জরুরি। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য এ কথাও লিখেছেন, এখনই দ্রুত একটি সাধারণ যুদ্ধবিরতির আহ্বানে সামনের পথ মসৃণ হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন না। তেমন যুদ্ধবিরতির ডাক ইসরায়েলের আত্মরক্ষার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি উপেক্ষা করে। হামাস বর্বরভাবে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। তারা এখনো প্রতিদিন ইসরায়েলি নাগরিকদের হত্যার জন্য রকেট ছুড়ছে। হামাসকে অবশ্যই তার অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় একটি প্রস্তাব পাস হয়। তবে এ ভোটাভুটিতে অনুপস্থিত ছিল যুক্তরাজ্য। গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েল তার মিত্রদের কাছ থেকেই ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়ছে। হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার জবাবে গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলাকে ‘নির্বিচার’ বলে সমালোচনা করছে ইসরায়েলের প্রধান সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ইসরায়েলের ভাষ্যমতে, এই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছে। প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে হামাস। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় ১৮ হাজার ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
X