ডিসিসিআই সেমিনারে বক্তারা / এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ অপরিহার্য
এলডিসি পরবর্তীতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৈরি পোশাক ছাড়াও রপ্তানির সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতের পণ্য বহুমুখীকরণ অপরিহার্য বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি সহায়ক এক্সচেঞ্জ রেট থাকা দরকার। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। ‘এলডিসি পরবর্তীতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করে ডিসিসিআই। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তীতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগও তৈরি হবে। তবে সেগুলো মোকাবিলার জন্য আমাদের যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। নীতি সহায়তা ও সংস্কার, অর্থায়ন, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি এবং আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জসমূহের মধ্যে অন্যতম। সেলিম রায়হান বলেন, গত ৫ দশকে আমাদের রপ্তানি বাড়লেও রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে, যেখানে আমাদের প্রতিযোগী দেশসমূহের অগ্রগতি অনেক বেশি। মুদ্রানীতি এবং অর্থবিষয়ক নীতিমালার সমন্বয়, সরকারি সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বাড়ানো, খেলাপি ঋণ হ্রাস এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের নির্ভরতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো এলডিসি পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাণিজ্যবিষয়ক লজিস্টিক সেবা দিতে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে, যার উত্তরণ অপরিহার্য, সেই সঙ্গে শিল্পখাতের ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের মুদ্রানীতির কার্যকারিতা তেমন পরিলক্ষিত হয়নি, এমতাবস্থায় পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে আরও সচেতন হওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন। সর্বোপরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে এসইজেডসমূহে সবধরনের সেবা প্রাপ্তি এবং ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ যত সহায়ক হবে রপ্তানি খাতে ততবেশি সাফল্য আসবে। সেই সঙ্গে শুল্ক হার বেশি থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যাহত হয়, তাই সহায়ক রাজস্ব নীতিমালার কোনো বিকল্প নেই। রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য স্বল্প সুদে অর্থয়ান এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে একটি সহায়ক বিনিময় হার নির্ধারণ করার ওপর জোরারোপ করেন। তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তীতে প্রস্তুতির জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সময়ে নেই, সরকার নীতি সহায়তা দিচ্ছে, তবে বেসরকারিখাত সামনের দিনগুলেতে একটি টেকসই দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে। অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ পরিচালক ও উর্মি গার্মেন্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ এবং সোনালি আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী অংশগ্রহণ করেন। বিজিএমইএ পরিচালক ও উর্মি গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই পোশাক খাতের প্রণোদনা প্রত্যাহার করা হলো। যদি এ খাতের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, এমতাবস্থায় তিনি এ খাতের প্রণোদনা সুবিধা ২০২৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি সহায়ক এক্সচেঞ্জ রেট থাকা দরকার বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। সোনালি আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, তৈরি পোশাক ছাড়া পাট, চামড়া ও চা প্রভৃতি পণ্যে রপ্তানি তেমন উল্লেখজনক নয়, কারণ হলো নীতি সহায়তা ও সক্ষমতার অপ্রতুলতা। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো কীভাবে তাদের রপ্তানিকারকদের সহায়তা দিচ্ছে তা অনুসরণ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বৈদেশিক মুদ্রার একক বিনিময় হার নির্ধারণের ওপর জোরারোপ করে তিনি বলেন, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস করতে না পারলে আমাদের উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারাবে। দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আশ্বাস বাড়ালে দেশি-বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়া ও পাদুকা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট ও পাটপণ্যের মতো শিল্পগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তীতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এফএমসিজি, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা-প্রকৌশল, হালাল পণ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রপ্তানি বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে। সম্ভাবনাময় খাতসমূহের বিকাশে ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্স, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড এবং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন প্রভৃতি হতে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে আরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা জ্বালানিসহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, বেকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহকে ‘হাই এন্ডেড’ খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং পণ্য প্রসারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্য মেলার আয়োজনের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও আমাদের কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজতকরণ শিল্পটিকে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার শিল্পে রূপান্তরিত করা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

এলডিসি থেকে উত্তরণে পিছু হটবে না সরকার
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ মানেই বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় হওয়া। এই উত্তরণে লক্ষ্য থেকে সরকারের পিছু হটার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, এজন্য এখন থেকেই আমাদের নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা ধরে রাখতে সম্মিলিত প্রস্তুতিও প্রয়োজন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন: বাংলাদেশের ভাগ্যে কী থাকছে?’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টারগ্রাশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সচিব শরিফা খান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তাফা আবিদ খান, প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্ল্যানিং এডিটর আসজাদুল কিবরিয়া, র‌্যপিডের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর এম আবু ইউসুফসহ সংশ্লিষ্টরা। র‌্যাপিড আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে এফসিডিও। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের আলোচনায় এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে সুবিধা আদায় এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়শীল দেশের সুবিধায় বাংলাদেশকে নজর দিতে হবে বলে এ সময় জানিয়েছেন অন্য আলোচকরা। মশিউর রহমান বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন যে কোনো দেশের জন্য নতুন ধারণা। অনেকেই এটিকে অভিহিত করছেন ত্রিমাত্রিক অবস্থা হিসেবে। আমরা একপর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে যাব। এখন মাঝামাঝি অবস্থায় আছি। আমাদের বর্তমান অবস্থান থেকে পেছনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সামনের দিকেই এগোতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরিতে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এরই মধ্যে আমরা অনেকটা সময় হারিয়ে ফেলেছি। সেই ঘাটতি পূরণে এই প্রস্তুতিটা খুব জরুরি। এজন্য সময় নিলে পিছিয়ে পড়তে হবে। তাই বিশ্ববাণিজ্যে সামনে এগিয়ে যেতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও অন্যান্য সুবিধা কমলেও সে ক্ষেত্রে ভ্যালু অ্যাডিশন বাড়াতে হবে। শরিফা খান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী তিন বছর বাণিজ্য সুবিধা বহাল রাখবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও যুক্তরাজ্য। তবে ২০২৯ সাল থেকে এই সুবিধা আর থাকবে না। এজন্য এখনই ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় জোরালো অবস্থান রাখতে প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যে জিএসপি প্লাসের মতো বাণিজ্য সুবিধা নেওয়া যাবে। এ ছাড়া ট্রিপস সুবিধা থাকবে না, এর জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশকে তিনটি স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে হবে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এলডিসির কাতারের সুবিধা পাওয়া, পরের তিন বছর এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে সুবিধা পাওয়া এবং ভবিষ্যতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রস্তুতি নেওয়া। এখন মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় খেয়াল রাখতে হবে উন্নয়নশীল দেশের জন্য কী কী সুবিধা আসছে। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের পর ট্রিপস সুবিধা থাকবে না। ফলে ২০ শতাংশ ওষুধের প্যাটেন্ট দিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এতে দাম বেড়ে যাবে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তাফা আবিদ খান বলেন, ফিশারিজ সাবসিডির ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। ইলিশ বেশিরভাগ নদীতে উৎপাদন হচ্ছে এটি দেখানো উচিত। এতে সমুদ্রে মৎস্য খাতের ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকবে না। মৎস্য খাতে দশমিক ৮ শতাংশ ভর্তুকি আছে। ইলিশযুক্ত হলে ১ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কৃষি ও মৎস্য খাতে ভর্তুকি নিয়ে চাপ থাকবে, বিশেষ করে সমুদ্রে মৎস্য আহরণে। তবে কৃষি পণ্যের মূল্যের ১০ শতাংশ দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২ শতাংশের কম দিচ্ছে। ডব্লিউটিওর ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন আগামী ২৬ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত হবে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কয়েক দফা স্থগিত থাকা দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন ২০২২ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় হয়েছিল। বর্তমানে ১৬৪ দেশ ডব্লিউটিওর সদস্য। এই সংস্থার এলডিসি গ্রুপের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে থাকায় এবারের সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রী পর্যায়ের এ সম্মেলনের চেয়ার হিসেবে থাকবেন ইউএইর বিদেশি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ডক্টর থানি বিন আহমেদ আল জাইউদি। এ সম্মেলনে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার কর্মক্ষমতা পর্যালোচনার সঙ্গে ডব্লিউটিওর ভবিষ্যৎ কাজের বিষয়ের সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া ১৪তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। এসব বিবেচনায় এবারের সম্মেলনকে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্ব দেবে।
০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

এলডিসি থেকে উত্তরণে পিছু হটবে না সরকার
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ মানেই বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় হওয়া। এই উত্তরণে লক্ষ্য থেকে সরকারের পিছু হটার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, এজন্য এখন থেকেই আমাদের নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা ধরে রাখতে সম্মিলিত প্রস্তুতিও প্রয়োজন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন: বাংলাদেশের ভাগ্যে কী থাকছে?’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টারগ্রাশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সচিব শরিফা খান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তাফা আবিদ খান, প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্ল্যানিং এডিটর আসজাদুল কিবরিয়া, র‌্যপিডের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর এম আবু ইউসুফসহ সংশ্লিষ্টরা। র‌্যাপিড আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে এফসিডিও। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের আলোচনায় এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে সুবিধা আদায় এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়শীল দেশের সুবিধায় বাংলাদেশকে নজর দিতে হবে বলে এ সময় জানিয়েছেন অন্য আলোচকরা। মশিউর রহমান বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন যে কোনো দেশের জন্য নতুন ধারণা। অনেকেই এটিকে অভিহিত করছেন ত্রিমাত্রিক অবস্থা হিসেবে। আমরা একপর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে যাব। এখন মাঝামাঝি অবস্থায় আছি। আমাদের বর্তমান অবস্থান থেকে পেছনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সামনের দিকেই এগোতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরিতে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এরই মধ্যে আমরা অনেকটা সময় হারিয়ে ফেলেছি। সেই ঘাটতি পূরণে এই প্রস্তুতিটা খুব জরুরি। এজন্য সময় নিলে পিছিয়ে পড়তে হবে। তাই বিশ্ববাণিজ্যে সামনে এগিয়ে যেতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও অন্যান্য সুবিধা কমলেও সে ক্ষেত্রে ভ্যালু অ্যাডিশন বাড়াতে হবে। শরিফা খান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী তিন বছর বাণিজ্য সুবিধা বহাল রাখবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও যুক্তরাজ্য। তবে ২০২৯ সাল থেকে এই সুবিধা আর থাকবে না। এজন্য এখনই ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় জোরালো অবস্থান রাখতে প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যে জিএসপি প্লাসের মতো বাণিজ্য সুবিধা নেওয়া যাবে। এ ছাড়া ট্রিপস সুবিধা থাকবে না, এর জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশকে তিনটি স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে হবে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এলডিসির কাতারের সুবিধা পাওয়া, পরের তিন বছর এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে সুবিধা পাওয়া এবং ভবিষ্যতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রস্তুতি নেওয়া। এখন মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় খেয়াল রাখতে হবে উন্নয়নশীল দেশের জন্য কী কী সুবিধা আসছে। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের পর ট্রিপস সুবিধা থাকবে না। ফলে ২০ শতাংশ ওষুধের প্যাটেন্ট দিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এতে দাম বেড়ে যাবে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তাফা আবিদ খান বলেন, ফিশারিজ সাবসিডির ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। ইলিশ বেশিরভাগ নদীতে উৎপাদন হচ্ছে এটি দেখানো উচিত। এতে সমুদ্রে মৎস্য খাতের ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকবে না। মৎস্য খাতে দশমিক ৮ শতাংশ ভর্তুকি আছে। ইলিশযুক্ত হলে ১ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কৃষি ও মৎস্য খাতে ভর্তুকি নিয়ে চাপ থাকবে, বিশেষ করে সমুদ্রে মৎস্য আহরণে। তবে কৃষি পণ্যের মূল্যের ১০ শতাংশ দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২ শতাংশের কম দিচ্ছে। ডব্লিউটিওর ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন আগামী ২৬ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত হবে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কয়েক দফা স্থগিত থাকা দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন ২০২২ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় হয়েছিল। বর্তমানে ১৬৪ দেশ ডব্লিউটিওর সদস্য। এই সংস্থার এলডিসি গ্রুপের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে থাকায় এবারের সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মন্ত্রী পর্যায়ের এ সম্মেলনের চেয়ার হিসেবে থাকবেন ইউএইর বিদেশি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ডক্টর থানি বিন আহমেদ আল জাইউদি। এ সম্মেলনে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার কর্মক্ষমতা পর্যালোচনার সঙ্গে ডব্লিউটিওর ভবিষ্যৎ কাজের বিষয়ের সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া ১৪তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। এসব বিবেচনায় এবারের সম্মেলনকে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্ব দেবে।
০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও চীনের কাছে শুল্কমুক্ত সুবিধা চান বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও পণ্য রপ্তানিতে ডিউটি-ফ্রি-কোটা-ফ্রি সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য চীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সাথে মন্ত্রণালয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর অফিস কক্ষে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসলে এসব কথা জানান তিনি।   পাটজাত পণ্য আমদানির পাশাপাশি পাটশিল্প এবং চামড়া শিল্প খাতে বিনিয়োগের জন্য চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও এ সময় জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে ২০২৬ সালে উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কৌশল নির্ধারণে কাজ করছে। বিভিন্ন দেশ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট-পিটিএ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য চীন সরকারের প্রতি আহ্বানে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, চীন বাংলাদেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী। এই চুক্তি সম্পাদিত হলে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে।   আহসানুল ইসলাম বলেন, দেশের পাট ও চামড়া উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় একটি খাত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুই খাতের উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পাট ও চামড়া শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।   বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে ঈদুল আজহার দিন এক কোটির বেশি পশুর চামড়া ছাড়াও সারাবছর প্রচুর পশুর চামড়া সংগৃহীত হয়। যথেষ্ট লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় এগুলো দ্রুত প্রসেসিং করা সম্ভব হয় না। ফলে নষ্ট হয়ে যায়। চামড়া খাতকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকার চামড়াজাত শিল্পের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে তিনি চামড়া শিল্পের উন্নয়নে চীন সরকারকে বাংলাদেশকে লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদানসহ এ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতি করে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পাটজাত পণ্যকে ২০২৩ সালের ‘বর্ষ পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পাট ঐতিহ্যগতভাবেই দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। পাট থেকে তৈরি সব পণ পরিবেশবান্ধব ও ব্যবহার উপযোগী।  তিনি বলেন, চীনে বাংলাদেশি আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা ছাড়াও মানসম্মত তাজা খাবার, চিংড়ি, কাঁকড়া এবং ঈল মাছের চাহিদা থাকায় এসব পণ্য আরও বেশি রপ্তানি করার জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়া অন্যান্য কৃষি পণ্য এবং ফার্মাসিউটিক্যালস রপ্তানিরও আহ্বান জানান। আহসানুল ইসলাম জানান, করোনা মহাসংকট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পৃথিবীর সকল দেশ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটা সফল বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সাক্ষাৎকালে চীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করে পাট শিল্পে অফুরন্ত সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ থেকে পাট পণ্য আমদানি এবং এ খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।  
১৭ জানুয়ারি, ২০২৪

এলডিসি উত্তরণে ৬ বছরের বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী তিন বছরের পরিবর্তে ৬ বছরের জন্য বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে পরবর্তী ধাপে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস বাণিজ্য সুবিধা প্রদানেরও অনুরোধ জানান তিনি। আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সফরের প্রথম দিন ইউরোপীয় কমিশনের বাণিজ্য কমিশনার ভালদিস ডোমব্রোভস্কিসের সঙ্গে বৈঠক হয়। তিনি ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের ৫০ বছরের অংশীদারিত্বের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। আগামীতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অবরোধ ও পাল্টা অবরোধের কারণে অর্থনৈতিক অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশসহ অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশ। এসব দেশকে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী তিন বছরের পরিবর্তে ৬ বছরের জন্য বাণিজ্য সুবিধা ২০৩২ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছি। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশ নিতে গত ২৪ অক্টোবর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বেলজিয়ামে যান প্রধানমন্ত্রী। গত ২৫ ও ২৬ অক্টোবর ওই ফোরামে যোগ দেন তিনি। ফোরামের ফাঁকে ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্র ও লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেলের সঙ্গেও বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। সফরকালে ২৫ অক্টোবর ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার ভালদিস ডোমব্রোভস্কিসের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এসব বৈঠকের পর বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৩৫ কোটি ইউরোর একটি ঋণ সহায়তা, সাড়ে ৪ কোটি ইউরোর একটি অনুদান এবং একই খাতে বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপীয় কমিশনের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ ইউরোর অনুদান চুক্তি সই হয়। এ ছাড়া সামাজিক খাতের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপীয় কমিশনের মধ্যে ৭ কোটি ইউরোর আরও পাঁচটি অনুদান চুক্তি হয়। ২৬ অক্টোবর বেলজিয়ামে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেন তিনি। দুদিনের সফর শেষে ২৭ অক্টোবর দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
৩১ অক্টোবর, ২০২৩

এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ইইউকে জিএসপি সুবিধা দেওয়ার আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা করতে জিএসপি প্লাস (+) সুবিধা দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২৫ অক্টোবর) ব্রাসেলসে ইইউ’র সদরদপ্তরে বেশ কয়েকটি চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি। খবর বাসসের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি যে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আমাদের উন্নয়নে সহায়তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে জিএসপি+ সুবিধা দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউরোপীয় কমিশনের চেয়ারম্যান উরসুলা ভন ডার লেয়েন ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে বুধবার (২৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (ইআইবি) মধ্যে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো অর্থায়ন চুক্তিসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। শেখ হাসিনা বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ যুদ্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে চায়। তিনি বাংলাদেশে সাময়িকভাবে আশ্রিত ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য ইইউকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনই এই সংকটের একমাত্র সমাধান। আমি দ্রুত এই সংকটের একটি টেকসই সমাধানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে ইইউর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
২৫ অক্টোবর, ২০২৩
X